বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ করা যাবে না— এমন বিধান রেখে ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে আইনটির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করেছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তবে খসড়া এই আইনটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএসএবি)।
সংগঠনটি বলছে, খসড়া তৈরির সময় তাদের মতামত নেওয়া হয়নি। আইনটির প্রায় প্রতিটি ধারায় আপত্তি রয়েছে তাদের। আইনটির বেশকিছু ধারা অগণতান্ত্রিক বলেও মনে করছে তারা। দেশের ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু সংগঠনও আইনটির খসড়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ করা যাবে না— এমন বিধানের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএসএবি)’র তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১৫৩টি কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুরিয়ার ৭৮টি ও লাইসেন্সবিহীন ৭৫টি। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। বর্তমানে অনলাইন কেনাবেচায় ই-কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কুরিয়ার সার্ভিস আইন হলেও নতুন এই আইনে ই-কুরিয়ারের বিষয়টি অন্তভুর্ক্ত হয়নি।
খসড়া আইনে যা রয়েছে
আইনে বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই কর্তৃপক্ষের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন, যিনি যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার হবেন। প্রতিষ্ঠানটি মেইলিং অপারেট ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি দেবে। গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং অধিকারও সংরক্ষণ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ দ্রব্য, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি পরিবহন করতে পারবে না। কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করলে ন্যূনতম ৫০হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। সেবার মূল্য তালিকা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ সকল শাখা কার্যালয়ে সহজে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এছাড়া নির্ধারিত মূল্যের অধিক দাম রাখলে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
এই আইনের অধীনে লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো পার্সেল বা প্যাকেটের ভেতর কোনো ধরনের নগদ অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহন করা যাবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এই শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে ন্যূনতম ৫০হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। নির্ধারিত সময়ে সরকারের অনুকূলে প্রাপ্য সার্ভিস চার্জ জমা না দিলে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব এক মাস কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এছাড়া সার্ভিস চার্জ ফাঁকি দিলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান যদি বুকিংকালে বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ করে সেক্ষত্রে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা অনূর্ধ্ব দুই মাসের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।