আমাদের দেশি শাড়ির পর্যাপ্ত প্রচারের জন্য এখনো অনেক পদক্ষেপ নেয়া বাকি আমাদের। ধীরে ধীরে অনলাইন বা ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশি শাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও, তা যথেষ্ট নয়। কারণ এখনো এমন একটা সমৃদ্ধ অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরী হয় নি, যেখান থেকে ক্রেতা, বিক্রেতা বা ভবিষ্যৎ কোনো উদ্যোক্তা আমাদের দেশীয় তাঁতে তৈরী শত রকমের শাড়ি সম্পর্কিত সব তথ্য ডিটেইলস ভাবে জানতে পারবে। মানুষ এখন অনেকাংশে ইন্টারনেট নির্ভর। যে কোনো তথ্যের জন্য বা ফ্যাশন সচেতন মানুষজন নিত্যনতুন ফ্যাশন আপডেটের জন্য সবার আগে গুগলেই সার্চ করে। তাই দেশীয় শাড়ির প্রচার এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকেই সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে।
শুধু দেশি শাড়ি সম্পর্কিত তথ্যই নয়, শাড়ি নিয়ে বিভিন্ন নিউজ, আর্টিকেল, ফ্যাশন, ক্রেতা –বিক্রেতাদের গল্প ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে যা মানুষের মাঝে দেশীয় শাড়িগুলোকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারে, ভালোবাসার একটা জায়গা তৈরী করতে পারে। ওয়েব পোর্টাল বলতে সাধারণত আমরা বুঝি, এমন একটি ওয়েবসাইট যেখান থেকে মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পারবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। দেশি শাড়ি নিয়ে অনেক ধরণের ওয়েব পোর্টাল হতে পারে।
যেমনঃ শুধু শাড়ির ফ্যাশন কেন্দ্রিক ওয়েব পোর্টাল হতে পারে, যেখানে দেশীয় শাড়ির বিভিন্ন পরিধানশৈলী, নিত্যনতুন স্টাইল, সাজগোজ ইত্যাদি রিপ্রেজেন্ট করা হবে। অথবা দেশীয় সব শাড়ি নিয়ে পরিপূর্ণ একটা ওয়েব পোর্টাল হবে, যেখানে শাড়ি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, নিউজ, উদ্যোক্তাদের গল্প, ক্রেতাদের গল্প, শাড়ির ফ্যাশন, বিশেষত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আকর্ষনীয় কন্টেন্ট আর্টিকেল থাকবে।
ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে দেশীয় শাড়ি নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তাদের প্রত্যেককে নিয়ে নিয়মিত আপডেট দেয়া, তাদের কাজ সম্পর্কে সবাইকে জানানো, তাদের ইন্টারভিউ নেয়া ইত্যাদি করা গেলে এই উদ্যোক্তাদের যেমন পরিচিতি বাড়বে, তাদের বিজনেসের ব্র্যান্ডিং হবে, পাশাপাশি যে শাড়িগুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন সেগুলোর বেশ ভালো মিডিয়া কভারেজ হয়ে যাবে।
দেশীয় শাড়িগুলোতে বর্তমানে অনেক ফিউশন আসছে, উদ্যোক্তারা নিজস্ব ডিজাইনের শাড়ি তৈরী করছেন। এগুলোকে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেও ওয়েব পোর্টাল দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যেমনঃ কাকলি তালুকদার নতুন ডিজাইনের জামদানী তৈরী করছেন। এটা নিয়ে যখন নিউজ বা ইন্টারভিউ আকারে জামদানী তৈরীর আগে থেকেই ওয়েব পোর্টালে আপডেট দেয়া হবে কোনো নির্দিষ্ট উৎসবকে কেন্দ্র করে, তখন সেটা অনেক দ্রুত মিডিয়া কভারেজ পাবে, অনেক মানুষের কাছে এটি পৌঁছে যাওয়ার ফলে, সেই শাড়ির প্রতি সবার বিশেষ আগ্রহ তৈরী হবে।
শুরুটা ছোট করেই হতে পারে। হয়ত ১০-২০ জন উদ্যোক্তা মিলে একটা ওয়েবসাইট করলেন যেখানে বিক্রির থেকেও বেশি ফোকাস করবেন প্রচারের দিকে আর শাড়ির ছবির দিকে। আমাদের দেশে মোট কত ধরনের শাড়ি তৈরি হয় তা আমরা জানি না। সবার আগে এই তথ্য নিয়ে কাজ করা দরকার। কারো কারো মতে ১০০ রকম শাড়ি উৎপাদিত হয় এবং এর মধ্যে টাঙ্গাইল জেলাতেই ৫০ রকম শাড়ি তৈরি করে তাঁতিরা।
ফেইসবুক কমার্স বা এফ-কমার্সের মধ্যে দেশি শাড়ি নিয়ে কাজ করেন এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক হাজার এবং তারা সারাদেশের ৬৪ জেলাতেই আছেন। তাদের জন্য তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ইন্টারনেট এসেছে ১৯৯৬ সালে। মানে ২৬ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা দেশি শাড়ি নিয়ে ভাল মানের একটি ওয়েবপোর্টাল এখনো করতে পারিনি।
দেশি শাড়ির বিক্রি বাড়াতে হলে এ বিষয়ে তথ্য অনেক বেশি দিতে হবে। আমরা প্রায় সবাই ধরে নেই যে মেয়েরা শাড়ি চেনে এবং কেনে। এটি আসলে ঠিক নয় কারন বেশির ভাগ মেয়ে ১০ টার বেশি শাড়ির নাম জানে না বা সে সম্পর্কে অবগত নয়। দেশি পণ্যের ই-কমার্স নিয়ে যে ঢেউ অনলাইনে বিশেষ করে ফেইসবুকে শুরু হয় ২০২০ সালে তার ফলে এখন অনেক শাড়ির নাম উঠে এসেছে এবং বিক্রিও হচ্ছে।
ওয়েবসাইট আর ইউটিউবের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে দেশি শাড়ির বিশাল বাজার তৈরি করা সম্ভব দেশে এবং বিদেশে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা আর নেপালে শাড়ি জনপ্রিয়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং আমেরিকাতে দক্ষিন এশিয়ার অন্তত ১ কোটি বা তার ও বেশি লোকের বাস। এই বিশাল বাজারকে আকৃষ্ট করার একমাত্র উপায় হল ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইট। ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে দেশি শাড়ি নিয়ে ওয়েব পোর্টাল তৈরীর মাধ্যমে।
লেখকঃ রাজীব আহমেদ, সাবেক এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং খাতুনে জান্নাত আশা – পিয়াসী।