অচিরেই ৫০০ কোটি টাকা স্টার্ট-আপ তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে স্বল্প সুদে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও অগ্রগতির জন্য স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। কোনও শর্ত ছাড়াই সরকারি ব্যাংকগুলো এই তহবিল থেকে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারবে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য এই তহবিলের অর্থ পেতে হলে পাঁচটি শর্ত মানতে হবে। এ ব্যাপারে সোমবার (১৯ এপ্রিল )বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে।
শর্তগুলো হলো
দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, যেসব বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ, সেই সেই ব্যাংক স্টার্ট-আপ তহবিলের টাকা নিতে পারবে। তবে ব্যাংকগুলোকে কমপক্ষে এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া যে ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হারে মূলধন পর্যাপ্ততা আছে, নগদ সংরক্ষণের হার সিআরআর এবং বিধিবদ্ধ তরল সম্পদ সংরক্ষণের হার (এসএলআর) সংরক্ষণ করবে, এর বাইরে একক গ্রাহক প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা সংক্রান্ত আইন বা নীতিমালা অনুসরণ করবে, এছাড়া যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সম্পর্কিত বিধিবিধানের পরিপালন নিশ্চিত করবে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক কোটি টাকা নেওয়া যাবে
গ্রাহক সম্পূর্ণ জামানতবিহীন সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন এ তহবিল থেকে। ঋণ পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদে। ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যেকোনো উদ্যোক্তা এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবেন। ঋণখেলাপি কোনও উদ্যোক্তা ঋণ পাবেন না। প্রকল্পের অগ্রগতি বিবেচনা করে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে তিন কিস্তিতে অর্থ বিতরণ করা হবে। প্রতিটি ব্যাংককে এ তহবিলের ঋণের ন্যূনতম ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাকে দিতে হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় ঋণ দিতে পারবে। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ব্যাংকের নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ’ তহবিলের স্থিতি থেকে আগে ঋণ বিতরণ করতে হবে। নিজস্ব তহবিল শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে। ব্যাংকগুলো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে অর্থায়ন নিয়ে এ তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করবে। পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফা থেকে ১ শতাংশ অর্থ নিয়ে নিজস্ব স্টার্ট-আপ তহবিল করতে হবে।
ঋণ পেতে যেসব অভিজ্ঞতা লাগবে
আবেদনকারী নতুন উদ্যোক্তাকে সরকারি কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালনা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে অথবা অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে (পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, যন্ত্রপাতি মেরামত ইত্যাদি) সাফল্যজনকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা না থাকলে উদ্যোক্তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও নতুন উদ্যোগ পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে। একই গ্রাহক একাধিক প্রকল্প বা একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ বা বিনিয়োগ প্রাপ্তির জন্য যোগ্য হবেন না।
জামানত
বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণের সনদকে জামানত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বলতে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহীত ঋণের আদায় সুরক্ষার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও ব্যক্তির অঙ্গীকারনামাকে বোঝাবে। তবে দুজনের অধিক ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না। ডিগ্রিধারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণের মূল সনদ জামানত হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।
স্টার্ট-আপ তহবিলের মেয়াদ ৫ বছর
স্টার্ট-আপ তহবিলের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। প্রয়োজনে আরও বৃদ্ধি করা হবে। সব তফসিলি ব্যাংক এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে।