২০২২ সালে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রিতে সার্বিকভাবে শীর্ষে ছিল সিম্ফনি। অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন ব্র্যা্ন্ডগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল শাওমি। বিক্রি হওয়া হ্যান্ডসেটের ১৮ শতাংশই ছিল শাওমির রেডমি ব্র্যান্ডের বাজেট ফোন। শাওমির পরেই ছিল স্যামসাং ও রিয়েলমি। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০২২ সালে দেশে স্মার্টফোন আগমন ২৩ শতাংশ কমেছে। প্রযুক্তি-বাজার সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা কাউন্টারপয়েন্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
কাউন্টারপয়েন্টের মার্কেট মনিটর সার্ভিসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির মাত্রাবৃদ্ধি, ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট, নতুন করে ভ্যাট আরোপ এবং আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে স্মার্টফোন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নতুন ফোন কেনার আগ্রহ কমেছে। এ কারণে দেশে নতুন স্মার্টফোন আগমন ২০২১ সালের তুলনায় বিগত বছরে ২৩ শতাংশ কমেছে।
দেখা গেছে, সার্বিকভাবে স্মার্টফোন শিপমেন্ট প্রায় এক চতুর্থাংশ কমলেও শাওমি ও নকিয়ার হ্যান্ডসেট আমদানি বেড়েছে। এ দুটি ব্র্যান্ড নিজেদের ফোনগুলো লোকালাইজেশনের দিকে মনোযোগ দেওয়ায় এবং দাম সহনীয় রাখতে সচেষ্ট হওয়ায় সুবিধা পেয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে শাওমি স্মার্টফোন শিপমেন্টে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শাও্মির বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে ২০২২ সালে। ১০,০০০-২০,০০০ টাকা দামের রেডমি ব্র্যান্ডের বাজেট ফোনগুলো শাওমিকে দেশের বাজারে শীর্ষস্থানে নিয়ে গেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে শাওমির মার্কেট শেয়ার ছিল ৭ শতাংশ, বিগত বছর তা বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ।
রেডমির ১০এ, ১০সি, ১০ (২০২২) মডেল ২০২২ সালে বিক্রির সংখ্যায় শাওমিকে এগিয়ে দিয়েছে। এসব মডেলের দাম ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের মাঝারি রেঞ্জের স্মার্টফোনেরও বিক্রি বেড়েছে গতবছর। ২০২১ সালের তুলনায় এসব ফোনের শিপমেন্ট বিগত বছরে ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
শাওমির কাছে মার্কেট শেয়ার হারিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে স্যামসাং। গতবছর দেশে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের ১৩ শতাংশ ছিল স্যামসাং ব্র্যান্ডের। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়া, বেশি দামে ফোন বিক্রিতে জোর দিয়ে এন্ট্রি লেভেলে কম মনোযোগ দেওয়া এবং মাঝারি রেঞ্জের মডেল কম বাজারজাত করায় স্যামসাংয়ের বিক্রি কমেছে।
এন্ট্রি ও মিড-লেভেল প্রাইস ব্যান্ডে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে রিয়েলমি। বিগত বছর রিয়েলমির মার্কেট শেয়ার ১৪ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১১ শতাংশ। বেশকিছু প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন ও মার্কেটিং প্রোগ্রামের কারণে রিয়েলমি উতরে গেছে, অন্যথায় তাদের বিক্রি আরও কমত।
ভিভো ও অপোর মার্কেট শেয়ারে তেমন হেরফের হয়নি। ভিভোর আগের মতোই ১০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার অটুট আছে। অপ্পোর মার্কেট শেয়ার ৮ শতাংশ থেকে খানিকটা বেড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে। মার্কেট শেয়ারে রদবদল না হলেও দুই ব্যান্ডের শিপমেন্ট পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৭ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ কমেছে, যা সার্বিকভাবে বিক্রি কমার প্রমাণ দিচ্ছে।
সার্বিকভাবে, মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার গতবছর ৮ শতাংশ কমেছে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়ায় স্মার্টফোনের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ায় ফিচার ফোনের বাজার ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
স্মার্টফোন বাজারে ২৬ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে সিমফনি ছিল শীর্ষে। ফিচার ফোন বিক্রিতেও শীর্ষে ছিল দেশীয় ব্র্যান্ডটি। ফিচার ফোনে সিমফনির মার্কেট শেয়ার ছিল ৩৭ শতাংশ। এই সেগমেন্টে সিমফনির পরে ছিল আইটেল, নকিয়া ও ওয়ালটন।