বেশ কিছু ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ই-কমার্স খাতে নানা অসংগতি উন্মোচিত হয়েছে। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণেও চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ই-কমার্স খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। সেই সঙ্গে অসাধু উদ্যোক্তাদেরও যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।
দেশে গত বছর ই-কমার্স খাতে প্রায় ২০০ কোটি ডলার বা ১৭ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। চলতি বছরে সেটি বেড়ে ২৫০ কোটি ডলার বা ২১ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন তথ্য দিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ই-কমার্স দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে খাতটিতে যে হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তাতে ডিজিটাল ব্যবসায় ক্ষতির শঙ্কাও রয়েছে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ই-কমার্স খাত দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে বেশি লাভের আশায় মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাতে অনেক সময় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে সরকার সহায়ক নীতিমালা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে।
আইনজীবী তানজিব উল আলম বলেন, কার্যকর ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ভোক্তাদের আস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতা খুবই দরকারি। এ খাতের জন্য ভৌত অবকাঠামো তৈরিতে সরকার উন্নয়ন বাজেট থেকে বরাদ্দ দিতে পারে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী উদ্যোক্তাদের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, কর ও শুল্ক, ব্যাংক ব্যবস্থাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত কর্মপদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এনামুল হক বলেন, বেশি মাত্রায় নীতিমালা আরোপ করলে ব্যবসায় পরিচালনার ব্যয় বাড়বে। তাতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
দারাজ বাংলাদেশের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা খন্দকার তাসফিন আলম বলেন, ই-কমার্স খাতে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিচিতির জন্য স্বল্পসময়ের মূল্যছাড়ের বিভিন্ন প্যাকেজ দিচ্ছে। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ভালো কিছু নয়। অতিমাত্রায় মূল্যছাড় দেওয়ার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে খাতটিতে স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ই-কমার্স খাতে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ভূমিকা থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিজিটাল কমার্স সেলের কার্যক্রম দ্রুত শক্তিশালী করার পাশাপাশি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
ইস্টার্ন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশেদ আনোয়ার বলেন, বেশির ভাগ স্টার্টআপসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকে না। সে কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তাদের অর্থায়ন করতে যায়, তখন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। এ জন্য উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সংগঠনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।