লেখাপড়া রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এইচএসসি শেষ করার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর। তারপর ২০১১ সালে ঢাকা ব্যাংকে চাকরি। মাঝখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ। ঢাকা ব্যাংকে ৬ বছর থাকার পর ছেড়েছেন চাকরি। এর মধ্যে টুকটাক ব্যবসা করার কাজে মনোযোগ থেকে বিগ অনলাইন শপিং মল ইভ্যালির উদ্যোক্তা। বলছিলাম ডায়াপার ব্যবসা থেকে যাত্রা করে বড় স্বপ্ন পূরণের পথে হেঁটে চলা মোহাম্মদ রাসেলের কথা।
প্রথম বিজনেসটা শুরু হয় ডায়াপার বিজনেস দিয়ে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে শুরু। ২০১৬ থেকে মূলত আমার ব্যবসাটা শুরু হয়। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে ধারণা আসে বড় একটি প্লাটফর্মের কথা। সেখান থেকে ইভ্যালির যাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই আমি উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পড়ালেখা শেষ করেই তার সাহস পাচ্ছিলাম না। এজন্য আমার দরকার ছিল বিজনেস প্ল্যান, বিজনেস সাপোর্ট, ট্রেডিং, ইমপোর্ট, এক্সপোর্ট, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, ব্যান্ডিং ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞতা।
সে কারণে ঢাকা ব্যাংকে ৬ বছর চাকরিতে ছিলাম। ব্যাংক থেকেই আমি সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। মূলত উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থেকে কয়েক বছর চাকরি করেছি। সেখানে আমার স্থায়ী হওয়ার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। তাই চাকরি ছেড়ে দিই। অনেক ব্যবসা আছে। যেগুলোর কোনও একটি ধরে করতে পারতাম। কিন্তু আমি বড় কিছু করার চিন্তা থেকে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠা করেছি। যার উদ্দেশ্যটাও অনেক বড়। ইভ্যালি কোনও বিশেষ পণ্যের বাজার না।
এখানে সব ধরনের পণ্য পাবেন গ্রাহকরা। তাছাড়া আমি এখনও মনে করি- বৈশ্বিকভাবে অনলাইন কেনাকাটার ধারণা এখনও নতুন। আমেরিকাতে এর জনপ্রিয়তা এখনও ৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশে তো ১ শতাংশ হয়েছে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসাকে বৈশ্বিক রূপ দিতে পারলে বা এ খাতের ব্যবসায় কিছু সমস্যা দূর করতে পারলে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত এই সম্ভাবনা থেকেই ইভ্যালির যাত্রা করেছি।
আসলে রহস্য বলতে গেলে উদ্দেশ্যের কথাই আসে। আমরা চাচ্ছিলাম এশিয়া ভিত্তিক বা গ্লোবালি চিন্তা থেকে নামটা হোক। যেটা হবে একেবারেই ইউনিক। আমার সহধর্মিনী এক্ষেত্রে আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। যেমন আমাদের প্লানের মধ্যে আরও কয়েকটি ছিল ই-গ্যালাক্সি, ই-ওশেন, ই-স্কাই। মূলত ভ্যালি বা একটা জায়গা থেকে ইভ্যালি নাম। গত কয়েক বছরে ই-কমার্সের গ্রোথ যে খুব বেশি সন্তোষজনক, তা নয়। তবে বিশ্বাস করি, এ খাতে বিশ্বে শীর্ষ ১১ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে। এ দেশের জন্য ই-কমার্স খুব সম্ভাবনাময়ী।
দেখুন, বিশ্বে ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা, অ্যামাজন, ই-বে সবাই ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসায়িক মডেল অনুসরণ করে চলে। ইভ্যালিতে এই তিন কোম্পানির বিজনেস মডেল দাঁড় করানো হয়েছে। এখানে ছোটোখাটো জিনিস থেকে সব ধরনের জিনিসই গ্রাহকরা পাবেন। তারা যতদ্রুত সম্ভব আমাদের চ্যানেলের মাধ্যমে সঠিক পণ্যের ডেলিভারি পাবেন। তাছাড়া ইভ্যালি কানেক্ট নামে আমাদের একটা অপশন আছে; যার মাধ্যমে গ্রাহকরা ফেসবুকে চ্যাট করার মতো সেলারদের সঙ্গে পণ্য নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন। যাতে গ্রাহকের আস্থা আরও বাড়বে।
আমাদের ব্যবসাটা মূলত রিটেইলার ভিত্তিক আবার কাস্টমার ভিত্তিক। রিটেইলাররা এই প্ল্যাটফর্মে তাদের অনলাইন স্টোর খুলে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। গ্রাহকরা সাধারণত যে সাইট থেকে পণ্য কিনে থাকে। সাধারণত সেই সাইটের সঙ্গেই যোগাযোগ করে থাকেন। আমাদের প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকরা চাইলে সেলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই পণ্য কিনতে পারবেন। অর্থাৎ তারা এখানে দোকানগুলোর খোঁজও পাবেন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কেউ যদি বেঙ্গলের পণ্য বা লিনেক্সের স্মার্টফোন কিনতে চান, তবে ওই কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবেন আবার ইভ্যালির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে ইভ্যালিতে নিবন্ধনকৃত হতে হবে। বড় স্বপ্ন, বড় লক্ষ্য নিয়ে বিজয়ের মাসেই ইভ্যালির যাত্রা হয়েছে। বিশ্বাস করি, ইভ্যালির বিজয় নিশ্চিত। আগামী কয়েক বছরে ইভ্যালিকে অ্যামাজন, আলিবাবার কাতারে নিয়ে যেতে চাই। আমি মনে করি, সেটা সম্ভব। আমাদের কোম্পানি এক সময় বিশ্বের শীর্ষ ১০ ই-কমার্স কোম্পানির মধ্যে থাকবে।
হ্যাঁ, এটা সত্য। অনেকেই, বলতে গেলে প্রতিদিনই এই খাতটিতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা, ব্র্যান্ডিং, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে ব্যবসা শুরুর কিছুদিন পরই ঝরে যাচ্ছেন। তাদের জন্য আমি বলবো হতাশ হবেন না। আপনারা ব্যবসা শুরু করে যেখানে থেমে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই শুরু করুন। ইভ্যালি আপনাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মে আপনাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা অন্তর্ভূক্ত করে আবার চাঙ্গা করুন। দেখবেন একদিন সফল হবেন।