অনলাইনে কোনো পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করলে শহর এলাকায় সর্বোচ্চ ৫ দিন ও গ্রামে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং ক্রেতাকে টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।
ডিজিটাল বাণিজ্যে এসব শর্তের কথা উল্লেখ করে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল। রোববার (৪ জুলাই) এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রেতাকে তা ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময় সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে। কোনো একটি ক্রয়াদেশ (purchase order)-এ একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা পণ্যের জন্য সাধারণত আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরােপ করা যাবে না। তবে মার্কেটপ্লেসে পণ্যে আলাদা আলাদা ডেলিভারি প্রদান করা হলে আলাদা আলাদা চার্জ গ্রহণ করা যাবে, এক্ষেত্রে ক্রেতাকে ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার সময় বা ইনভয়েস- এ পূর্বেই অবহিত করতে হবে।
পণ্য বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসে প্রদর্শিত পণ্যের মান ও সঠিকতা মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিক্রেতা বা মার্চেন্ট এর সঙ্গে ভিন্নতর চুক্তি থাকলে সে মােতাবেক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। সময়মত ডেলিভারি প্রদান এবং মালামালের সুরক্ষার জন্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানবা ডেলিভারি পারসন এর সঙ্গে প্রয়ােজনীয় চুক্তি সম্পাদন করবে।
এক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয়ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে। পণ্য সরবরাহের সময় মুদ্রিত বিল প্রদান করতে হবে যাতে প্রদেয় বা প্রদত্ত ভ্যাট ও আয়কর (যদি থাকে) উল্লেখ থাকতে হবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে, তার জন্য ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পিরিয়ড ও সেবাপ্রাপ্তির স্থান ও যােগাযােগের বিস্তারিত ঠিকানাসহ অন্যান্য শর্ত সম্বলিত কার্ড বা ডিজিটাল কার্ডপণ্যের সাথে সরবরাহ করতে হবে।
পচনশীল দ্রব্য দ্রুততম ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডেলিভারির সময় যাতে পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়।
‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ অনুযায়ী ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য যে মাধ্যমেই পণ্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করবেন ক্রেতা, বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। যে মাধ্যমে টাকা নেয়া হয়েছে, সে মাধ্যমেই ফেরত দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না। ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম, যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, সে ধরনের কিছু করা যাবে না।
টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো চার্জ (মাশুল) লাগলে তা মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়টি ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা।
পণ্য বা সেবা কেনাবেচা, ফেরত ও পরিবর্তনের শর্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বা মার্কেটপ্লেসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্য বা সেবা বিক্রি বা প্রসারের জন্য কোনো ধরনের লটারি বা লটারি জাতীয় কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারবে কোনো প্রতিষ্ঠান। কোন পণ্যের স্টক কত, তা-ও জানাতে হবে গ্রাহকদের।
মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা সেবার যথাযথ বিবরণ, মূল্য, পণ্য পৌঁছানোসহ অন্যান্য খরচের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের কথাও জানাতে হবে। কোনো নকল বা ভেজাল পণ্য প্রদর্শন করা যাবে না। বহুস্তর বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) পদ্ধতিতে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না।
চিকিৎসা বা ওষুধসামগ্রী কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদফরের লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো ধরনের নেশাজাতীয় পণ্য বিক্রি করা যাবে না এবং জুয়ার আয়োজনও করা যাবে না।
পণ্য স্টক করার জন্য নিজস্ব গুদামঘর থাকতে হবে। অন্য বিক্রেতার পণ্য নিজেদের ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করলে কী পরিমাণ পণ্য বিক্রির জন্য আছে, তার ওপর নির্ভর করেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নিতে হবে। কোনো তৃতীয় পক্ষের পণ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকতে হবে।