নারী উদ্যোক্তাদের জনপ্রিয় ফেসবুক প্লাটফর্ম উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপের কল্যাণে অনলাইনে দেশীয় মাছ বিক্রি করে লাখপতি হয়েছেন ‘ইশিনা গ্রোসারী’ এর স্বত্বাধিকারী নারী উদ্যোক্তা মাহবুব আরা শিউলি।
এফ-কমার্সের এই প্লাটফর্মটিতে সুদূর নাটোর চলন বিল থেকে দেশে হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্যবাহী ছোট-বড় সব ধরনের তাজা মাছ ধরে ঢাকায় এনে বিক্রি করে লাখপতি হন সংগ্রামী এই নারী উদ্যোক্তা।
‘ইশিনা গ্রোসারী’ সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক প্লাটফর্ম। এটি শিউলির এক স্বপ্নের নাম। এখানে তিনি দেশের হারিয়ে যাওয়া মাছগুলো সুলভ মূল্যে বিক্রি করে থাকেন।
উদ্যোক্তার হওয়ার শুরু দিকের কথা জানাতে চাইলে শিউলি জানান, হাজব্যান্ড মারা যাওয়ার পর দুই বছর শুধু দিশেহারা হয়ে খুঁজে বেরিয়েছি কি করব। কি করলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবো। এক ছোট বোনের সহায়তায় উইতে এড হই। এখানে শুধুমাত্র শেখা না, হাতে-কলমে অর্জনও করা সম্ভব। উইয়ের জন্য বিশেষ করে রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শ মোতাবেক লেখাপড়া করে ঘরে বসেই এফ-কমার্স বিজনেস নিয়ে আমি আজ লাখপতি। বর্তমানে আমার বিক্রি দুই লক্ষ টাকার বেশি।
‘ইশিনা গ্রোসারীতে কি কি মাছ পাওয়া যায় জানতে চাইলে শিউলি বলেন, দেশে যে মাছগুলো প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে সেগুলো আমার ইশিনা গ্রোসারীতে পাওয়া যাবে। আমি সরাসরি নাটোরের হালতি বিল, চলন বিল, পাটুল বিল থেকে তাজা মাছ ধরে আনছি। এখানে পাওয়া যায় না এমন কোন মাছ নাই। সবরকমের ছোট ও বড় মাছ যেমন, রুই কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, চিতল, বোয়াল, শোল, বড়বাইন, আইড়, রিঠা, পাবদা, কাচকি, বাঁশপাতা, কাজুলি, বৌরাণী, গুড়কৈ, দেশীকৈ, কৈ, শিং, মাগুর, পাতাসি, চিংড়ি, টাকি, রাইকোর, ভাঙ্গন, কাইকলা, খলশে সবরকমের দেশী মাছের সমাহার রয়েছে ইশিনা গ্রোসারীতে।
‘ইশিনা গ্রোসারী’র বিশেষত্ব সম্পর্কে শিউলি জানান, আমি নিজে এই মাছগুলো সরাসরি বিল থেকে সংগ্রহ করে প্রসেসিং করে ঢাকায় নিয়ে আসি। আমরা সবাই জানি বিলের মিঠা পানির মাছ খেতে ভারি মজা এবং স্বাদে অতুলনীয়। সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত ও ভেজালমুক্ত। তাই যারা এ মাছ একবার কিনে খায় তারা দ্বিতীয়বার নিতে চায়। এছাড়া এই শীতের শুরুতে একদম টাটকা শাক-সবজিরও অনেক অর্ডার আসছে। রেডি টু কুক প্রসেসে তরিতরকারিও প্যাক করে দেই আমার ইশিনা গ্রোসারীতে।
আপনার অনলাইনের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের বিশেষ কোন সেবা দেন কিনা জানতে চাইলে শিউলি জানান, নগরের এই যান্ত্রিক জীবনে প্রায় প্রত্যেকজন মানুষই চাকরি, সংসার, ব্যবসা নিয়ে প্রচণ্ড রকমের ব্যস্ত সময় কাটান। বিলের সুস্বাদু ছোট মাছগুলো খেতে খুব ইচ্ছে হলেও শুধু কাটা আর ধোওয়ার সময়ের অভাবে অধিকাংশ মানুষই সেগুলো খেতে পারেন না। অনেকে আবার খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন। শহুরে মানুষের এই অসুবিধার কথা ভেবেই আমার ‘ইশিনা গ্রোসারী’র পক্ষ থেকে মাছগুলো কেটে, ধুইয়ে পরিষ্কার করে রান্নার উপযোগী করে ‘রেডি টু কুক প্রসেসে’ ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
ইশিনা গ্রোসারী নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি জানতে চাইলে তিনি জানান, মাছের বাজারে গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অপচয় রোধ করতে আমরা কাজ করছি। সবাই আঞ্চলিক মাছ গুলো চিনবে, স্বাদ নিতে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে হাতের নাগালে পাবে, আমাদের সাজেশন করা ম্যানু গুলো সহায়ক হবে তাদের খাবারে। ঝামেলা বিহীন মাছ কেনাকাটায় পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকবে ইশিনা গ্রোসারীতে । চলন বিলের ফরমালিনমুক্ত মাছ প্রতিটি বাড়ির খাবার টেবিলে পৌঁছে দেওয়া আমার স্বপ্ন।
শিউলি জানান, আমার উইতে এখন মাত্র সাড়ে তিন মাস চলছে। আর ‘ইশিনা গ্রোসারী’র পথচলার বয়স মাত্র দেড় মাসের। এরই মধ্যে আমি সাড়ে চারমণের মতো ছোট-বড় মাছ, এক মণের মতো দেশি মুরগি, পনেরো কেজির মতো হাঁস, রাজহাঁস, দেশী হাঁস, মুরগীর ডিম প্রায় বিশ ডজ্জনের মতো অর্ডার কমপ্লিট করেছি।
শিউলি তার এই লাখপতি হওয়ার পুরো কৃতিত্ব দিতে চান উই গ্রুপকে। আমি শুধু শেখার জন্য সময় দিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু এর বিপরীতে পাওয়া সাফল্য আমার কাছে অতুলনীয়। উইয়ের সকল মেম্বার ও এডমিন প্যানেলে আস্থা অর্জন করে দেশি পণ্যের পরিচিত উদ্যোক্তারদের একজন হতে পারা। বিশেষ করে রাজিব আহমেদ স্যারকে। উইয়ের জন্য বিশেষ করে রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শ মোতাবেক লেখাপড়া করে ঘরে বসেই এফ-কমার্স বিজনেস নিয়ে আমি আজ লাখপতি। ধন্যবাদ রাজিব স্যার ও নিশা আপুকে। উনাদের তৈরি উইয়ের মতো এমন প্ল্যাটফর্ম আছে বলেই কোভিড প্যানডামিক সিচুয়েশনেও আমরা সাহসী নাবিকের মতো চলতে পেরেছি।