শীতে উঞ্চতা পেতে চাদর বা শাল গায় দিতে দেখেছি পরিবারের মুরব্বিদের। শাল মুড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ধোয়া উড়া চায়ের চুমুকের দৃশ্য ভেসে উঠে এখনো। উঞ্চতা পেতে আর স্টাইল যোগ করতে বর্তমানে প্রায় সব বয়সীরা গায়ে জড়ায় শাল।
মধ্যপ্রাচ্য আর আরভারতীয় উপমহাদেশে শীত বস্ত্র হিসেবে চাদর বা শাল বেশ পরিচিত। একটা সময় মোটা আর বিদেশি শালের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে দেশি শালে যোগ হয়েছে নতুম নতুন স্টাইল। চলতি বছরে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) তে দেশি শালের ওয়েভ তুলেছেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ।
দেশি শালের মধ্যে তাঁত, খেশ, বাটিক, মনিপুর, খাদি, বম, লতাপাতা শাল সহ বহুরকমের শাল ওয়েভের ফলে দেখা মিলছে অনলাইনে।
চট্টগ্রাম বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন টেকজুম কে বলেন, “আমি সবসময় শপিংমলে গিয়ে শীতের কেনাকাটা করি। কিছুদিন আগে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপে পোস্ট দেখে ‘চিত্রাঙ্গদা’ পেজে নক দিয়ে শাল ও পাঞ্জাবি অর্ডার করেছি। বিদেশি শালের তুলনায় কম দাম, আরামদায়ক ও গুণগত মানসম্পন্ন ছিল। তিনি আরও বলেন, এবছর খেশ, বাটিক সহ অনলাইনে দশটার বেশি দেশি শাল ক্রয় করেছি। দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ব্যবহার, পণ্য ও সেবায় আমি মুগ্ধ।”
ইফ্ফাত শারমিন বাস করেন গাজীপুরে। অনলাইনে দেশি শাল কেনার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ছবি দেখে খেশ শাল কেনার ইচ্ছা হয়েছিলো। খেশ শাল একটু ভারি তাই শীত ভালোভাবেই আটকায়। বেশী মোটা না হওয়ায় অস্থির লাগে না। গায়ে মুড়ি দিতে বেশ আরাম। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এ শীতে আট টি দেশি শাল ক্রয় করেছেন অনলাইনে।”
অনলাইনে দেশি পণ্যের প্রচার ও বিক্রি বাড়াতে উদ্যোক্তারা নিজের পণ্যের ইতিহাস, উৎপাদন, গুণাগুণ গল্প আকারে উপস্থাপন করে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নতুন নতুন ফিউশন যোগ করেছেন উদ্যোক্তারা। কয়েকজন ই-কমার্স উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে দেশি শালে ফিউশন যোগ করায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। শালের দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় এবং অতিরিক্ত সুবিধা (ডেলিভারি চার্জ ফ্রি) থাকায় আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে।
সিলেট থেকে দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করেন নাছির আহমদ। তার উদ্যোগের নাম তিয়ামো। শীত মৌসুমে শাল বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নভেম্বর মাসে উই গ্রুপে শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমদ স্যার পোস্ট দিয়ে বলেন ‘বাঘ না থাকলে সহজেই দেশি শালের ওয়েব তুলা যেতো।’ এই পোস্ট দেখে মনিপুরী শাল সংগ্রহ শুরু করেছিলাম। তারপর ২ দিনে ২০ টি শালের অর্ডার হয়েছে শুনে স্যার এ নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় আমার ১০০ টা শাল বিক্রি হয় অল্প সময়ে। এবছর ১৬০ টির বেশি দেশি শাল বিক্রি করেছি।”
আবায়া স্টোরির সত্ত্বাধিকারী সিরাজুম মুনিরা জানায়, “দেশি শালের ওয়েভে রাজিব আহমেদ ভাইয়ার পরামর্শে আবায়া স্টোরিতে শাল নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ব্যবহারে আরামদায়ক ও কালারফুল উপস্থাপনার জন্য ভিসকস কটনের উপরে স্ক্রিনপ্রিন্টের শাল গুলো ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম ছিল। প্রতিটি ক্রেতাই শাল ব্যবহারের পর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ফেসবুক পোস্টে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের পণ্য নিয়ে কাজ করেন এসএস হ্যান্ডিক্র্যাফটসের স্বত্বাধিকারী শিরীন সুলতানা অরুনা। শাল বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ মৌসুমে শাল বিক্রি হবে না ভেবে হতাশ হয়েছিল তাঁতীরা। ফেসবুকে রাজীব স্যারের দেশী শালের ওয়েভের কারনে মৌসুমের শুরুতে তাঁতিদের স্টক খালি হয়ে যায় এবং নতুন শাল তৈরী নিয়ে ব্যস্ত ছিল পুরো সৃজন। প্রতি বছর শীতের আগে এমন ওয়েভ হলে ঘুরে দাঁড়াবে তাঁতীদের অর্থনীতি। তিনি আরও বলেন, এবছর বম শাল, লতাপাতা শাল দুইশোর বেশি বিক্রি হয়েছে এবং আশাকরি আগামী সৃজনে হাজারের অধিক দেশি শাল বিক্রি হবে।”
রাজিব আহমেদ আশা প্রকাশ করে বলেন, অনলাইনে দেশি শাল জনপ্রিয় হবার মৌসুম ছিল এটি। আমি আশা করি আগামী মৌসুমে কম করে হলেও ২-৩ লাখ শাল বিক্রি হবে অনলাইনে।