প্রতিটি মানুষ একটু আলাদা হতে চান অন্যদের চেয়ে, প্রত্যেকেই সুন্দর স্বপ্ন দেখেন নিজেকে নিয়ে। নিজ উদ্যোগে কোনো কাজ শুরু করাকে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ বলে থাকি।প্রতিটি উদ্যোগের পেছনে একটি গল্প থাকে আর আমরা সেই অনুপ্রেরণার গল্প গুলোকে তুলে ধরতে চেষ্টা করি আপনাদের কাছে।
আমাদের আজকের গল্প একটু ভিন্ন। বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে তাদের দেশিপণ্য উপস্থাপনের দৃশ্য দেখে নিজ দেশের পণ্যের প্রতি টান অনুভব করা থেকে উদ্যোগের শুরু হয় জান্নাতুন নাহার লিয়ার “নৃ বাংলাদেশ” এর যাত্রা।এটি দেশিপণ্য নিয়ে কাজ করছে।জন্মসূত্রে বরিশাল কন্যা হলেও লিয়া বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে এবং পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদে।বর্তমানে তিনি ঢাকাতেই বসবাসরত।আজ আমরা জানবো লিয়ার উঠে আসার কথা।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহজাবীন রাখী।
টেকজুমঃ উদ্যোগের শুরু কিভাবে এবং কেমন ছিলো সেই গল্প?
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ ছাত্রজীবনে সবাই কমবেশি ছাত্র পড়ালেও বড় দুই ছেলেসন্তান এর পর আমি একমাত্র কন্যাসন্তান হওয়ায় বাবা একটু বেশি আদর করতেন সবসময়, ফলে দুশ্চিন্তাও বেশি ছিলো।কিন্তু ছাত্র পড়ালে নিজের মেধায় শান দেওয়া হয় এই কথা বাবাকে বোঝানো যায় নি ফলে এটি করা হয়নি আমার।সময় কাটানোর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে উইন্ডো শপিং করতে করতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট পেইজ,গ্রুপ ভিজিট করতাম।এছাড়া ছবি তুলতে ভাল লাগত,এভাবে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ইনফ্যাক্ট মোবাইল ফটোগ্রাফি করতে করতে নিজের মত কিছু করার ইচ্ছে জাগে।দেশের বাইরে যে কয়েকবার গিয়েছি, দেখেছি তারা তাদের স্থানীয় এবং দেশিপণ্যকে খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করে।আমি অনুপ্রাণিত হই এবং পরবর্তীতে আমি দেশিপণ্য নিয়ে কাজ করতে চাই।২০১৮ সালের ১৫ই জানুয়ারি “নৃ বাংলাদেশ” এর জন্ম হয়।ছাত্রজীবনে উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে চাকরিটা আর করা হয় নি।এখন আমি পুরোদস্তুর একজন উদ্যোক্তা।
টেকজুমঃ চমৎকার! কিন্তু এই উদ্যোগ ই-কমার্সেই কেন নিলেন? কি সুবিধা রয়েছে এখানে?
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ ই-কমার্সকে বেছে নিয়েছিলাম কারণ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি আগামী ১০ বছরে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এবং তা আমরা এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেকটাই প্রমাণ পেয়েছি। যেখানে অফিস আদালতসহ সব কিছুই বন্ধ সেখানে ই-কমার্স সেক্টরের কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে এই বৈশ্বিক মহামারির আমলে।তাই নিঃসন্দেহে বলতে পারি ই-কমার্স সেক্টরে সম্ভাবনার দ্বার অনেক উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর সুবিধার কথা বলতে গেলে বলতে হয় কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে সময় এবং খরচ কম লাগে,লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপদ কারণ ডকুমেন্টেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।আর ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আস্হা এবং সুসম্পর্ক সহজেই তৈরি হয়।
টেকজুমঃ দেশিপণ্য নিয়ে উদ্যোগে সফল হতে চাইলে কেমন প্রস্তুতি প্রয়োজন? উদাহরণ হিসেবে দেশি শাল নিয়ে বলতে পারেন।
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ যে কোনো কাজের আগে যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি। আর সবসময় সবার আগে কিছু করার একটা সুবিধা তো থাকেই।তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে অবশ্যই যে কোনো পণ্যের মৌসুম আসার আগে কাজ শুরু করতে হবে।শাল যেমন একটি নির্দিষ্ট মৌসুমের পোশাক।তাই আগে থেকেই এর পরিকল্পনা করতে হবে।
টেকজুমঃ কেমন স্বপ্ন দেখেন দেশিপণ্যের উদ্যোগ হিসেবে নৃ বাংলাদেশ নিয়ে?
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ আমি যখন শুরু করি, তখন দেশিপণ্য বেশিরভাগ সময় মৌসুমি পণ্য হিসেবে গণ্য হতোএখন চিত্র বদলে গেছে।নৃ বাংলাদেশ আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের জায়গা। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এটি,আমার জন্য আমার উদ্যোগ সবচেয়ে শান্তির জায়গা যেখানে আমি স্বস্তি পাই।”নৃ” শব্দের অর্থ মানুষ আর বাংলাদেশ তো অনুভূতির নাম।এ দেশের মানুষের তৈরি, দেশের মানুষের জন্য কাজ নিয়ে আমি অত্যন্ত আশাবাদী বিশেষ করে আমার দেশিপণ্যের উদ্যোগ নিয়ে।
টেকজুমঃ উদ্যোগে নানান রকম বাধা আসে।এই অন্তরায় গুলো কিভাবে প্রতিহয় করা যায়?
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ উদ্যোগের অন্তরায় প্রতিরোধ করার একমাত্র এবং সবচেয়ে সহজ উপায় সমস্যা ধরে ধরে সমাধান করা।এটি তখনই সম্ভব যখন একজন উদ্যোক্তা নিজে অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করতে পারবে এবং আত্মবিশ্বাসী হবে।
টেকজুমঃ সফল লিয়ার অনুপ্রেরণা এবং কৃতিত্ব কে এবং কেন জানতে চাই।
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ আমি সফল কিনা জানি না,এখনো অনেক পথ তো পাড়ি দেওয়া বাকি।পারিবারিক আবহাওয়াই এমন ছিল,আমার বাবা ও ভাইয়েরা ট্রেডিশনাল বিজনেসে যুক্ত।আমার মা সহ সবাই আমাকে শতভাগ সাপোর্ট করেন।এছাড়া আমার স্বামী ডাঃ সাদেক ও তার পরিবার আমাকে দুইশত ভাগ সাপোর্ট দেন সবসময়। এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে একজন অভিভাবক আছেন আমার, যার গাইডলাইন আমি সবসময় ফলো করি।ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ স্যার।স্যারকে চিনেছি বর্তমানে দেশিপণ্যের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম উই এর মাধ্যমে এবং এটি ই-ক্যাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার নিশা আপুর উদ্যোগ।
যদি কোনোদিন সফল হতে পারি, তাহলে তার শতভাগ কৃতিত্ব ওনাদের হবে অবশ্যই কারণ সবসময় প্রাপ্তি স্বীকার করতে আমার ভাল লাগে।
টেকজুমঃ লেখালেখি এবং ই-কমার্স উদ্যোগ এই দু’য়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ নিয়ে কি বলবেন?
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ লেখালেখি এবং ই-কমার্স এর মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ লিখালিখির মাধ্যমে নলেজ শেয়ারিং হয় এবং যিনি লেখেন তা ওপর লোকের আস্থা জন্মে।ট্রেডিশনাল বিজনেসে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি দেখা করার সুযোগ আছে যা ই-কমার্স এ নেই বললেই চলে।ফলে শুধু পণ্যের ছবি দিয়ে ক্রেতার সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন সম্ভব না, যা একটু গোছানো লেখার মাধ্যমে সম্ভব বলে আমি মনে করি।
টেকজুমঃ ভালো থাকবেন লিয়া। আপনার উদ্যোগের জন্য শুভকামনা রইলো।ধন্যবাদ।
জান্নাতুন নাহার লিয়াঃ ধন্যবাদ আপনাদেরকেও।