এক দশকের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে স্যামসাংয়ের মুনাফা। বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতিতে ইলেকট্রনিকস পণ্যের চাহিদা হ্রাস এবং চিপের বাজারে মন্দায় ভুগেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যামসাংয়ের মেমরি চিপ, স্মার্টফোন ও ডিসপ্লের চাহিদা কম ছিল। ক্রমবর্ধমান সুদহার ও মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ছুটির মৌসুমের কেনাকাটারও রাশ টেনে ধরেছে ভোক্তারা। মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে চীনে অ্যাপলের আইফোন অ্যাসেম্বলি কমপ্লেক্সে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। কারণ স্যামসাংয়ের ডিসপ্লে ও মেমরি চিপের সবচেয়ে বড় গ্রাহক অ্যাপল।
পিটার লি নামে সিটি গ্রুপের বিশ্লেষক বলেন, ফ্ল্যাশ মেমরি চিপের দাম স্যামসাংয়ের উৎপাদন খরচের সমপরিমাণে দাঁড়িয়েছে।
আয়-ব্যয়ের প্রাথমিক উপাত্তে স্যামসাং জানায়, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ওন, যা ২০২১ সালের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৬৯ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ওন পরিচালন মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কনগ্লোমারেটটির বিক্রি ছিল ৭০ ট্রিলিয়ন ওন। আগামী ৩১ জানুয়ারি আয়-ব্যয়ের খাতওয়ারি সম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে স্যামসাং।
চতুর্থ প্রান্তিকের প্রাথমিক উপাত্তে শঙ্কা বেড়েছে স্যামসাংয়ের। কিছু কিছু খাতে উৎপাদন কমানোর পাশাপাশি মূলধন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে।
সিএলএসএ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক সঞ্জীব রানা বলেন, যদিও শুরুতে স্যামসাং বলে আসছিল তারা মূলধন ব্যয় কমাবে না, তবে পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে তাদের হয়তো অচিন্তনীয় কাজটিই করতে হবে; মেমরি চিপ উৎপাদন কমিয়ে দেয়া।
করোনা মহামারীর মধ্যে চিপের চাহিদা বৃদ্ধিতে রেকর্ড উৎপাদনে যায় স্যামসাংয়ের মতো চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইন সংকট ফের প্রকট আকার ধারণ করে। উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যয় বৃদ্ধিতে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয় তারা। মাইক্রন টেকনোলজিসের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী চিপ নির্মাতা কোম্পানির দাবি, ২০২৩-এর দ্বিতীয়ার্ধের আগে সেমিকন্ডাক্টর খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। এ কারণে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও কারখানা বাজেট কমিয়েছে তারা। মাইক্রন সতর্ক করে বলছে, চলতি বছরে মুনাফায় ফেরা কঠিন ঠেকবে তাদের জন্য। ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি মূলধন ব্যয় কমিয়েছে তারা। এসকে হাইনক্স বলছে, ২০২৩ সালে মূলধন ব্যয় অর্ধেক কমাবে।
স্যামসাং এর আগে জানিয়েছিল, উৎপাদন কিংবা বিনিয়োগ কমানোর পরিকল্পনা নেই তাদের। কিন্তু মেমরি চিপের দামে পতন, গ্রাহক আকর্ষণে চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতায় অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাদের।
গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রাক্কলন ছিল, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের পরিচালন মুনাফা হবে ৫ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ওন। গত বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে যা ৫৮ শতাংশ কম এবং পূর্ববর্তী প্রান্তিকের চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম। আগের প্রাক্কলনে ৭ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ওন পরিচালন মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছিল ওয়াল স্ট্রিট জায়ান্টটি। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, চলমান অর্থনৈতিক শ্লথগতিতে স্মার্টফোন ও টিভির চাহিদা হ্রাসের ফলে স্যামসাংয়ের আয়ে প্রভাব পড়েছে।
শুধু গোল্ডম্যান স্যাকসই নয় নিজস্ব পূর্বাভাসেও একই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৬ ডিসেম্বর স্যামসাং সিকিউরিটিজ তাদের প্রাক্কলনে জানায়, চতুর্থ প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৭৮ ট্রিলিয়ন ওন পরিচালন মুনাফা করতে পারে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। ২০ ডিসেম্বর ইউজেন ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ তাদের পূর্বাভাসে জানায়, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা হবে ৬ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ওন।