ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার গেজেট জারি করেছে সরকার। ডিজিটাল প্লাটফর্মে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় এ নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে সবাইকে। গত ৪ জুলাই সরকার এ নির্দেশিকা জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেসের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অনান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারী তার তালিকাভুক্ত বিক্রেতার বিক্রয়কৃত পণ্যের দাম বুঝে পাওয়ার সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে প্রযোজ্য কমিশন ও ডেলিভারি চার্জ কেটে রেখে সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত বিক্রেতাকে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তবে মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারী ও বিক্রেতা বা মার্চেন্টের মধ্যে ভিন্নতর কোনো চুক্তি থাকলে সে অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা যাবে।
চুক্তির বিষয়ে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্য বিক্রেতা বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে এবং বিজ্ঞপ্তিতে কী পরিমাণ পণ্য স্টকে রয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে এবং প্রতিটি বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত পণ্যের স্টক হালনাগাদ করতে হবে। বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্য বিক্রেতা বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্পষ্টভাবে ‘স্টকে নেই’ বা ‘Stock out’ কথাটি স্পষ্টভাবে পণ্যের পাশে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ‘রেডি টু শিপ’ অবস্থা ব্যতিরেকে কোনো ধরনের পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভিতরে ‘রেডি টু শিপ’ (মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে বা মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধিত থার্ড পার্টি বিক্রেতার নিয়ন্ত্রণে) পর্যায়ে থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মূল্য গ্রহণের পরবর্তীতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পারসন বা প্রতিষ্ঠানের হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় নেই- এমন পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের শতকরা দশ ভাগের বেশি অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে একশ ভাগ পর্যন্ত অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে।
পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরবর্তীতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বা পণ্যসামগ্রী ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতে হবে এবং ক্রেতাকে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে ডেলিভারি সংস্থা বা মার্কেটপ্লেস ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ডেলিভারির সময়ের বিষয়ে এতে আরও বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তীতে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ দশ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি প্রদান করতে হবে।
পণ্য ডেলিভারিতে ব্যর্থতার বিষয়ে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ক্রেতা কোনো মাধ্যমে (ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, অন্যান্য) অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে সেই পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ সাত দিনের (সংশ্লিষ্ট অর্থ প্রদানকারীমাধ্যমের ব্যবহৃত সময় ব্যতিত) মধ্যে ক্রেতার পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ যে মাধ্যমে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করেছেন সেই একই মাধ্যমে (ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি) ফেরত প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো চার্জ থাকলে মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে তা বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়ে ক্রেতাকে ইমেইল, এসএমএস, ফোন বা অন্য মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্রেতার পরিশোধিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেসের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অনান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
এ নির্দেশিকা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্রেতা বা কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টআদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।