এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ডের (এপিকটা) দেওয়া দুই বছরের নিষেধাজ্ঞাকাল পার করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন বা সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। এপিকটার নিষেধাজ্ঞা আইসিটি খাতে কোনো প্রভাব ফেলবে না দাবি করা বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদই আবার এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছেন এপিকটার কার্যনির্বাহী কাউন্সিলের কাছে। যদিও সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি এপিকটা কর্তৃপক্ষ।
তবে আসন্ন হংকং এপিকটা-২০২৩-এ অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে সরাসরি আবেদনপত্র নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে এপিকটা সচিবালয়। এজন্য এপিকটার সাবেক প্রধান বিচারক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফিকে অর্থনৈতিক সমন্বয়ক হিসেবে স্বেচ্ছাভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালে বেসিসের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এপিকটায় সদস্য পদ পায় বাংলাদেশ। তখন ২০২১ সাল পর্যন্ত এপিকটার প্রতিটি পর্বে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০১৭ সালে এপিকটার আয়োজক দেশও ছিল বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণের পাশাপাশি এপিকটার বিচারক প্যানেলেও থাকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি। একটি দেশের আইসিটিবিষয়ক সংগঠন সেই দেশের অংশগ্রহণকারীদের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে। এপিকটায় সরাসরি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই, অংশ নিতে হয় সেই সংগঠনের মাধ্যমে। তবে ২০২২ সালে নিবন্ধন করেও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এপিকটার মূল আসরে অংশ না নেওয়ায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয় বেসিস তথা বাংলাদেশ। আর এতেই বাংলাদেশ থেকে ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে এপিকটার মূল আসরে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়া প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সেই বার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, এতে বাংলাদেশের আইসিটি খাত বা বেসিসের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে সূত্র বলছে, গুরুত্ব না দেওয়া এ সংগঠনের সদস্য পদ ফিরে পেতে এপিকটার নির্বাহী কাউন্সিলের কাছে অনানুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছেন রাসেল টি আহমেদ।
এপিকটার চেয়ারম্যান ফুলভিও ইনসেরা এক ইমেইল বার্তায় বলেন, রাসেল এবং আমার মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সেটি আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু ছিল না। তবে আনুষ্ঠানিক আবেদন হলেও আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতো না। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের আগে বেসিসের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না। বেসিসের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলেও বাংলাদেশ থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অবশ্য সুসংবাদ দিয়েছে এপিকটা। নিজেদের নিয়মের ব্যতিক্রম করে হংকং এপিকটা-২০২৩০-এ সরাসরি আবেদনের সুযোগ দিয়েছে এপিকটা সচিবালয়। এজন্য আগ্রহীদের আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এপিকটা ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেদের মনোনয়ন জমা দিতে হবে। অংশগ্রহণে ইচ্ছুক আবেদনকারীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ অঞ্চলের জন্য আবদুল্লাহ এইচ কাফিকে স্বেচ্ছাভিত্তিক সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ এইচ কাফি বলেন, এপিকটা থেকে সম্প্রতি বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে বেশকিছু আবেদন পেয়েছে। তাদের মেন্টরিং করার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। আগ্রহীরা যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে আমি সাধ্যমতো তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, পাকিস্তানে অংশ না নেওয়ার জন্য বেসিসকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তো আর কিছু বলার নেই। তবে ফুলভিও আমার পুরোনো বন্ধু। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, এপিকটায় তারা বাংলাদেশকে চায়। সেজন্য আমি বেসিসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বলেছিলাম। এটা আনুষ্ঠানিক বা লিখিত কিছু ছিল না। এই কথা গণমাধ্যমে বলাটাও অপেশাদার হয়েছে। এর মাঝে তারা ব্যক্তি পর্যায়ে এবার অংশগ্রহণকারী নিচ্ছে, এটা অপেশাদার আচরণ। আমার মনে হয়, এর পেছনে আমাদের দেশের ভেতর থেকে এবং পাকিস্তানের কোনো ইন্ধন আছে। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ না থাকায় এপিকটা দুর্বল হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি।