ধামাকা ডটকম নামে একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে পণ্য সরবরাহ করে বিপদে পড়েছেন প্রায় সাড়ে ৬০০ ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহকারীদের ১০ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধের কথা দিলেও ছয় মাসেও টাকা দেয়নি। এ অবস্থায় পাওনা ২০০ কোটি টাকা আদায়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা। তারা পাওনা আদায়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে চিঠি দিয়েছেন। ধামাকা শপিং ডটকম সেলার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনও করেছেন তারা।
চিঠিতে তারা বলেছেন, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চুক্তি করে ধামাকা ডটকমকে পণ্য সরবরাহ করছেন তারা। চুক্তিতে পণ্য সরবরাহের ১০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা রয়েছে। কিন্তু ধামাকা কর্তৃপক্ষ চুক্তির শর্ত কখনোই মানেনি। গত মার্চ থেকে সরবরাহ করা পণ্যের মূল্য এখনও পাননি। বারবার পাওনার জন্য ধামাকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা সময় নিচ্ছে বা এড়িয়ে যাচ্ছে।
গত ১৩ জুলাই ধামাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিমউদ্দিন চিশতি ভার্চুয়াল সভা করেন সরবরাহকারীদের সঙ্গে। সভায় তিনি কোরবানির ঈদের আগেই পাওনা টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। এরপর ২১ জুলাই ফেসবুক লাইভে এসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হঠাৎ করেই তাদের বিভিন্ন অসহায়ত্বের কথা জানান। একই সঙ্গে সরবরাহকারীদের পাওনার ১০ শতাংশ আগস্ট মাসের মধ্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সরবরাহকারীরা চিঠিতে বলেছেন, তারা মনে করেন ধামাকার চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তাসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা পণ্য সরবরাহকারী ও ক্রেতাদের পাওনা পরিশোধ না করে টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন। ধামাকা ডটকম মাইক্রোট্রেড গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। অল্প দিনের মধ্যেই এই গ্রুপ মাইক্রোট্রেড আইসিএক্স, মাইক্রোট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম, পেটেল লিমিটেড, বাডি লিমিটেড নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলেছে।
সরবরাহকারীরা তাদের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ধামাকা লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোজতবা আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিমউদ্দিন চিশতি, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ধামাকা ডটকমের সরবরাহকারীদের অভিযোগ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ধামাকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ডাকা হবে।
ধামাকাশপিং এর বিনিয়োগের পাওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপ। যার মধ্যমে প্রতিষ্ঠাটি ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে। ধামাকায় বিনিয়োগ বিষয় এখন কোন প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি, তবে গ্রাহকদের আস্থা রাখার জন্য আমরা এই ধরনের প্রচারনা করছি ।
সিআইডি বলছে, প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিগগিরই মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে। এদিকে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠার পরপরই ধামাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দীন চিশতি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। ‘মহামারির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না’ বলে সিআইডিকে জানিয়েছে ধামাকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ধামাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য বিক্রির নামে যে অগ্রিম টাকা আদায় করত সেটি রাখা হতো ‘ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম’ এর নামে খোলা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেই অ্যাকাউন্টে গত ৮ মাসে ৫৮৮ কোটি টাকা লেনদেন করা হলেও বর্তমানে সেটির ব্যালেন্স মাত্র ৯৩ হাজার টাকা।