শীতের ছুটি হলে বন্ধু এসো আমার বাড়ি সেথায় তুমি দেখতে পাবে খেজুর গাছের সারি। গ্রাম বাংলায় শীতকাল শুরু হয় অনেক সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে। এ সময়ে কৃষকের ঘরে আসে নতুন ধান। প্রকৃতিতে আসে পরিবর্তন। চারিদিকে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। আর এসময়ে পাওয়া যায় প্রকৃতির অকৃপণ দান হিসেবে খেজুরের রস।
এই খেজুরের রস ও গুড় আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে বহন করে। অতীতে এই গুড়ের ছিল অনেক জৌলুস। কিন্তু দিনকে দিন এই জৌলুসতা হারাতে থাকে। চিনির দাম কমায় এই গুড়ে চিনি মেশানো, বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানোর কারনে মানুষ হারিয়ে ফেলে আসল খেজুর গুড়ের স্বাদ। ভেজালে ভয় পেয়ে অনেকেই আর খেজুর গুড় না খেয়েই পার করেছেন শীত কাল।
সবার ছোট বেলায় খেজুর রস ও এর গুড়ের সাথে কিছু স্মৃতি অবশ্যই আছে। বিশেষ করে শীতের সময় যারা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছে সবার স্মৃতির সাথেই কম বেশি খেজুর গুড় আছে। আর এই কারনেই খেজুর গুড় আমাদের দেশে ঐতিহ্যবাহী।
ভৌগলিক কারনে ফরিদপুর, যশোর, মাগুড়া,নাটোর, রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর পরিমান খেজুর গাছ জন্মে। রাস্তার ধারে, ফসলের জমির আইলে এমনিতেই জন্ম নেয় এই গাছে। এই গাছ গুলো ৩-৪ বছর বয়সে রস দেওয়ার উপযোগি হয়।
শীতে বারান্দার রোদে বসে খেজুর রস দিয়ে মুড়ি খাওয়া বা ঝোলা গুড় দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার মজা বলে বোঝানোর মত না।
কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে অসাধু গাছি, অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়াদের দৌড়াত্বে খেজুর গুড় হারায় তার উজ্জলতর ঐতিহ্য। অসাধু গাছিরা বেশি মুনাফার লোভে খেজুর গাছকে বেশি করে কেটে রস নামায়, বেশি সময় মানে শীত চলে গেলও রস আহোরনের চেষ্টার ফলে অনেক খেজুর গাছ মারা যায় বা রস দেওয়ার অনুপোযোগি হয়ে যায়। আবার ইট ভাটায় ব্যাবহারের জন্য খেজুর গাছও অনেক কমে যায়।
এর পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়িরা বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করে বিক্রয় করা বা ঝোলাগুড় সংরক্ষন করে সারা বছর পাটালি হিসেবে বিক্রয় করার কারনে আস্তে আস্তে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে।
কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এবছর অনলাইন বা ই-কমার্সের কল্যানে আবার সুদিন বা খেজুর গুড়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরতে শুরু করেছে। বিগত সময়ে গ্রামের মানুষ খেজুর গুড়ের কিছুটা আসল স্বাদ পেলেও শহরের মানুষ ছিল এ থেকে বঞ্চিত। শহরেও খেজুর গুড়ের অনেক গ্রাহক আছে যাঁরা এ গুড়ের আসল স্বাদ ও গন্ধ চিনে। আর ই-কমার্স এখানেই রেখেছে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা।
যাদের মধ্য ওমেন ই-কমার্স ফোরাম(উই) অন্যতম। মূলত এই গ্রুপের এ্যাডমিন রাজীব আহমেদ ও নাসিমা আক্তার নিশা গ্রুপে উইন্টার ওয়েভ ঘোষনা দেওয়ার পর পরই শীতের পন্য গুলো বিক্রয় বাড়তে থাকে। এর মধ্য খেজুর গুড় অন্যতম।
উই গ্রুপের উদ্যোক্তারা সরাসরি খেজুর গুড় সারা বাংলাদেশে কুরিয়ার বা অন্য মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ভালো মানের খেজুর গুড়। ভালো মানের খেজুর গুড় পেয়ে শহর বা যে এলাকায় খেজুর গুড় পাওয়া যায় না সে অঞ্চলের মানুষরাও ভরসা রাখছে উইয়ের উদ্যোক্তাদের খেজুর গুড়ে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার ক্রেতা আবির হোসেন বলেন” অনেকদিন খেজুরের গুড় খাওয়া হয়নি ভেজালের ভয়ে, কিন্তু এবার উইয়ের কল্যানে খেজুর গুড়ের আসল স্বাদ পেলাম। কারন এখানে অনেক ভালো ভালো খেজুর গুড়ের উদ্যোক্তা আছে।
একই কথা কুমিল্লা থেকে সাহানা আপুর” উইয়ের কল্যানে ভালো মানের খেজুর গুড় আবার পাওয়া যাচ্ছে এটা কম কিসে।
সর্বপরি নাটোর জেলার একজন গাছি দুলাল হোসেন(৪৫) বলেন” আমি বিগত ১০ বছর ধরে খেজুর গুড়ের সাথে সম্পৃক্ত কিন্তু এবারের মত কোন বারই আমার গুড় বাড়ী থেকেই এত বিক্রয় হয়নি। অনেক ছেলে-মেয়ে আমার বাড়ী থেকেই গুড় নিয়ে যাচ্ছে বাজারের থেকে বেশি দাম দিয়ে কারন এটা ভেজালমুক্ত।
এমনটা দেখেই আসলে বোঝা যায় উইয়ের কল্যানে গ্রাম পর্যায়েও অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তাঁরা খেজুর গুড়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। সবারই একটি মাত্র আশা আবার যেন ফিরে আসে খেজুর গুড়ের হারানো ঐতিহ্য।
লেখকঃ- নিপা সেনগুপ্তা
প্রতিষ্ঠাতা ঐতিহ্যবাহী কৃষির অমৃত স্বাদ