বেশিরভাগ মানুষই জীবনে কোনও না কোনও দিক দিয়ে সফল হতে চায়। আর উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তো এটা আরও বেশি সত্যি। একটি ব্যবসা শুরু করার সময়েই একজন উদ্যোক্তা কিছু লক্ষ্য ঠিক করেন, যেমন তাঁর ব্যবসা থেকে কত আয় হবে, মানুষের কাছে তাঁর ব্র্যান্ড কতটা পরিচিত হবে ইত্যাদি। তেমনি একজন নারী উদ্যোক্তার নাম নাশিদ নিকিতা । ৮ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান “কাব্য কন্যা” । নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। এমন একজন নবীন উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প আজ তুলে ধরা হচ্ছে।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর অধ্যায় জানতে চাই।
নাশিদ নিকিতা: ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতে অনেক ভালোবাসি, স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চান্স পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই বিবিএ, এমবিএ শেষ করি। অন্য আর দশ জনের মতো আমারও ইচ্ছা থাকে বড় কোনও কোম্পানিতে চাকরি করার। শিক্ষা জীবন শেষ করার ২ দিনের মধ্যেই চাকরি পেয়ে যাই বাংলাদেশের টপ টেলিকম কোম্পানিতে। সেখানে ১ বছর চাকরি করার পর জয়েন করি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটা ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিতে। এখনো সেখানেই কর্মরত আছি ৩ বছর ধরে। চাকরির কাজের ব্যস্ততায় অন্য কোনও দিকে সময় দেওয়ার কথা আমরা কেউই কখনও চিন্তা করতে পারিনা। “নিজের জন্য, নিজের আলাদা পরিচয়ের জন্য কিছু একটা করতে হবে” – এই ভাবনা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ভেবে দেখলাম এমন কিছু করবো যেন আমি গর্বের সাথে বলতে পারি এটা আমার নিজের কাজ , আমি এর স্বত্তাধিকারী ।
এভাবেই আস্তে আস্তে পরিকল্পনা করে, প্রোডাক্ট নির্বাচন করে ৮০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শাড়ী তৈরি করাই এবং নিজেই ব্র্যান্ডিং করি, ফটোশুট করি। এভাবেই আমার “কাব্য কন্যা”র যাত্রা শুরু হয় । চাকরি করে শাড়ীর অর্ডার নেওয়া, প্যাকেজিং, ডেলিভারি এসব সামলানো বেশ কষ্টের কিন্তু নিজের আলাদা পরিচয় পাওয়ার লোভে এই কষ্টের দিকে আর তাকাইনি।আমার পরিবারকেও সবসময়য় সব কাজে সাথে পেয়েছি। মাত্র সাড়ে ৩ মাসে আমি ৫,৯১,৫০০ টাকার শাড়ী সেল করতে সক্ষম হই। একদম যেন রুপকথার গল্পের মতো আমার জীবন পরিবর্তন হয়ে যায় । তবে হ্যা এর জন্য আমাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। হতাশ না হয়ে, লেগে থেকেছি নিজের স্বপ্ন পুরনের জন্য ।
টেকজুমঃ পেশাদারিত্বের জন্য ক্যারিয়ারে ই-কমার্স বিজনেসকেই কেন পছন্দ হলো?
নাশিদ নিকিতা : এখন অনলাইনের যুগ, আর আমি বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ড এর স্টুডেন্ট ছিলাম প্রথম থেকে সাথে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, অনলাইন এই ব্যপার গুলোতে বেশ ভালো দক্ষতা ছিল ইউনিভার্সিটিতে পরার সময় থেকেই. একারনেই আমার মনে হয়েছে অনলাইন বিজনেস, মার্কেটিং, এগুলা আমার জায়গা। আমি লেগে থাকলে, ভাল ভাবে মনের মতো করে কাজ করতে পারবো। এজন্যই ই-কমার্সকে বেছে নিয়েছি ।
টেকজুমঃ “কাব্য কন্যা”কে অদূর ভবিষ্যতে কতোটা সফল দেখতে চান?
নাশিদ নিকিতা : আমি আমার “কাব্য কন্যা”কে একটা ব্র্যান্ড হিসাবে দেখতে চাই। সবাই যেন সুন্দর আর মানসম্পন্ন শাড়ীর জন্য “কাব্য কন্যা”কে বেছে নেয় ও ভরসা করতে পারে এটাই আমার স্বপ্ন। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যেন একইভাবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয় ।
টেকজুমঃ আপনার উদ্যোক্তা জীবনে উই এর অবদান কেমন উপলব্ধি করেন?
নাশিদ নিকিতা : আমার কাছে মনে হয়, উই- উদ্যোক্তা গড়ার একটা বিশাল প্লাটফর্ম। করোনাকালীন সময়ে উই যেভাবে সবাইকে স্বাবলম্বী করেছে সেটা সত্যিই উধাহরণ হয়ে থাকবে। উই এর রাজিব স্যার আর নিশা আপু দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তাদের জন্য। আমার প্রথম শাড়ীর অর্ডার শুরু হয় উই থেকে এবং অর্ডার এখনও চলছে। প্রতিদিনই উই থেকে অনেক অর্ডার আসে সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমার উদ্যোক্তা জীবনে উই এর ভুমিকা কতোটা বেশি। এই উই থেকেই আমাকে সবাই আলাদাভবে চিনছে, ভালোবাসা দিচ্ছে, নানা ভাবে সাপোর্ট করে যাচ্ছে । উই এর জন্যই নারীরা আজকে অনেক এগিয়ে গেছে, নতুন ভাবে তাদের শুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারছে। ধন্যবাদ “উই”কে।
টেকজুমঃ ধন্যবাদ, আপনার “কাব্য কন্যা”র জন্য দোয়া ও শুভকামনা।
নাশিদ নিকিতা : টেকজুম কেও অসংখ্য ধন্যবাদ, আমার জন্য দোয়া করবেন