দেশে নারীদের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। নারীদের স্বনির্ভরতার একটি বড় অংশ চাকরীজীবি হলেও এখন অনেক নারীই এগিয়ে আসছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। উদ্যোক্তা নারীরা নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের পাশাপাশি অন্য নারীদেরও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন।
ঢাকার বেইলী রোড এলাকার বাসিন্দা ঈষিতা আক্তার তানিয়া । তিনি একসাথে একজন মা ও একজন সফল উদ্যোক্তা। বাগেরহাট জেলার চিলমারী থানায় জন্ম । বাবার বড় মেয়ে এবং একমাত্র মেয়ে ঈষিতা । একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে স্নাতক শেষ করেছে । শখ এবং ভালোবাসা থেকে নিজের একটি ব্যান্ড তৈরি করছেন । ঈষিতা উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন। ঈষিতা আক্তার তানিয়া সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন তৈহিদুল ইসলাম।
আপনার নিজের সম্পর্কে জানতে চাই?
ঈশিতা আক্তার জন্ম বাগেরহাট জেলার চিলমারী থানায় বাবার বড় মেয়ে এবং একমাত্র মেয়ে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে স্নাতক কমপ্লিট করেছে গান শোনার শখ অনেক বেশি ইমোশনাল এবং একজন সিঙ্গেল মাদার । আমার উদ্যোগ আমার দ্বিতীয় সন্তানের মতই । দুই সন্তানকে বড় করা এখন আমার ধ্যান ধারণা ।
উদ্যোক্ত হওয়ার শুরু গল্পটা জানতে চাই।
মুলত প্রয়োজনের তাগিদ ও স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। আমি সবসময় স্বাধীনচেতা টাইপের নারী। নিজের মতো করে চলা আমার পছন্দ। সেপারেশনের পরে সন্তানের ও নিজের খরচ বহন সব নিজেরই করতে হয় । ছোট থেকে স্বপ্ন ছিল ডিজাইনার হওয়ার সেই লালিত স্বপ্ন থেকে আমার এই উদ্যোগ গ্রহণ করা । আমি সব সময় বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং স্টাইলিস্ট ডেস ডিজাইন করতাম আর স্বপ্ন দেখতাম কোন একদিন আমার ডিজাইন করা ড্রেস এবং অলংকার দিয়ে আমার নিজের একটি ব্যান্ড তৈরি হবে । গতবছর মার্চ মাসে আমার পেজ ‘ইসরাফ স্টাইল জোন’ এর যাত্রা শুরু হয়। শুরু থেকেই বেশ সাড়া পায়।
কোন ধরনের প্রোডাক্ট পাওয়া যায় আপনার প্রতিষ্ঠান?
প্রথমে ২৫৯ টাকা নিয়ে রং-তুলি আর কাঠের বেসকিনে হাতে বানানো গয়না দিয়ে শুরু করি। পরে আস্তে আস্তে প্রি অর্ডারে কোটা শাড়ী যোগ করি। এখন শাড়ী, ঐতিহ্যবাহী খাদি শাড়ী, জুম শাড়ী, হাফসিল্ক, টাঙ্গাইল শাড়ী, ব্লাউজ, পাঞ্জাবি, মেটাল গহনা এই সকল পন্য নিয়ে কাজ করছি।
অন্য কোন পেশা না গিয়ে কেন এধরনের উদ্যোক্তা হতে চাইলে?
আমি খুবই ফ্যাশন-সচেতন আর প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ । ডিজাইন করা হ্যান্ড পেইন্ট করা প্রচণ্ড রকমের নেশা এবং আমার সাথে ভালোবাসার কাজ । আমি মনে করি সফল হতে হলে কাজের প্রতি ভালো লাগা ভালোবাসা থাকতে হয় । আর আমার কাছে এই কাজের চেয়ে ভালোবাসা কাজ আর নেই । ইতোমধ্যে আমার ‘ইসরাফ স্টাইল জোন’ এর গয়না, শাড়ী দেশের বাইরে লন্ডন, প্যারিস, চায়না, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়াতেও পাড়ি দিচ্ছে।
অনেক ধরনের বিজনেস থাকতে কি কমার্সে কেন আসলেন?
যেহেতু আমি একজন সিঙ্গেল মাদার তাই কাজের পাশাপাশি কন্যার প্রতি বাবা-মা দুজনেরই দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে কারণে যেন কখনো একাকীত্ব অনুভব না করি সেজন্য ঘরে বসে কাজ করাকে আমি সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করছি । সেই চিন্তা থেকে মূলত ই-কমার্সে আশা ।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে জয় করেছেন?
উদ্যোক্তা মানেই প্রতিমুহুর্তই চ্যালেঞ্জ। এসএসসির পরিক্ষার ১৮ দিন পূর্বে হঠাৎ বিয়ে হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এক কন্যা সন্তানের মা হই । আমি মনে করি যখন আমি মা তখন আসলে আমার সামনে কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ না । কারণ একটি জীবন জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে আনতে পারা একজন মায়ের কাছে আর কিসের ভয় । আমার মা হওয়ায় বলে দেয় আমি একজন ফাইটার আর ফাইটাররা যে কোনো চ্যালেঞ্জই জয় করতে পারে । মেয়ে হয়ে ই-কমার্স বিজনেস করা পরিবার ও সমাজ মেনে নিতে পারতো না শুরুতে। কিন্তু আমি লেগেছিলাম এবং কাজ করে গেছি। তাই ধাপেধাপে সমস্যা গুলো কমেছে।
ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠান কে কোন অবস্থায় দেখতে চান?
আমি স্বপ্ন দেখি আমার উদ্যোগ আমার ডিজাইন করা পন্য একদিন ব্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে । আমার কাজের মাধ্যমে একদিন দেশের এবং দেশের বাইরের মানুষ আমাকে চিনবে । নারীদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে চাই । নতুন নতুন ডিজাইন বাস্তবায়ন করাে ফ্যাশনে বৈচিত্র আনতে চাই।