ঢাকা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ‘ঢাকাপিডিয়া’। এই ওয়েবসাইট থেকে যেকেউ যেকোন স্থান থেকে ঢাকা সম্পর্কে জানতে পারবেন৷ ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপনা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, ব্যবসা, প্রকাশনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে তথ্য সংরক্ষণ করা হবে।
ঢাকার ইতিহাস ৪০০ বছরের। এখানে প্রায় ২-৩ কোটি লোকের বসবাস। এই বিপুল জনগোষ্ঠী নিয়ে কোথাও তেমন গুছানো তথ্য একত্রিত নেই। এই অভাব দূর করার লক্ষ্যে ঢাকাপিডিয়ার যাত্রা। ঢাকাপিডিয়া একটি ঢাকা ভিত্তিক অনলাইন তথ্য কেন্দ্র। এই ওয়েবসাইট সকলের জন্য উন্মুক্ত।
আমি উম্মে সাহেরা এনিকা। আমার জন্ম বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া এবং পারিবারিক জীবনও ঢাকায়। এর ফলে ঢাকা নিয়ে জানার আগ্রহ বরাবরই। ঢাকা নিয়ে জানতে আগ্রহী মানুষের জন্য ঢাকাপিডিয়া।
একসময় ঢাকাই মসলিন ছিলো বিশ্ববিখ্যাত। ১৬০৮ সাল কারো মতে ১৬১০ সালে ঢাকার চাঁদনীঘাটে ইসলাম খাঁ আসার মধ্য দিয়ে ঢাকার নতুন ইতিহাস রচিত হয়৷ “ঢাকা” রাজধানী স্থাপনের পর দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ঢাকার মসলিন সে সময়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। তৎকালীন সময় ইরান-তুরানের ব্যবসায়ীরা ঢাকায় রপ্তানির কাজে আসতেন। এরপর ইংরেজ,ফরাসি, ওলন্দাজ বণিকেরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন বাণিজ্যের জন্য।
সতের শতকের প্রথমদিকে পুর্তগিজরা এখানে ব্যবসা করেন। এই শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় বণিকেরা মসলিন ব্যবসার সাথে যুক্ত হতে থাকেন৷ ঢাকা থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা একত্রিত হতেন।
ঢাকাপিডিয়া এমন এক জ্ঞানকোষ হবে যেখানে ঢাকার সেকাল এর ব্যবয়াসীদের সম্পর্কে জানা যাবে। যেমন: রেবতী মোহন দাস, যতিন কুমার দাস, ঋষিকেশ দাস, প্রসন্ন পোদ্দার, আনোয়ার হোসেন সহ আরো অনেকের সম্পর্কে তথ্য থাকবে। ১৯ শতকে ঢাকার মুসলমানরা ব্যবসা বাণিজ্যে যুক্ত হতে থাকেন৷ অনেকের মতে ঢাকার নবাব পরিবারের আদি পুরুষদের চামড়া ব্যবসার সাফল্যের কারণে শহরের মুসলমানরা ব্যবসার দিকে আসতে শুরু করেন৷ ফরাশগঞ্জের দাস পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মথুরা মোহন দাস ছিলেন ঢাকার সফল পোদ্দার। ফরাসগঞ্জের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ পুরান ঢাকার সবচাইতে বড় কয়লা ব্যবসায়ী ছিলেন। ভারত থেকে হাজার হাজার টন কয়লা আমদানি করতেন এবং নাচঘরে পাইকারি কয়লা বিক্রি করতেন৷
ঢাকাই মসলিন ছাড়াও কাসিদা, ঢাকা বাফতা, ঢাকাই জামদানী, শাঁখারীবাজারের শঙ্খ, চামড়ার কারবারি, পাট ব্যবসা,বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরী, মোজা গেঞ্জির কারখানা,মোষের শিং এর চিরুনী ও বোতাম, কাঁচের চুড়ি, হাতির দাঁতের শিল্প, কুমকুম ফুলের হলদে রং এর ব্যবসা সহ প্রাচীন পণ্য কিছু বিলুপ্ত, কিছু প্রায় বিলুপ্তির পথে সেগুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো আমরা।
ঢাকার বাকরখানী, হাজির বিরিয়ানী, মোরগ পোলাও, নানরুটি, ঢাকার মিষ্টি-দই, লাচ্ছি, ফালুদা, ইফতারের আইটেম, সুতলি কাবাব, তেহারি, বোরহানি, শামি কাবাব সহ বিভিন্ন খাবারের বর্ণনা থাকবে এখানে৷
সাত রওজা, ইমামবাড়া,লালবাগ কেল্লা, আহসানমঞ্জিল, খ্রিষ্টান কবরস্থান, মিটফোর্ড হাসপাতাল ঢাকেশ্বরী মন্দির,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হোসেনী দালান, লালকুঠি, রোজগার্ডেন, বলধাগার্ডেন, বিউটি বোডিং সহ ছোট বড় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে।
নবাব আহসানউল্লাহ, স্যার সলিমুল্লাহ, লালভাই (চিত্রশিল্পী), ডা.চৌধুরী গোলাম আজম (চিকিৎসক), হোসেন জাহান বেগম (প্রথম ম্যাট্রিকুলেট মহিলা), চৌধুরী গোলাম মাওলা (চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, গ্লাসগো বাংলাদেশ এর অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান), আমেতুন খালেক বেগম (সেন্ট্রাল ওইমেন্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ও লেখিকা), মওলা বখশ সরদার মত বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের জীবনী লিপিবদ্ধ থাকবে ঢাকায় পিডিয়ায়।
বাংলাবাজার বইয়ের রাজ্য, ফরাসগঞ্জ জমজমাট কাঠের ব্যবসা, পুরান ঢাকা একসময় ঝিনুক বোতামের ব্যবসা ছিলো প্রসিদ্ধ, ইসলামপুর পোশাকের জন্য, বংশাল নাজিরাবাজার অটো পার্টস, উর্দু রোড প্লাস্টিক, পাঞ্জাবি, লালবাগের পোস্তা গরু ছাগলের কাঁচা চামড়ার সর্ববৃহৎ আড়ৎ ছিলো। ইমামগঞ্জ, সোয়ারীঘাট, রাজারঘাট, ছোটকাটরা, বড় কাটরা, রহমতগঞ্জ, চকবাজার,সদরঘাট এর মত ব্যবসায়িক এলাকার ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে ঢাকাপিডিয়া।
ইদ, পূজা তো রয়েছেই এছাড়া ঘুড়ি উৎসব, পৌষসংক্রান্তি, মহররম,শবেবরাত, দীপাবলি, বড়দিন এর মত ছোট বড় উৎসবগুলো নিয়ে আলাদা ভাবে জানা যাবে।
বেঙ্গল টাইমস, বাঙ্গালা যন্ত্র, বাংলা একাডেমী, ঢাকা নিউজ, ঢাকা ব্যাংক, ঢাকা প্রকাশ এর মত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানাবে ঢাকাপিডিয়া।
ঢাকা গভ:মুসলিম স্কুল, সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, জগন্নাথ কলেজ, পোগজ স্কুল, কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, নটরডেম কলেজ, নারীশিক্ষা (বর্তমান শেরেবাংলা স্কুল ও কলেজ), সলিমুল্লাহ কলেজ এর মত নতুন ও পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস জানা যাবে।
শুধুমাত্র পুরান বা আদি ঢাকা না নতুন ঢাকা যেমন: মিরপুর, বনশ্রী, উত্তরা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, গুলশান, ধানমন্ডি সহ এসব এলাকার ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, উৎসব সম্পর্কে তথ্য থাকবে ঢাকাপিডিয়াতে৷
আশা করি ঢাকাপিডিয়া বাংলাদেশের আরো ৬৩ জেলার সামনে জেলা ওয়েবসাইট হিসেবে রোলমডেল তৈরী হবে। জেলা পণ্য, জেলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বিষয়ক তথ্য উঠে আসবে এমন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।