বর্তমান সরকারের ইশতেহার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হওয়ায় দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পৌছেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা। এরফলে গ্রাম থেকেও প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোগ গ্রহণ করছে উদ্যোক্তারা। ইন্টারনেট আর ফেসবুকের কল্যাণে দেশের প্রতিটি প্রান্তে তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে ই-কমার্স ক্রেতা-বিক্রেতা। উচ্চমাধ্যমিকের পর বিয়ে হয়ে যায় চুয়াডাঙ্গার পাপিয়া সুলতানার। হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে পাপিয়ার জীবন। নিজের কাছে থাকা মাত্র ৯০০ টাকা দিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় উদ্যোগ নেয় অনলাইনে দেশি পণ্য বিক্রি করার। সংগ্রামী পাপিয়ার উদ্যোক্তা জীবন সম্পর্কে জানতে টেকজুম থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার : আপনার সম্পর্কে বলুন।
পাপিয়া : চুয়াডাঙ্গা জেলার চিৎলায় গ্রামের অন্য বাচ্চাদের মত মাঠে ঘাটে পুকুরে দাপাদাপি করে শৈশব কেটেছে। বড় হয়েছি মা, খালা, চাচী, দাদীর হাতে তৈরি মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, যাতায় ভাঙ্গা ডাল, ভাত খেয়ে। বাড়ি ভর্তি হাস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন করে। বাড়ির বড় কন্যা সুবাদে আমাকে কখনো কষ্ট করতে হয়নি। ক্রেতাদের ভেজাল পণ্য থেকে মুক্তি দিতে খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তায় অনলাইনে কাজ শুরু করেছি।
দেলোয়ার : আপনার শিক্ষা ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতে চাই।
পাপিয়া : আমার শিক্ষার হাতেখড়ি গ্রামের স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিকের পর বিয়ে হয়। মা হয়ে যাওয়ায় আগ্রহ থাকা সত্বেও লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। সন্তান ও সংসার নিয়ে ভালই চলছিল। হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে জীবন। নিজের কাছে থাকা মাত্র ৯০০ টাকা দিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করি। শুরু টা কোনরকম হলেও হতাশা, অভাব আর কষ্ট ঘিরে ধরছিল। ঠিক তখনি ফেসবুকে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কে পেয়েছি।
দেলোয়ার : আপনার উদ্যোগের নাম কি এবং কি পণ্য বিক্রি করেন?
পাপিয়া : ভেজালের ভিড়ে খাঁটি পণ্য নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে তৈরি করেছি খাঁটির খোঁজে (https://www.facebook.com/munnifood/) নামে ফেসবুক পেজ। চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত গমের লাল আটা, আখের লাল চিনি, মাষকলাই ডাল কুমড়া বড়ি, যাতায় ভাংগানো মসুর ডাল, মাষকলাইয়ের ডাল, খইয়ের মুড়কি, খাঁটি সরিষা তেল, খাঁটি ঘি, ঢেঁকি ছাটা চাউলের গুড়া, মরিচ, হলুদ ও ধনিয়া গুড়া বিক্রি করি আমার পেজে।
দেলোয়ার : আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কি ছিল?
পাপিয়া : আমি চুয়াডাঙ্গায় থেকে কাজ করি। আমার কাজ নিয়ে খুব কাছের মানুষ হাসাহাসি করতো, কটুকথা বলতো। শুরুতে প্যাকেজিং এ দক্ষতা না থাকায় প্যাকেট ছিড়ে আটা চিনি ডাল এক হয়ে যেত কুরিয়ার জটিলতার কারণে। জীবিকার তাগিদে অপশন ছিল না থেমে যাওয়ার। কুরিয়ার জটিলতায় অর্ডার পেয়েও খাঁটি সরিষার তেল ডেলিভারি দিতে পারি না।
দেলোয়ার : আপনার উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন কি?
পাপিয়া : আমার স্বপ্ন আকাশ ছোয়া। সকলের জন্য খাঁটি পণ্য নিশ্চিত করতে পারা এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে ভোক্তার দৌরগোড়ায় পৌছে দিয়ে গর্ব হতে চাই চুয়াডাঙ্গার। মুড়কি, যাতা়য় ভাঙ্গা ডাল, আস্ত মসুর ডাল, মাষকলাই ডালের বড়ি সহ যেসব খাবার বিলপ্তি পথে চলে গেছে তা টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে অন্যের কর্মসংস্থান করতে চাই। আমার ইচ্ছা আছে দেশের বাহিরে রপ্তানি করা।
দেলোয়ার : আপনার ক্যারিয়ারে উই অবদান রাখছে কিভাবে?
পাপিয়া : আমার জীবন উইময়। আমার ক্রেতাদের ৯০% আসে উই থেকে, তাই সংসারের কাজের ফাকে সব সময় থাকতে হয়। উইয়ের প্রায় সকল ক্রেতা রিপিটেড। হতাশা জীবনের একমাত্র আশার আলো ছিল উই। এমনও সময় গেছে সংসার ও বাচ্চার পিছনে খরচ করতে গিয়ে কাঁচামাল কেনার টাকা শেষ হয়ে গেছে। উইতে এসে পোস্ট কমেন্টস করে অর্ডার পেয়ে যাই। রাজিব আহমেদ স্যারের পোস্ট গুলো শক্তি সঞ্চয় করে ঘুরে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমার জীবনে স্যারের অবদান কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করতে পারবো না।