বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার বাসার সামনে অবস্থা নিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইঅরেঞ্জের গ্রাহকরা। সেখানে তারা স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন। সোমবার সন্ধায় তারা অবস্থান নেন। এ সময় সড়কে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইঅরেঞ্জের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকের দাবি এই ক্রিকেটারের কথা শুনে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পণ্য কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন তারা।
ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সামনে আজ বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা বিক্ষোভ করছেন। সন্ধায় তারা বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাংসদ মাশরাফির বাসার সামনে অবস্থা নিয়ে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। তারা বলছেন, আমাদের টাকা আমাদের টাকা দিতে হবে দিতে হবে, মাশরাফি চুপ কেন, জবাব চাই জবাব চাই। ইঅরেঞ্জের দুর্নীতি মানি না মানবো না।
আরো পড়ুন: আস্থা ফেরাতে বিনিয়োগের কথা বলেছে ধামাকাশপিং
বিক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ- তিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থাকায় তারা আস্থা রেখে ই-অরেঞ্জে টাকা দিয়েছেন।
মাশরাফিকে উদ্দেশ্য করে মুস্তাকিম মিরাজ নামের একজন গ্রাহক লিখেছেন, আপনার প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থা আছে। বাংলাদেশে ইঅরেঞ্জ নামক ই-কমার্স আছে অনেকেই জানতাম না। শুধু আপনাকে অ্যাম্বাসেডর দেখে আমরা আস্থার সঙ্গে ইঅরেঞ্জ থেকে বিভিন্ন মডেলের হাজার হাজার যুবক বাইকের অর্ডার করি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে গত মে মাস থেকে এই পর্যন্ত সকল অর্ডারকৃত বাইকের ডেলিভারি বন্ধ রেখেছে শুধু লকডাউনের অজুহাতে। যেখানে অন্য ই-কমার্স তাদের ডেলিভারি নিয়মিত রেখেছে। এখন ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ডেলিভারির জন্য লম্বা সময় চাচ্ছে। এটি দুঃখজনক। এই অবস্থায় আমরা আপনার সদয় সহযোগিতা কামনা করছি।
তবে ইঅরেঞ্জ ফেসবুকে জানিয়েছে, মাশরাফির সঙ্গে এখন কোনও সম্পর্ক নেই তাদের।
তারা ফেসবুকে লিখেছে, ‘ইঅরেঞ্জ.সপ এর সকল সম্মানিত গ্রাহকদের জানানো যাচ্ছে যে, ইঅরেঞ্জ.সপ এর সাথে পহেলা জুলাই, ২০২১ হতে জনাব মাশরাফি বিন মুর্তজার সাথে চুক্তি শেষ হয়েছে। তাই আমাদের অফিসিয়াল কোন বিষয়ে তিনি কোনোভাবেই অবগত নয় এবং তিনি অফিসিয়াল ভাবে কোন কিছুই আপডেট দিতে পারবেন না। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের কাছে যারা পন্য অর্ডার করেছেন, কিন্তু এখনো পন্য হাতে পাননি।’
দ্রুত পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে, ‘আশা করি আমরা দ্রুত এই সমস্যা গুলোর সমাধান খুঁজে বের করবো এবং আপনাদের পণ্য আপনাদের বুঝিয়ে দিতে পারবো। আর যেহেতু জনাব মাশরাফি বিন মুর্তজা আমাদের সাথে আর চুক্তিবদ্ধ নেই, সেহেতু সবার কাছে অনুরোধ রইল এই বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ না করার জন্য।’
এর আগেও লোভনীয় আর চটকদার মোড়কের আড়ালে এমএলএম এর ফাঁদ পাতা প্রতিষ্ঠান ‘এসপিসি গ্রুপ’ এর সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন নড়াইলের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এপ্রিল মাসে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অতিথি করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এসপিসি গ্রুপ’ নামক ঐ প্রতিষ্ঠানের লোগো উন্মোচন করা হয়। এরপর থেকেই মাশরাফিকে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড এম্বাসেডর’ দাবি করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের ক্রিকেটপ্রেমি মানুষের আবেগের মানুষটি যখন স্বয়ং এমন প্রতিষ্ঠানে তখন অনেকেই সন্দেহ বাদ দিয়ে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন এসপিসি’তে। সঙ্গে লোভনীয় অফার ও আয়ের সুযোগ তো থাকছেই।
বিক্ষুব্ধ জনতা মাশরাফির বাড়ির সামনেও জড়ো হলে তাদের সঙ্গে দেখা করেন । এরপর ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেন মাশরাফি। তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ।
তিনি বলেছেন, ‘ই-অরেঞ্জের সঙ্গে আমার ছয় মাসের চুক্তি ছিল। সেটা শেষ হয়েছে। আমি এখন এটির সঙ্গে নেই। তবুও একজন গ্রাহক যেখান থেকে বলছে, তাদের পাশেই আমাকে থাকতে হবে। এটার তো আইনগত জায়গায় খুব বেশি কিছু করার নেই। তবুও সাধারণ মানুষের কারণে কথা বলেছি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তাদের পাশে দাঁড়াবো।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘দুপুর থেকে আমি চেষ্টা করছি। মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি আমাকে বলেছে উনাদের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। ১৯ তারিখ থেকে ডেলেভারি দেওয়া শুরু করবে। এরপর তো আর বেশি কিছু বলার থাকে না।’
এর পরে (১ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ ভেরিফায়েড পেইজ থেকে এসপিসি’র সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। তিনি সবাইকে অনুরোধ করব, আমার নাম বা ছবি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে না জড়াতে”।
সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুলাই মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমান মালিক বিথী আক্তার। কিন্তু বর্তমান ও সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শোনা যাচ্ছে সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিন মালিকানা পরিবর্তন করে বিদেশে চলে গেছেন। তবে গ্রাহকরা এর কিছুই জানেনা। জানা যায়, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অরেঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি অন্যতম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ অনলাইন শপ। এটি ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা শহরে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যসেবা দিয়ে আসছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ থেকে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা সিটিতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে এবং এর কয়েকদিন পরই সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, তখন অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের অপারেশন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মালিক পক্ষের কাউকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে অফিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের মালিকানা পরিবর্তন করছে। ই-অরেঞ্জের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বীথি আক্তার নামে একজনকে কোম্পানিটির নতুন মালিক ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানটির আগের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন দেশ ছেড়েছেন। ই-অরেঞ্জের এক প্রাক্তন কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনকারী গ্রাহকরা জানতে পারেন, গত মাস থেকে বেতন আটকে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।