বাংলাদেশের ই-কমার্সে আমার যাত্রা শুরু ২০১৮ সালে। এই সময়ের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সবগুলো সেগমেন্টে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ওই সময়েই দারাজ বাংলাদেশে প্রথম বাংলাদেশী সিওও হিসেবে যোগদান করি। তখন থেকে আমার ই-ক্যাবের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০২২ সালে ই-ক্যাবের পরিচালক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও পলিসি মেকিং নিয়ে কাজ শুরু করি। বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে এর পুরো পোটেনশিয়াল অর্জন করতে হলে এখনও অনেক কাজ করার আছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও ক্যাশলেস সোসাইটি গড়তে ই-কমার্সের বিকল্প নেই। আমাদের মেধার কোন কমতি নেই। আমাদের উদ্যোক্তারও কোন কমতি নেই। সঠিক পরিচর্যা থাকলে দক্ষিণ এশিয়ার ই-কমার্সের হাব হতে পারে বাংলাদেশ। ই-ক্যাব নির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য আর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে টেকজুমটিভির সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন ‘’অগ্রগামী‘ ’ প্যানেলের খন্দকার তাসফিন আলম।
আমি বিশ্বাস করি, আমার দীর্ঘ দিনের দেশি ও বিদেশি ই-কমার্সের পলিসি মেকিং নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা এবং বিগত দুই বছরের ই-ক্যাব বোর্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আপনাদের সাথে নিয়ে আগামীতে আরও কার্যকর ফলাফল অর্জন করতে পারবো। সেই লক্ষ্যে আমি আগামী ২০২৪-২৬ ই-ক্যাব নির্বাহী কমিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি এবং আপনাদের সমর্থন ও দোয়া প্রার্থনা করছি।
টেকজুম: আপনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কেন?
তাসফিন আলম: বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি আমাদের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটা। নিজে মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজের সুবাদে আমি দেখেছি আমাদের এই খাতে অনেকরকমের নীতিগত দুর্বলতা রয়ে গেছে। উদ্যোক্তাদের সহজ ঋণের ব্যবস্থা করার মত অনেক পলিসি লেভেলে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। সে জন্যই আমার মনে হয়েছে, বিগত দিনের তরুণ ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেওয়ায় আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটা ই-ক্যাব কাজে লাগানো দরকার। আমি গত দুই বছর ই-ক্যাব এর ট্রেড বডিতে ছিলাম। অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি বেশি কিছু কাজ সফলভাবে করেছি। আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো সফলভাবে শেষ করতে চাই। আমি ই-কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রির একজন কর্মী হিসেবে সহকর্মীদের সমস্যা এবং সমাধানে কাজ করার ইচ্ছা থেকে মূলত নির্বাচনে আসা।
টেকজুম: দারাজ দেশের ই-কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রি এবং ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য কি ধরনের কাজ করছে?
তাসফিন আলম: আপনি জানেন যে দারাজ দেশের সবথেকে বড় মার্কেটপ্লেস। আমরা সবসময় একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করেছি। আপনার জানেন যে দারাজ খুব ছোট একটা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে আসতে এত বড় হয়েছে। আমরা একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করেছি, যেখানে লক্ষাধিক ছোট বড় উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা দেশের সাধারণ মানুষকে ই-কমার্স ফ্রেন্ডলি করার চেষ্টা করছি। আমরা দেশে লজেস্টিক সিস্টেম তৈরি করেছি। একটি দেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সম্প্রসারণের জন্য মূলত যে তিনটি বিষয় দরকার, আমার সেই সকল দিকে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এখন চাইলে দেশে যেকোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আসতে পারে। তাদের জন্য আমরা মার্কেট তৈরি করেছি। আপনারা জানেন আমরা যখন দেশে ই-কমার্স শুরু করি, তখন আমাদের দেশে দক্ষ জনবল ছিল না। আমরা দেশে ই-কমার্স দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরি করেছি। দিনে দিনে আমরা যেমন বড় হয়েছি, দেশের ইকোসিস্টেমটাকেও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি।
টেকজুম: বর্তমানে দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত অবস্থা কেমন?
তাসফিন আলম: দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি অগ্রগতি বেশ আশাব্যঞ্জক। প্রতিবছরে বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা সরকারের সাথে বিভিন্ন পলিসি মেকিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে, আমাদের সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগের কোনো অভাব নেই। তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। সেই সাথে আমাদের আছে বিশাল এক তরুণ জনগোষ্ঠী, যাদের পক্ষে ই-কমার্স শিল্পে অনেক কিছু করা সম্ভব। আপনি জানেন যে, বিগত দিনে দেশের ই-কমার্স বেশ কিছু স্ক্যাম হয়েছে যার ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে যে ভয় তৈরি হয়েছিল, আমরা ই-ক্যাব থেকে সরকারি সহয়তায় সেই ভয় দূর করতে পেরেছি। বর্তমানে এখন যারা ব্যবসা করছে তারা ভালোভাবে ব্যবসা করার জন্য ব্যবসা করছে। এই পরিবর্তন কিন্তু সহজ ছিল না। বর্তমানে রিটেইল বিজনেস থেকে মাত্র ২ শতাংশ ই-কমার্সে এসেছে । বিগত দুই বছর যে ক্রিটিক্যাল সময়ের ভেতর দিয়ে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি যাচ্ছিল তা দ্রুত পরিবর্তন হয়ে এই সময় ৫ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
টেকজুম: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ব্র্যান্ডিংয়ে কি ধরনের কাজ করতে চান?
তাসফিন আলম: বিগত দুইবছর ই-ক্যাব ব্র্যান্ডিং ছিল আমার সবচেয়ে বড় মিশনগুলোর মধ্যে একটি। আপনারা জানেন সবথেকে বেশি সাধারণ কাস্টমারদের নিয়ে কাজ করতে হয় ই-ক্যাবকে। অন্য সংগঠনগুলো বি২বি কাজ করে তাদের সাধারণ কাস্টমার হ্যান্ডেলিং করতে হয় না। তাই তাদের নিয়ে কাস্টমার কমপ্লেইন থেকে না। কিন্তু ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পজেটিভ ব্র্যান্ডিং ধরে রাখা অনেক বেশি কঠিন। আমরা সবসময় কাস্টমারদের পজেটিভ মনোভাব ধরে রাখার কাজ করছি। দারাজের কাজে প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়েছে, অরগানাইজ করতে হয়েছে প্রচুর ইভেন্ট, এক্টিভেশন। সেখানে সবসময় দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পজেটিভ ব্র্যান্ডিং করেছি। দেশের সবথেকে বেশি বিদেশি কন্ট্রিবিউশন রয়েছে চায়না থেকে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে চায়না যাওয়ার সুয়োগ হয়েছে। আমি ই-ক্যাব থেকে সেখানে বেশ কিছু ইনিসিয়েটিভ নিয়েছি কিভাবে আরও বেশি ইনভেস্টর আনা যায়।বেশ কিছু সফল মিটিং করেছি। আমরা তাদের কাছে আমাদের দেশের ই-কমার্স ব্যবসার জন্য কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাদের সাথে শেয়ার করেছি। আমাদের অনেক সাপ্লায়ার ও সল্যুশন প্রোভাইডারের সাথে আলোচনা হয়েছে।
টেকজুম: নতুন বোর্ডের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কি হবে?
তাসফিন আলম: সরকার ব্যাপকভাবে ডিজিটালাইজেশনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে আমাদের প্রচুর সু্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ই-ক্যাবকে অন্যতম প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থায় পরিণত করতে হবে। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব ইকোনোমির বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এই সময় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে কোথাও তেমন কোনো ইনভেস্ট করা হয়নি। তবে আবার বিশ্ব ইকোনোমি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমরা আশা করি, আগামি ২ বছরে বেশ কিছু ইনভেস্ট দেশে আসবে। তবে আমাদের নতুন স্টার্টআপ তৈরি করা ও পার্শ্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে কম্পিটিশন করে ইনভেস্টর নিয়ে আশা বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে। আর আমাদের বেশি কিছু পলিসি এখনো অনগোয়িং রয়েছে সেগুলো ঠিক করে যেভাবে আমাদের সদস্যদের জন্য ও ইকোনমির জন্য সহায়ক হয়, সেটা তৈরি করা। আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ আমি মনে করি, আমাদের ই-কমার্স আরও ব্যাপ্তি বাড়ানো।
টেকজুম: ভোটারদের প্রতি আপনার মেসেজ কি থাকবে?
তাসফিন আলম: আমি মনে করি, ই-ক্যাবে সম্মানিত সদস্যরা অত্যন্ত বিচক্ষণ। আমি নিশ্চিত তারা প্রার্থীদের সক্ষমতা, দক্ষতা, যোগ্যতা দেখেই তাদের মূল্যবান ভোট দিবেন। ই-ক্যাবে বোর্ডে ‘অগ্রগামী’ থেকে যে কাজ গুলো আমরা শুরু করেছি এই গুলোর ধারাবাহিক ভাবে করলেই আমরা রেজাল্ট পাবো। এই উদ্যোগ গুলো থেমে গেলে আমি মনে করি ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই ইন্ডাস্ট্র্রির সবাই বিচক্ষণ ব্যাক্তি । সবাই বিচক্ষণতার সাথে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আমরা ‘অগ্রগামী’ টীম অনেক অভিজ্ঞতা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি যা বাস্তবায়ন করতে হবে। সদস্যদের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে ই-ক্যাব ২০২৪-২৬ নির্বাচনে ‘অগ্রগামী’ টিমকে নির্বাচিত করে প্রতিটি মেম্বারের ব্যবসার উন্নতির জন্য ই-ক্যাব ইন্ডাস্ট্র্রির উন্নতির জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিবেন।