আমি নারী আমি উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমি নারী আমি পারি ভালোবেসে বিশ্বকে জয় করতে। আজকে ৮মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সকল নারীকে জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
“নারী” একটা শব্দ হলেও এরমাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো আবেগ,ভালোবাসা সম্পর্কের বাঁধন।কখনো নারী মা, কখনো মেয়ে,কখনো অর্ধাঙ্গী।আবার কখনো বা বোন।এই পৃথিবীতে অনেক সম্পর্ককে মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে যে সে হলো নারী। বিশ্বের সকল নারীদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান ও তাদের কাজের প্রসংশা করেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উৎসব পালন করা হয়।
নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মূলত নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সফলতার উপর ভিত্তি করেই।বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৮ই মার্চ মাত্র একটা দিন নারীদের জন্য স্পেশাল ভাবে পালন করা হয়, শুনতে অবাক লাগলেও এইটাই সত্যি।
১৯১১ সাল থেকে নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।এমন ভাবে প্রতিবছর নারী দিবস পালিত হতে থাকলে ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ।
এরপর থেকেই প্রতিবছর নারীকে সম্মান জানিয়ে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
নারী যেমন ঘরণী তেমনি তার সন্তানের শিক্ষক। একজন নারী তার সন্তানকে জন্ম দেওয়ার পর থেকে তার সন্তানের প্রথম শিক্ষক। মায়ের কাছেই তার সন্তান প্রথম শব্দ শিখে, ভাষা শিখে, কথা বলতে শিখে।মায়ের কাছেই তার মেয়ে শিখে তুমি নারী, তুমি অনন্যা, তুমি নারী তুমি বিশ্বজয়ী, তুমি নারী তুমি অহংকার।চেষ্টা করলে তুমিও পারো তোমার নিজস্বতা প্রমাণ করতে।
বর্তমান সময়ে নারীরা আরো কয়েকধাপ এগিয়ে গেছে। এখন শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে পর্যন্ত নারীদের অংশগ্রহণই বলে দেয় সুযোগ পেলে তারাও পারে অনেক ভালো কিছু করতে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন -বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
এই পৃথিবীর ভালো কিছু বা মহান কাজের সবকিছুই শুধু পুরুষের দ্বারা সম্ভব হয়নি বরং তার অর্ধেক কাজের অবদাম নারীর। নারী ও পুরুষের সমান তালে অবদান রাখার ফলেই বর্তমান পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে ওঠেছে।
বর্তমান সময়ে নারীরা প্রতিটা কাজে এগিয়ে গেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে, চাকরীর ক্ষেত্রে,নারী উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটা সেক্টরে নারীরা অনেক বেশী এগিয়ে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সফলতার ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য।
নারীর ক্ষমতায়ন বলতে নারীর আত্মনির্ভরশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বোঝায়। একটা নারীর অর্থনৈতিক উন্নতির তখনি সম্ভব যখন নারীরা বিভিন্ন ভাবে কাজে সম্পৃক্ত হয়। একটা সময় নারীরা গৃহিণী ও সরকারি চাকরিজীবী নারী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে চাইলেও এখন তার ভিন্ন রূপ দেখা যায়। নারীরা এখন আর ঘরে বসে থাকে না, তারা কাজ করতে ভালোবাসে, নিজের জন্য নিজে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে। নিজেকে সমাজ ও দেশের জন্য মানব সম্পদে পরিনত করতে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করতে ভালোবাসে।
বর্তমানে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক নারীরা ঘর সংসার,বাচ্চা সামলেও নিজের একটি বিজনেস প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে পারছে। স্বামীর পাশাপাশি অনেক নারীরা সংসারের হাল ধরতে পারছে। নারীরা ই-কমার্সকে বা এফ-কমার্সকে কাজে লাগিয়ে শুধু নিজের আত্মকর্মসংস্থান নয় বরং তার পাশাপাশি অনেক মানুষের জীবন জীবিকার সুব্যবস্থা করতে পারছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীরা বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে।
সামাজিক কর্মকন্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, নারীরা আগের মতো আর পিছিয়ে নেই। সামাজিক উন্নয়ন ও বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে নারীরা। সমাজের বিভিন্ন বাঁধা ও কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে নিজেরা যেমন এগিয়ে যেতে দূঢ় প্রতিজ্ঞ তেমনি অন্যদেরও পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে অনেক নারীরা।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নারীরা পিছিয়ে নয়, বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পর্যায় থেকে একদম মাঠ পর্যায়ে পর্যন্ত নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে।
নারী দিবস নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিন।নারীদের সম্মানে এই দিবস পালন করা হলেও মূলত প্রতিটা দিনই নারীদের সম্মান করা যায়। কারন নারী মা,নারী স্ত্রী ও নারী কণ্যা।
নারী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো নারীদের কাজের সম্মাননা দেওয়া।নারীরা যে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করছে এবং অর্থনৈতিক উন্নতিতে অবদান রাখছে এই জন্যই তাদের সম্মানে নারী দিবস পালিত হয়।
বর্তমানে করোনা কালীন সময়ে নারীরা ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছে এবং নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছে। একলা হাতে সংসার চালানোর মতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেক নারীরা হয়ে ওঠেছে অনন্যা।
নারীরা হারতে জানে না, জানে সঠিক সময়ে কিভাবে নিজের প্রতিভাকে তোলে ধরতে হয়। রান্নাঘর থেকে শুরু করে ক্রিকেট খেলার মাঠে পর্যন্ত নারীরা বিজয়ী হয়।চেষ্টা, ইচ্ছা ও পরিশ্রম একটা নারীকে তার সর্বোচ্চ যোগ্যতার আসনে পৌঁছে দিতে পারে।
নারীদের চলার পথে পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনেক ধরনের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা আসে, তাদের চলার পথ কখনোই একদম মসৃন হয় না। তারপরও নারীরা পিছিয়ে নেই। তাদের চলার পথ তারা নিজেরাই তৈরি করে নেয়।
তাই তো বলা যায়, নারী তুমি অনন্যা, নারী তুমি বিজয়ী, নারী তুমি অহংকার। তুমি কোমলমতি। নারী তোমার অবদান এ জগৎ সংসারে অনস্বীকার্য।
পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রইলো। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।