ইভ্যালির মার্চেন্ট ও ভোক্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়। এই পরিচালনা কমিটি ইভ্যালির গাড়ি বিক্রি না করে ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করতে পারত। ইভ্যালির মোহাম্মদ রাসেলকে ছাড়া মার্চেন্ট ও ভোক্তাদের সংখ্যা জানা, ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইভ্যালির মার্চেন্ট ও ভোক্তারা। ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজ্যুমার কো-অর্ডিনেশন কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় তাঁরা শর্ত সাপেক্ষে ও মার্চেন্টদের জিম্মায় ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের মুক্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজ্যুমার কো-অর্ডিনেশন কমিটির সহসমন্বয়ক সাকিব হাসান বলেন, ব্যবসার পরিধি বড় হলে কিছু অভিযোগ বা সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে। এ সংকট মোকাবিলা ব্যর্থ হলে পরিবারসহ পথে বসতে হবে ইভ্যালির মার্চেন্টদের। আলোচনার মাধ্যমে ইভ্যালির সংকট নিরসন করে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ইভ্যালির প্রায় ৭৪ লাখ গ্রাহক ও ৩৫ হাজারের বেশি বিক্রেতা ও অসংখ্য স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। কিছু গ্রাহক ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ইভ্যালির সঙ্গে লেনদেন করে বেশির ভাগ ভোক্তা বা মার্চেন্ট অসন্তুষ্ট ছিলেন না। একটা অপশক্তি ইভ্যালিকে বন্ধ করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সাকিব হাসান বলেন, ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ছাড়া কেউই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে মার্চেন্টদের বকেয়া দিতে পারবে না।
প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল ও তাঁর স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তাঁরা দুজন এখনো কারাগারে।
হাইকোর্টের নির্দেশে গত ১৮ অক্টোবর ইভ্যালির পরিচালনার দায়িত্ব নেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ। ওই পর্ষদ গত তিন মাসে ৯টি বোর্ড সভার পাশাপাশি ইভ্যালির অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারে নানামুখী কার্যক্রম নিয়েছে। পর্ষদ এ পর্যন্ত সিটি ও সাউথইস্ট ব্যাংকে থাকা ইভ্যালির ২টি অ্যাকাউন্ট এবং ২৪টি গাড়ি ও ৯টি গুদামের সন্ধান পেয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ে দুটি লকার খোলা হয়। সেখানে পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই, ফাইলপত্র ও ২ হাজার ৫৩০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজ্যুমার কো-অর্ডিনেশন কমিটির সমন্বয়ক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতাকে মুক্তি দেওয়া হলে প্রথমেই আমাদের বকেয়া পরিশোধ করার দরকার নেই।
আগে ব্যবসাটা চালিয়ে নেওয়া হোক। লিখিত আকারে আমাদের দাবি ইভ্যালির নতুন কমিটিকে জানানো হয়েছে। তবে তারা আমাদের কথা শুনছে না, মতামত নিচ্ছে না।’
মো. নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘ইভ্যালির বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর একেক সময়ে একেক বক্তব্যের কারণে আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি। তিনি একবার বলেছেন, ইভ্যালির কাছে আমাজন ১০০ কোটি টাকা পায়, একবার ৬ কোটি, একবার ৩ কোটি টাকা। আসলে আমাজন কত টাকা ইভ্যালির কাছে পায়, এটা রাসেল ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালির প্রায় অর্ধশতাধিক মার্চেন্ট ও ভোক্তা উপস্থিত ছিলেন।