বিশ্বব্যাপী করোনার ছোবলে অচল হয়ে পড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য। বন্ধ হয়েছে অনেক দোকানপাট এবং নষ্ট হয়েছে কর্মক্ষেত্র। তবে ই-কমার্সে আশার আলো দেখছে বগুড়ার উদ্যোক্তারা।
ঢাকা থেকে ১৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের রাজধানী বগুড়া। এ জেলায় রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহ্যবাহী পণ্য। অতীত ও বর্তমানে উৎপাদিত পণ্যের সমন্বয়ে ই-কমার্সে বিক্রির চেষ্টা করছে উদ্যোক্তারা। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছে নিজেরা এবং সমৃদ্ধ করছে অর্থনীতি।
করোনার ভয়াল থাবায় স্থবির হয়েছিল বিশ্ব। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বহু পরিবার। বন্ধ হয়েছে দোকান পাট, থেমে গেছিল ব্যবসা বাণিজ্য, এতে লাথি পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের পেটে। প্রভাব পড়েছিল উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রেও।
কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়া পরিশোধ ও পরিবারের ভরণপোষণে শুরু হয় টানাটানি। এতে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে সাময়ীক গৃহবন্দী হয় উদ্যোক্তারা। এতকিছুর পরেও থেমে যায়নি। সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ঘর থেকে ই-কমার্স শুরু করে নতুন উদ্যমে। গ্রাহকদেরও সারা মিলে আশানুরূপ। কয়েকমাস আগেও বগুড়াতে এতোটা জনপ্রিয় ছিলনা ই-কমার্স। দোকানে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা ছিল যাদের অভ্যাস, তাদেরকে ই-কমার্সে আগ্রহী করছে করোনা। বগুড়ার কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা যায়, অর্ডার সংখ্যা ১৫% থেকে ৪৫% এ উন্নত হয়েছে এই পেন্ডামিকে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো নিজ জেলায় হওয়াতে ভরসা পাচ্ছে ক্রেতারা।
বগুড়া জেলা শহরে বসবাস করেন নাজমা লিজি। করোনাকালীন সময়ে স্বামীর ব্যাবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে তার পরিবার। সংসারের হাল ধরতে ফেসবুকে “জাবিন’স কালেকশন” নামে পেজ খুলে নিজের ডিজাইনের পোশাকের প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক সারা এবং সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে পান।
বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলা থেকে “জিহাদ গ্রামো হাট” এর উদ্যোক্তা জেবেনুর নাহার জ্যোতি কাজ করেন সরিষার তেল, গুড়ের চিনি, কুমড়ো বড়িসহ বেশ কিছু পন্য নিয়ে। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অর্ডার নেন। জেলা শহরে এসে ডেলিভারি দিতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। সকল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন দূর্বার গতিতে।
১৯৯৭ সাল থেকে সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ কুরুশের কাজ করলেও স্বপ্ন ছিল, বগুড়া শহরে রেষ্টুরেন্ট চালু করা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ২০১৮ সালে রেষ্টুরেন্ট চালু করেন ‘ইয়াম ইয়াম ট্রি’ নামে। করোনার ছোবলে রেষ্টুরেন্টটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। স্বামী মশিউর রহমান নাফিজের সাথে মিলে বাসায় রান্না করা খাবার ডেলিভারি দেন বগুড়া শহরে।
২০১৬ সালে বগুড়া থেকে যাত্রা শুরু করে ‘সোর্স অফ প্রোডাক্ট’। স্বপ্ন ছিল অনলাইন কেনা কাটায় মানুষকে উদুদ্ধ করা। দীর্ঘ ৪ বছরের সারাদেশে পরিচিত ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়ায় এবং ঢকায় শোরুম রয়েছে। সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি সারাদেশে হলেও ঢাকা এবং বড় শহর কেন্দ্রীক ছিল অর্ডার। করোনার আগে বগুড়ার অধিকাংশ ক্রেতারা ওয়েবসাইট থেকে পন্য বাছাই করলেও শোরুমে এসেছে কেনাকাটা করেছে। তবে লকডাউন শুরু হলে অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেই ধারা অব্যাহত এখনো আছে।
বগুড়া চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি, মোঃ মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, বর্তমানে এফ-কমার্সের প্রতি ঝুঁকেছে ক্রেতা ও বিক্রেতারা। গ্রাম এবং শহর মিলিয়ে বগুড়া জেলায় শত শত এফ-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। নিজেদের ভালো লাগা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দই, পোশাক, হোমমেড খাবার, হাতে তৈরি গয়না, কৃষিপন্য, রেডি টু কুক মাছ, মাংস সহ বিভিন্ন পণ্য ও সামগ্রী নিয়ে কাজ করছে উদ্যোক্তারা। যা আমাদের জিডিপি তে ভূমিকা রাখবে।
নাজমা, রাজিয়া, জেবেনুর নাহার এর মত বগুড়ার উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, “ওমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)” তাদের কাজের গতি বাড়িয়েছে। করোনাকালীন সময়ে মানুষ যখন উদ্বেগের মধ্যে দিন পার করছে সেই সময়ে তারা উই’তে পেয়েছে নতুন উদ্যোম, পাশাপাশি ই-কমার্স নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট পড়ে এবং বিনামূল্যে ট্রেনিং গ্রহণের করে নিজেদেরকে আরো দক্ষ করেছে, নিজেদের ব্র্যান্ডিং ডেভেলপ করেছে, হতাশা মুক্ত ও আত্মবিশ্বাসী ই-কমার্সে আশার আলো দেখছে বগুড়ার উদ্যোক্তারা।