মানুষের ব্যস্ততা আর স্বাস্থ্য সচেতনতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হোম মেইড ফুডের চাহিদা। তাই অনলাইনে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হোম মেইড ফুডের চাহিদা। আমি এই ব্যস্ত ও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের একজন। নিজের এবং পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিয়মিত অর্ডার করি হোম মেইড ফুড।
অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই হোম মেইড ফুড অর্ডার করা যায়। নিজেদের পছন্দ অপছন্দ, মসলা বাড়ানো কমানোসহ সবকিছু বলে দেওয়া যায়। তাই এগুলোও নিজের ঘরের মতো মজার হয়। এর জন্য উদ্যোক্তাকে একটু আন্তরিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি হোম মেইড ফুডের উদ্যোক্তারা আমাদের এই চাহিদাগুলো জানার জন্য উদগ্রীব থাকে। যেটা অন্য কোথাও খাবার অর্ডার করে পাওয়া যায় না। হোম মেইড উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ক্রেতার চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণ করে। যা একজন ক্রেতা হিসেবে সবসময় আমাকে সন্তুষ্ট করে। এসব কারণে যেকোন পরিস্থিতিতে আমার আস্থার জায়গা দখল করেছে হোম মেইড ফুড।
আমার অনলাইনে কেনাকাটা শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। গত ৮ বছরে নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। অপ্রত্যাশিত কিছু অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়ার গল্পেই অনেক বেশি। নিজের ও পারিবারিক চাহিদা পূরণে জন্য পোশাক, গয়না সহ নানা রকম পণ্য কেনাকাটার অভিজ্ঞতা থাকলেও হোম মেইড ফুড কেনাটাকার অভিজ্ঞতা সাম্প্রতিক। তা বছর দুই হতে পারে। এই স্বল্প সময়ে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করেছি খাবারদাবার। মেহমান আসলেও আমি হোম মেইড খাবারে ভরসা করি। কারণ আমার বাসায় মেহমান আসেন আমাদের সাথে কোয়ালিটি সময় ব্যয় করার জন্য। এই সময়টা যদি আমি রান্না ঘরেই কাটিয়ে দিই তাহলে তারা পর্যাপ্ত সময় পাবে না কথা বলার জন্য। তাই অনলাইন থেকে খাবার চলে আসে সময় মতো এবং আমরাও গল্প করি নিজেদের মতো।
যখন থেকে অনলাইনে আমার দেশি পণ্যের কেনাকাটা বাড়ছিল তখন হোম মেইড খাবার অর্ডারের সুযোগ না থাকায় খুবই আফসোস হতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে একটু একটু করে হোম মেইড ফুডের উদ্যোক্তাদের পরিচিতি বাড়ছে। আমিও তাদের কাস্টমার হওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ যত বেশি উদ্যোক্তার থেকে কেনাকাটা করি, তত বেশি জানার সুযোগ তৈরি হয়। কারণ প্রত্যেকের কিন্তু সব ফুড স্বাদে গুনে সেরা হয় না। কারো কাবাব ভালো হয়, কারো খাসির রেজালা ভালো হয়, কারো সবজি কিংবা কারো ভর্তা। পিঠার ক্ষেত্রেও তাই। যা নাস্তায় খুব কাজে দেয়। তাই আমার বাসায় মেহমান আসলে কিংবা পার্টি থাকলে কয়েকজন উদ্যোক্তার থেকে অর্ডার দেওয়া হয়। তাদের সেরা সেরা খাবারগুলো পেয়ে প্রসংশায় ভাসায় আমার অতিথিরা।
হোম মেইড খাবার জনপ্রিয় হওয়ার কারণে আরেকটা ভালো দিক হয়েছে। এখন যেকোন সময় চাইলে যে কাউকে খাবার পাঠাতে পারি। অনেক সময় দেখা যায় আমার কোন একটি খাবার আমার কোন আত্মীয়ের খুবই পছন্দ। ব্যস্ততার কারণে তার জন্মদিনে, বিবাহ বার্ষীকিতে কিংবা অসুস্থতার সময় আমার ইচ্ছা থাকলেও সেই খাবার খাওয়ানোর সুযোগ হয় না ব্যস্ততার কারণে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে হোম মেইড ফুডের উদ্যোক্তারা। যেহেতু আমি জানি কার কোন খাবারটি বেশি ভালো তা থেকে আমার প্রিয়জনের পছন্দের খাবার পাঠিয়ে দিতে পারি মাত্র কয়েক ক্লিকে। এতে করে আমিও যেমন অত্মতৃপ্তি পাই তেমনি আমার প্রিয়জনও পায়। আর উদ্যোক্তারাও আমার পক্ষ থেকে চিরকুট কিংবা উপহার পাঠান। যা আমার আবেগের অংশ হয়ে যায়।
আমি একজন হোম মেইড উদ্যোক্তা হিসেবে চাই ক্রেতা বিক্রেতাদের সবাই হোম মেইড খাবার নিয়ে লিখুক এবং ব্যবহার করুক। এতে করে আমাদের চাহিদাগুলো পূরণ করার ক্ষেত্র সম্প্রসার হবে। এখানে আমি একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। বয়সের ভারে প্রায় সময়ই ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। তখন চোখে পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে নানাভাবে খাবারে কষ্ট পায় স্বজনরা। রোগীর খাবার হসপিটালের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও স্বজনদের খেতে হয় বাহির থেকে। তাদের কেউ কেউ আবার রাজধানীতের তেমন একটা আসে না তাই কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যায় তাও জানে না। রেস্টুরেন্টের খাবার তাদের মন মতো হয় না। কারণ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই খাবার তৈরি করে। তাই যারা বেশি ঝাল পছন্দ করে কিংবা কম ঝাল খায় অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মন মতো হয় না। তেমনি আবার কারো চাহিদা থাকতে পারে মাংস একটু নরম কিংবা শক্ত রাখার। এসব চাহিদা পূরণ করা রেস্টুরেন্টের পক্ষে অসম্ভব হলেও হোম মেইড উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন কিছু না।
এ কারণে আমি বলেছি সবাই লিখুন নিজেদের অভিজ্ঞতা। এতে করে অন্তত আপনার বন্ধু তালিকায় যারা আছে তারা অন্তত খাবারের ভোগান্তি থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।
লেখক: জেনিস ফারজানা তানিয়া, স্বত্বাধিকারী: আলিয়া’স কালেকশন।