দ্রুতগতীর ইন্টারনেট, মোবাইল ও কম্পিউটার সহজলভ্য হওয়ায় এ বছরের এপ্রিল থেকে জেলা পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী দেশি পণ্যের ই-কমার্স। মূলত প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের লকডাউন থেকে শুরু হয়েছে দেশি পণ্যের ই-কমার্সের অগ্রগতি।
কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে মানুষের জীবনযাত্রার মান সহজ ও উন্নত হতে শুরু করেছে। একটা সময় শুধু গণনা আর যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার হলেও বর্তমানে প্রায় মানবজীবনের প্রতিটি শাখায় ভূমিকা রাখছে। যোগাযোগ, বিনোদন, লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্য সহ সর্বত্র বিস্তার রয়েছে কম্পিউটার ও ইন্টানেটের।
ই-কমার্স ধারণাটি অনেক পুরাতন হলেও পরিচিতি পায় ১৯৯১ সালের দিকে। ২০০০ সালে দিকে পশ্চিমা বিশ্বে এবং ধাপেধাপে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দেশে নব্বই দশকের শেষ ভাগে ই-কমার্সের সূচনা হলেও বিগত ৫ বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ই-ক্যাবের মতে ২০১৬ সালে ই-কমার্সে লেনদেন হয় ৫৬০ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। দেশি পণ্যের ই-কমার্স সম্পূর্ণ নতুন এবং ফেসুবক ভিত্তিক হওয়ায় এর বাজার সম্পর্কে কারো কাছে নেই সঠিক পরিসংখ্যান ।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ই-ক্যাব ও সার্চ ইংলিশ এর প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদের নেতৃত্বে দেশি পণ্যের ই-কমার্স প্রসারে কাজ শুরু করে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে উইমেন্স ভলান্টিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন অডিটরিয়াম হলে “উই কালার পেস্ট ২০২০” দিনব্যাপী দেশি পণ্যে মেলা করা হয়। মেলায় শাড়ী, গয়না, পিঠা সহ নগদ বিক্রি ও অর্ডার মিলে প্রায় ৬ লাখ টাকা লেনদেন করেছে দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। এরপর থেকে বাড়তে থাকে দেশি পণ্যের লেনদেন। ধারণা করা হয় বর্তমানে প্রতিদিন দেশি পণ্যের লেনদেন ছাড়িয়ে যায় কোটি টাকা ।
করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সামগ্রিক অর্থনীতি। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দোকানে গিয়ে কেনাকাটার পরিবর্তে অনলাইন কেনাকাটায় নির্ভর হয় ক্রেতারা। আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশি পণ্যে অর্ডার ও ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। পরিবারের সদস্যদের চাকরি হারিয়ে বা বেতন বন্ধ হয়ে অচল হয়ে পড়ে অনেক পরিবার। উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে অনেকে বেছে নেয় দেশি পণ্যের ই-কমার্স। এ ধাক্কায় গ্রাম, উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে দেশি পণ্যের ই-কমার্স কে পেশা হিসেবে নিয়ে বর্তমানে এর বিশাল সম্ভাবনা দেখছে উদ্যোক্তারা। তাদের মতে জেলা পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী দেশি পণ্যের ই-কমার্স। দিনে দিনে বাড়ছে নতুন নতুন ক্রেতা ও অর্ডার। বাড়ছে সেবার পরিধিও।
কয়েকজন উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে আঞ্চলিক পণ্য নিয়ে লেখালেখির ফলে বেড়েছে ক্রেতাদের আগ্রহ। এক জেলার পণ্য সম্পর্কে জেনে অন্য জেলা থেকে অর্ডার করছে, এডভান্স পেমেন্ট করছে,পার্সেল ও সেবা পেয়েও সন্তুষ্ট হচ্ছে ক্রেতারা।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে টাংগাইলের শাড়ি, থ্রিপিছ ও হাতের কাজের পোশাক নিয়ে কাজ করছেন পপি সরকার। তার উদ্যোগের নাম ’ইপ্পি শপিং’। তিনি টেকজুম কে বলেন- জেলা পর্যায় থেকে দেশী পণ্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি, ই-কমার্সের কল্যাণে যে কোন জায়গা থেকে সারাদেশে ডেলিভারি দিতে পারতেছি। দেশী পণ্যের তাঁতী বা কর্মী সহ সবার অবস্থার উন্নতি হয়েছে ও হচ্ছে। দিন বদলের চেষ্টা শুরু হোক যেখানে আছি সেখান থেকেই, হতে পারে জেলা বা উপজেলা।
’কটন লাভার,স’ এর উদ্যোক্তা সুবর্না চক্রবতী কাজ করেন দিনাজপুর থেকে। বিক্রি করেন মেয়েদের পোশাক। তিনি বলেন- দেশি পণ্যের ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার কিছুদিন পর শুরু হয় কোভিড ১৯। তাই ঢাকা থেকে ব্যবসা শুরু করেও নিজ জেলা দিনাজপুরে চলে আসতে হয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটার চাহিদা অনেক বেশী। ক্রেতা যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার করে অর্ডার দেয় তাই যেকোন জায়গা থেকে অর্ডার ও ডেলিভারি করা যায়। সে তুলনায় জেলা বা উপজেলায় বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় পণ্য ডেলিভারিতে কুরিয়ার অফিস গুলোও আন্তরিক ভাবে সাপোর্ট দেয়।
রাজশাহী থেকে কাজ করেন কাঠমুকুটের ঐশী তাবাসসুম। কাজ করেন নিজ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য রাজশাহী সিল্ক নিয়ে। তিনি বলেন অল্প পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করে রাজশাহীর পণ্য ছড়িয়ে দিতে পারছি সর্বত্রে। গ্রাহকদের পছন্দের চাহিদা মেটাতে পারছি। অর্ডার, পেমেন্ট, পার্সেল ট্র্যাকিং সহ সবকিছু অনলাইনে হওয়ায় জেলা থেকেও সকল সুবিধা ভোগ করতে পারছি।
শেরপুরের একজন কুরিয়ারের ব্র্যাঞ্চ ম্যানাজারের কথা বলে জানা যায়, ই-কমার্স ও দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের সাধ্যমতো সহযোগীতা করার চেষ্টা করেন। নিজ জেলার পণ্য অন্য জেলার মানুষের কাছে পৌছে দিতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, ক্যাশ অন ডেলিভারির পেমেন্ট দ্রুত উদ্যোক্তার কাছে পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করি। দিন দিন বাড়ছে উদ্যোক্তা ও অর্ডার সংখ্যা।
ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, জেলা শহর গুলোতে ডেলিভারির দিকে অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। তাই এদিকে অর্ডার বাড়ছে।