বিশ্বে স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় বাজার চীন। এ কারণে চীনের বাজারে অবস্থান পোক্ত করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সব প্রতিষ্ঠানই চীনাদের হাতে নিজেদের তৈরি স্মার্টফোন তুলে দিতে আগ্রহী। তবে এ প্রতিযোগিতায় ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটির ফ্ল্যাগশিপ আইফোনের প্রতি আগ্রহ কমছে চীনাদের। কমছে বিক্রিও। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি বাবদ অ্যাপলের রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। মূলত চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ এবং চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ের অভাবনীয় উত্থানের কারণে চীনের বাজারে অ্যাপলের অবস্থান কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর সিএনবিসি ও ইয়াহু নিউজ।
প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে নিজস্ব হিসাব বছর গণনা শুরু করে অ্যাপল। সম্প্রতি নিজস্ব হিসাব বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেচাকেনার তথ্য প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি করে মোট ১ হাজার ১১৩ কোটি ডলারের রাজস্ব আয় হয়েছে, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে চীনে আইফোন বিক্রি বাবদ রাজস্ব আয় এক বছরের ব্যবধানে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছিল। আর এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে রাজস্ব কমার পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপলের পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ হিসেবে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। বছরজুড়ে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের জের ধরে আমেরিকান কোম্পানি হিসেবে অ্যাপল চীনের বাজারে কেমন ব্যবসা করবে, এটা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। ডিসেম্বরে আইফোনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। এ কারণে আইফোন কিনতে চীনাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। ব্যবসা সীমিত হওয়ার এটা একটি কারণ।
এ বিষয়ে অ্যাপল সিইও টিম কুক বলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা আগের তুলনায় অনেকটাই কমে এসেছে। দুই পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ ধারাবাহিক আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই কার্যকর একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধে লাগাম টানতে সক্ষম হবে বেইজিং-ওয়াশিংটন। এতে চীনের বাজারে অ্যাপলের অবস্থান আরো পোক্ত হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি করে রাজস্ব আয় হাজার ডলারের উপরে ছিল। তবে এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চীনাদের জন্য আইফোনের দাম কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা চলমান রয়েছে।
চীনের বাজারে অ্যাপলের পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের ক্রম-উত্থানকে চিহ্নিত করেছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এটা চীনারা ভালোভাবে নেয়নি। দেশটির অনেক নাগরিকই নিজস্ব পণ্য কেনার মনোভাব থেকে হুয়াওয়ের প্রতি ঝুঁকেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের বাজারে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ এক বছরের ব্যবধানে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।
সম্প্রতি চীনের ৫০টি বড় শহরে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। একে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত ফাইভজি নেটওয়ার্ক বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে সীমিত এলাকায় ফাইভজি চালু করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চীনাদের মধ্যে ফাইভজি সমর্থন করে, এমন স্মার্টফোন কেনার আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু অ্যাপলের কোনো মডেলে এখনো ফাইভজি সুবিধা দেয়া হয়নি। হুয়াওয়ে ও স্যামসাং এরই মধ্যে ফাইভজি মডেলের স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। এ কারণে চীনের বাজারে অ্যাপলের তুলনায় হুয়াওয়ে ও স্যামসাংয়ের অবস্থান পোক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যানিয়েল ইভস বলেন, বিশ্বব্যাপী ফাইভজি প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। চীনারাও এর বাইরে নয়। এ কারণে চীনের বাজারে অবস্থান ধরে রাখতে ফাইভজি ফোন নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে চীনা স্মার্টফোন বাজারে বিদ্যমান প্রতিযোগিতায় হুয়াওয়ে কিংবা স্যামসাংয়ের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে অ্যাপল।