সাত বছরে স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজার বার্ষিক ভিত্তিতে ছয়বার সংকুচিত হয়েছে। এর মধ্যে মহামারী-পরবর্তী সরবরাহ সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে এ খাতের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই নিম্নমুখী ছিল। তবে চলতি বছর আবারো প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে এ খাত, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) এ বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর স্মার্টফোন বিক্রি বছরওয়ারি হিসাবে ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১২০ কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যাবে। ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, স্মার্টফোন বিক্রির হার এখনো মহামারীপূর্ব অবস্থার নিচে রয়েছে। বাজার ব্যবস্থা এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো অবস্থায় রয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির দিকে এগোচ্ছে।
আইডিসির ওয়ার্ল্ডওয়াইড মবিলিটি অ্যান্ড কনজিউমার ডিভাইস ট্র্যাকার বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ার রেইথ বলেন, ‘স্মার্টফোন বাজারের জন্য খুবই কঠিন একটি সময় গেছে। মহামারীর সময়েও পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হলেও ব্যক্তিগত কম্পিউটারসহ বেশকিছু ডিভাইস সেগমেন্ট প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে। আইডিসির বিশ্বাস এদিক থেকে স্মার্টফোন খাত সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে।’
রেইথ প্রবৃদ্ধিতে ফেরার কথা বললেও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, দীর্ঘমেয়াদে স্মার্টফোনে ব্যবহারের যে প্রবণতা তা নতুন ডিভাইস ক্রয়ের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। আর এটি স্মার্টফোন বাজারজাতের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। ফাইভজি প্রযুক্তি বিকাশসহ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন উদ্ভাবনের কারণে বর্তমানে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডিভাইস পরিবর্তনের চাহিদা বাড়ছে। উদীয়মান বাজারগুলোতেও বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসা বাড়ছে। আর এসব বিষয় বাজার পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বছরওয়ারি হিসাবে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বাজার ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে চলতি বছর এ ক্যাটাগরির স্মার্টফোন বিক্রি আড়াই কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) স্মার্টফোন খাতের অন্যতম আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস-পরবর্তী প্রজন্মের এআই অভিজ্ঞতা অর্জনে ভোক্তা বা গ্রাহকের আকর্ষণও বাড়ছে। প্রযুক্তিবিদরা জানান, স্মার্টফোন বিক্রি মহামারী-পূর্ববর্তী হারের নিচে থাকলেও স্মার্টফোনের জন্য ভোক্তা ব্যয় বাড়ছে।
আইডিসির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে ১৭ কোটি ইউনিটের বেশি জেন এআই স্মার্টফোন বিক্রি হবে, যা মোট স্মার্টফোন বাজারের ১৫ শতাংশ এবং এআই কম্পিউটারের বিক্রিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অর্থনৈতিক নানা সংকট ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্মার্টফোন বাজার। বছরওয়ারি হিসাবে ২০২৩ সালে দেশটির স্মার্টফোন বাজার ৪ শতাংশ বেড়েছে এবং এ সময় ২ কোটি ৩৮ লাখের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের গবেষণা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত বছরের শুরুতেও অঞ্চলটির স্মার্টফোন বাজার দুর্বল অবস্থানে ছিল। মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যয় অনেকাংশেই নিম্নমুখী ছিল। বছর শেষে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে খাতটি। উৎপাদনকারী পর্যায়ে বিভিন্ন মডেল উন্মোচন ও উদ্যোগ নেয়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৮ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে স্যামসাং। বছরওয়ারি হিসাবে কোম্পানির বিক্রি ১৭ শতাংশ কমেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্টটি প্রিমিয়াম সেগমেন্টকে প্রাধান্য দেয়ায় মিডরেঞ্জ ও সাশ্রয়ীমূল্যের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি বলে জানা গেছে।
স্যামসাংয়ের পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে ১৬ শতাংশ হিস্যা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ট্রানশন। বছরওয়ারি হিসেবে কোম্পানিটি ১৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসসহ একাধিক নতুন বাজারে কোম্পানি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বলেই এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।