সাইবার ক্রাইম একটা বাউন্ডারিলেস (সীমাহীন) ক্রাইম। ইন্টারনেট দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন নারীরা। আর এসব নারীর বেশিরভাগের বয়স ১৪ থেকে ২৪ বছর। তাই দেশের নারীদের সাইবার ওয়ার্ল্ডে নিরাপদ রাখতে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন’ ইউনিট চালু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ ইউনিটের উদ্বোধনকালে আইজিপি এসব কথা বলেন।
পুলিশ প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে টেকনোলজির দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ১১ কোটি মানুষ সেলফোন ব্যবহার করে। ৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জাতিসংঘের একটি জরিপে দেখা যায় বিশ্বে তিন চতুর্থাংশ নারী হয়রানির শিকার হন। সাইবার অপরাধের শিকার ৬৮ শতাংশই নারী। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা যেভাবে আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন সমস্যারও সৃষ্টি করছে। সেসব সমস্যা মোকাবিলায় পুলিশের এই সেবা।
আইজিপি বলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ডে অপরাধীদের সবচেয়ে বড় সুবিধা নাম-পরিচয় ও দেশ গোপন রেখে নারীদেরকে তারা হয়রানি করতে পারে। এটি নারীর প্রতি ডিজিটাল হয়রানির নতুন রূপ। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী একই চিত্র। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নারী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, ফেসবুক, ফেক আইডি খুলে, অনলাইন পোর্টাল খুলে, ব্লগে মিথ্যা প্রচারণা ও মানুষের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়৷
দেশে সাইবার অপরাধ দমনের জন্য অনেক আইন রয়েছে। এর মধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পর্নোগ্রাফি অ্যাক্ট, টেলিকমিউনিকেশন কন্ট্রোল অ্যাক্ট, আইসিটি অ্যাক্ট। সাইবার ওয়ার্ল্ডকে নিরাপদ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এসব আইন প্রচলন করেছে। এই আইনগুলোতে ৬ হাজার ৯৯টি মামলা হয়েছে, যার অধিকাংশ ভিকটিম নারী।
বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেনের সব অফিসারই হবেন নারী। যারা কল রিসিভ করবেন, পরামর্শ দেবেন, সহায়তা করবেন, তদন্ত করবেন তারা সবাই নারী কর্মকর্তা। ৯৯৯ থেকেও পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন সেবা পাওয়া যাবে জানিয়ে আইজিপি বলেন, দেশের সব স্থান থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিনামূল্যে এই সেবা নারীরা গ্রহণ করতে পারবেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ডে আমরা দীপ্তভাবে পদচারণা করবো; কিন্তু সাইবার ওয়ার্ল্ডে যে ঝুঁকি আছে সে বিষয়েও প্রত্যেককে সচেতন হওয়া উচিত। অনেক সময় নিজের অজান্তেই সাইবার ওয়ার্ল্ডে হয়রানির শিকার হন সেটাকে আমরা বলি অনিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার। আমরা চাই সবাই নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করুক। সেফটি ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। এরপরেও যদি কোনো ঝামেলা হয়ে যায় তাহলে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন নারীদের সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, সাদাত হোসেন নামের একটি ছেলে, যার বাড়ি নড়াইলে। এই ছেলেটি একটি গ্রুপ তৈরি করেছিল ‘সাইবার টিমস’ নামে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারীদের এই গ্রুপের মাধ্যমে সহায়তা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আমাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগে সে সাইবার বুলিংয়ের আটটি সমস্যার সমাধান করে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পুলিশ তাকে সহায়তা করে সাইবার বুলিংয়ে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে। ছেলেটি আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করছে। আমরা চাই সাদাত হোসেনের মতো সারাদেশে এমন গ্রুপ তৈরি হোক। যারা সাইবার বুলিং নিয়ে কাজ করবে। তাদেরকে সমস্ত সহায়তা দেবে পুলিশ। সাইবার ওয়ার্ল্ডে নারী থেকে শুরু করে শিশুসহ সবার জন্য নিরাপদ করবো। এই সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
যেভাবে কাজ করবে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন’
‘Police Cyber Support for Women’ নামে ফেসবুক পেজে, ইমেইল: cybersupport.women@police.gov.bd ও হটলাইন মোবাইল নম্বর: ০১৩২০০০০৮৮৮ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবেন নারীরা।
উল্লিখিত যোগাযোগ মাধ্যমে যে নারীরা সাইবার বুলিং, আইডি হ্যাক, স্পর্শকাতর তথ্য-ছবি- ভিডিও প্রকাশ, সাইবার স্পেসে যৌন হয়রানি ইত্যাদি অপরাধের শিকার হচ্ছেন, তারা এখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে ভিকটিমের তথ্য গোপন রেখে প্রয়োজনীয় সেবা ও আইনি সহায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি নিরাপদ সাইবার স্পেস তৈরিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।