সস্তায় বিকাচ্ছে মোবাইল ফোন; পণ্যের তালিকায় আরও আছে ল্যাপটপ আর মোটরসাইকেল। আর সবই ‘মিলবে’ অস্বাভাবিক কম দামে!
বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবির নাম ও লোগো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক পেইজ খুলে চলছে এই অফার। উভয় প্ল্যাটফর্মেই কেবল ডিজিটাল আর্থিক সেবা নগদের একটি পার্সোনাল নম্বরে মূল্য পরিশোধ করা যাবে বলে উল্লেখ রয়েছে। সঙ্গে আছে আগে মূল্য পাঠিয়ে দেওয়ার পরের দিন ডিভাইস পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে আলোচনা শুরু হয়েছে এই প্রচারণা নিয়ে। বিশেষ এই ফেইসবুক পেইজ এবং ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে ব্যবহারকারীরা পোস্ট দিয়ে বন্ধুতালিকার মানুষদের সতর্ক করলেও, অফার পোস্টের কমেন্ট সেকশন ইঙ্গিত করছে– কম খরচে দামি ডিভাইস পাওয়ার আশায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই।
কিন্তু মোবাইল নির্ভর লেনদেন সেবার মাধ্যমে মূল্য পাঠিয়ে দিলেই কি মিলবে পণ্য?
বিষয়টি কী আসলে?
প্রায় অর্ধেক দামে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা মোটরসাইকেলের অফারে আগ্রহী হন অনেকেই। কিন্তু কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য এ অফার?
“একেবারেই না, এরা একটি প্রতারক চক্র।” – বললেন মোবাইল অপরেটর কোম্পানি রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বললেন তিনি।
আলোচ্য ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখা ফোন নম্বরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কীভাবে চেনা যাবে এই ধরনের ফাঁদ?
কেবল বিশেষ কোনো মোবাইল অপরেটরের পরিচয় চুরি করেই যে এমন প্রতারণা চলছে এমন নয়। বিষয়টি কেবল বাংলাদেশেরও নয়, গোটা বিশ্বেই চলছে এমন লোক ঠকানোর ব্যবসা।
আর্থিক সেবাদাতা বাজাজ ফিনসার্ভ বেশ কয়েকটি বিষয় বাতলে দিয়েছে এমন ধোঁকাবাজ সাইটের ব্যাপারে। আসুন নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক, কী বলছে তারা-
০১. খেয়াল রাখুন কোম্পানির নামের বানানে
অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সুপরিচিত কোম্পানির নামের বানান সামান্য এদিকসেদিক করে ওয়েবসাইট খুলে বসে প্রতারক চক্র। আলোচ্য ফেইসবুক পেইজের বেলায় মূল বানান Robi বদলে হয়েছে Rabi।
সাহেদ আলম বললেন, রবি শপের মূল সাইটের ঠিকানা robishop.com.bd। আর অফারে দেওয়া সাইটের নাম robishop.cam। মিলিয়ে দেখুন ডটকম হয়ে গেছে ডটক্যাম।
০২. কর্পোরেট ওয়েবসাইটের আবশ্যকীয় উপাদান
যে কোনো পেশাদারী অনলাইন মার্কেটপ্লেসে থাকবে রিটার্ন পলিসি, প্রাইভেসি পলিসি, কুকি পলিসি, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস-এর মতো কিছু বিষয়। যেহেতু প্রতারণার জন্য তৈরি ওয়েবসাইট সাধারণত তাড়াহুরা করে তৈরি হয়, ফলে এই ধরনের পেইজ সাইটগুলোয় থাকে না। আর থাকলেও দায়সারাভাবে তৈরি সাইটগুলোয় ব্যকরণগত ভুল, মুদ্রণ প্রমাদও থাকে অহরহ।
০৩. মূল্য পরিশোধ করতে বলবে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে টাকা পাঠানোর চ্যানেল কখনোই কোনো পেশাদারী অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করবে না। নগদ, বিকাশ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, যেখানেই মূল্য পরিশোধ করতে হোক না কেন, সেটি কখনোই ‘পার্সোনাল’ অ্যাকাউন্ট হবে না।
০৪. যাচাইকৃত সাইট ও পেইজ
পেশাদারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার অ্যাকাউন্ট অবশ্যই ‘ভেরিফায়েড’ হবে। আর ওয়েবসাইটে থাকবে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সেবার প্রতীক। এই লক্ষণগুলো না থাকা মানেই হচ্ছে সম্ভাব্য গ্রাহকের জন্য সতর্কতামূলক চিহ্ন।
০৫. কল্পনাতীত লাভের প্রলোভন
ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “টু গুড টু বি ট্রু”। মানে হচ্ছে, এতো ভালো যে সত্যি হতে পারে না। ফেইক বা ভুয়া সাইটগুলো সাধারণত অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখায়। ফলে, কোনো অফারে অস্বাভাবিক কম দামে কোনো পণ্য বা সেবা অফার করলেই সতর্ক হোন।