নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে কার না ভালো লাগে! বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চাহিদার কিংবা আকর্ষণের একটি কাজ হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
ঐশী তাবাসসুমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে । তিনি রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার বিষয়ে ডিপ্লোমাতে পড়াশোনা করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখে ও জেনে আসছেন রাজশাহী সিল্ক, মসলিন শাড়ি সম্পর্কে । ছোট থেকেই ইচ্ছে নিজে কিছু করার নিজের যার মাধ্যমে আর অনেক সাধারণ মানুষের উপকারে আসতে পারে । দেশ-বিদেশের বেশিরভাগি প্রথম জীবনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। দৃঢ় মনােবল, কঠোর অধ্যবসায় ও কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তারা বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। কাঠমুকুট প্রথম জীবনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চান তিনি ।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
ঐশী তাবাসসুম: ছোট থেকেই আমার সৃজনশীল মনোভাব। ছবি আঁকতে, ক্রাফটিং করতে ভালো লাগে। আব্বু আম্মু চাকুরীজীবি তাই ছোটো থেকেই ইচ্ছে নিজে কিছু করার। ২০১৯ সালে আমার আব্বু রোড accident এ হাত ভেঙে যায়। প্রায় ৬ মাস বেড রেস্টে ছিল। কলেজে উঠার পর নিজের খরচ ও পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে তৈরি হলো। পরিবারের মানুষদের সাপোর্টে অনলাইন বিজনেসকে বেছে নিয়ে “কাঠমুকুট” নামে ফেসবুক পেইজ খুলে অনলাইনে দেশী পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি ।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
ঐশী তাবাসসুম: আব্বু আম্মুকে ছোটো থেকেই চাকুরী করতে দেখেছি। চাকুরীর সঙ্গে পরিবারে কম সময় দেওয়া যায় ও স্বাধীনতা নেই। পাশাপাশি উদ্যোক্তা জীবন স্বাধীন। নিজের মত করে কাজ করা যায়। একজন উদ্যোক্তা সমাজের আরো ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। তাই, আমি চাকরি থেকে বিজনেসের প্রতি বেশি আগ্রহী।
টেকজুম: কি কি পণ্য বিক্রি করেন?
ঐশী তাবাসসুম: আমি প্রথমে দেশী শাড়ি হাতে তৈরি গহনা ও ক্রাফটিং দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তারপর উই গ্রুপে আসার পর রাজিব স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী নিজ জেলার বিখ্যাত পণ্য রাজশাহী সিল্ক ও মসলিন নিয়ে ফোকাস করি। বর্তমানে আমি রাজশাহী সিল্ক, মসলিন, কাস্টমাইজ ড্রেস, শাড়ি পাঞ্জাবী ও হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করছি।
টেকজুম: কাঠমুকুট কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
ঐশী তাবাসসুম: আমার স্বপ্ন কাঠমুকুট ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক ও মসলিন এগিয়ে যাবে ও অনলাইনের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলা ও বিদেশের মাটিতে আমাদের পণ্য পৌঁছে যাবে একদিন এই স্বপ্ন দেখি। ইতিমধ্যেই উই গ্রুপের মাধ্যমে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়া, দুবাইতে কয়েকবার কাঠমুকুটের পণ্য পৌঁছে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ ।রাজশাহী সিল্কের প্রচার, প্রসার ও ব্যবহার বাড়িয়ে রাজশাহী সিল্কের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে চাই। রাজশাহী সিল্ক শাড়ি প্রতিটা মেয়ের আলমারিতে একটি করে থাকে এই স্বপ্ন দেখি।
টেকজুম: নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিঃ
ঐশী তাবাসসুম: আমাদের সমাজে নারী উদ্যোক্তাদের অনেক বাঁধা ও সমস্যা। তারপরেও অনেক কিছু সামলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। ধরা যাক, আমার কথাই বলি। প্রথমত আমি একজন চলমান ছাত্রী। আমার প্রথম কাজ পড়াশুনা করে ভালোভাবে মানুষ হওয়া এবং আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা। আমি যেনো আমার আম্মুর মতোন চাকুরীর মাধ্যমে নিজের পায়ে দাড়াই। এগুলোর, মাঝে অন্য দিকে মন দিলে স্বাভাবিক ভাবে বাঁধা আসবে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমার বাবা মাও আমাকে প্রথমে বাঁধা দিয়েছে। আমি কেনো সময় নষ্ট করছি? কেনো এসব নিয়ে পরে আছি? এই সময়টা পড়াশুনায় কেনো দিচ্ছি না? এইতো গেলো পারিবারিক সমস্যা। এমন, প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও মনোবল না হারিয়ে আমি আমার সব থেকে আপনজন বাবা মায়ের কাছে যাই ও অনেক চেষ্টা করে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করি ও আমি সফল হই। তার ফলাফল এই আমি। তাই, আমি মনে করি, যতো প্রতিকূলতা আসুক না কেনো প্রতিকূলতা জয় করে উদ্যোক্তার মনোবল অটুট রেখে কাজ করে যেতে হবে।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
ঐশী তাবাসসুম: উই গ্রুপ আমার জীবন ও বিসনেসের টার্নিং পয়েন্ট। আমার উদ্যোগ শুরু করার পরের মাসে আমি উইতে জয়েন করি। উইতে জয়েন করার পর যেনো প্রাণ ফিরে পাই নতুন করে। উই দেশী পণ্যের একটি নতুন জগত। তারপর উইতে এফ কমার্স সম্পর্কে জানা, শেখা ও সেটা কাজে লাগিয়ে জয় করা। আল্লাহর রহমতে উইর মাধ্যমে রাজিব স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০০ দিন আমি লেগে থাকি। শুরু থেকেই রাজিব আহমেদ স্যার আমাকে খুব সাপোর্ট করেছেন। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর ফলে আমার পণ্য ও পরিচিতি পায়। তারপর থেকে আর আমাকে আর ফিরে তাকাতে হয় নি। এখন আমি নিজের বিসনেসের মাধ্যমে নিজের একটি পরিচয় তৈরি করতে পেরেছি ও পাশাপাশি পরিবারকে সাপোর্ট করতে পারছি। উই প্লাটফর্ম নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ সরুপ । উই প্লাটফর্ম, রাজীব স্যার ও নিশা আপুর প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ ।