ব্যবসায়ী বাবার মেয়ে কামরুন নাহার কনা জন্ম ও বড় হওয়া টাঙ্গাইলে। ঢাকাতে পড়াশোনার জন্য থাকা ২০০১ সাল থেকে। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতীতে উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রামে তাদের বসবাস ছিল। বৈবাহিক সূত্রে বর্তমানে ঢাকায় আছে । ডাক্তার হওয়া খুবই ইচ্ছে ছিল, হতে পারে নি, ব্যাংকের চাকরির দুই দুই বার সুযোগ হয়েও করা সম্ভব হয়নি ছোট বাবু থাকার কারণে। তাই ২০১২ সাল থেকে অফলাইনে ব্যবসা শুরু করে। ২০১৮ সালের ১০ মে একটি পেইজ ওপেন করেছিল কিন্তু সেটি আর কন্টিনিউ করেনি। এই করোনার কারণে ব্যবসাটাকে আবার অনলাইনে কন্টিনিউ করার চেষ্টা করে আবার চাকুরী করার সুযোগও নেই। পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে ২০১২ সালে ঢাকা লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে । স্বাধীনভাবে কাজ করে মেধার ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর চিন্তা থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। কনার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
কনা: মূলত গতানুগতিক ধারায় আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হতে পারেনি তারপর থেকে নিজে কিছু করার অনেক ইচ্ছা ছিল, করোনাকালীন সময়ে আমার ব্যবসা একদম বন্ধ হয়ে যায়, বাসায় বসে মনে হচ্ছিলো আমার ব্যবসা অনলাইনে করতে পারলে মন্দ হত না, নিজের যদি আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে পরি তাহলে ভাল হয় ঠিক তখনি নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করি! ঠিক এই সময় একদিন আমি ফেসবুকে ব্যবহার করতে করতে উই গ্রুপের সন্ধান পাই, সেখানে হাজারও উদোক্তা। তাদের দেখে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হই। আমার টিউশনির কিছু জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম এরপর আমার এক ভাবি সে বোন ও ফ্রেন্ডের মত আমাকে সাপোর্ট করায় ১০ মে ২০১৮ আমার পেইজ খুলি Mirror _ মিরর নামে।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
কনা: চাকরী করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার, কিন্তু চাকরীতে ব্যাক্তিস্বাধীনতা কম, আবার চাকরী করলে আমি হয়ত অল্প কিছু সংখ্যক ব্যাক্তির সাথে পরিচিত হতে পারব, সেখানে আমি উদ্যোক্তা হয়ে উঠে সারাদেশেই পরিচিত হতে পারব, আমার প্রোডাক্ট ছড়াবে সারাদেশে এই ভাবনা থেকেই আমার আগানো।
টেকজুম: কি কি পণ্য বিক্রি করেন?
কনা: প্রথমে আমি বেশ কিছুদিন চিন্তা করি আমি কোন বিষয়ে দক্ষ। এই ভাবনা থেকে আমার একদিন মনে হলো আমার বাবা কাপড়ের ব্যবসায়ী, আমিও টাংগাইলের মেয়ে তাহলে আমি টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করার চিন্তা করি। এরপরে জামদানি শাড়ি, হাফ সিল্ক শাড়ি, সিল্ক,শাড়ি ও তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি।
টেকজুম: Mirror_মিরর কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
কনা: মাত্র ১৫০০০ টাকা থেকে শুরু করেছিলাম আমার স্বপ্ন , তারপর আমি উই তে রাজীব স্যারের কথা মত একটিভ থেকে সুফল পেয়েছি । বর্তমান আমার প্রোডাক্ট লাইনে আছে আমার টাঙ্গাইলের জামদানি, টাঙ্গাইলের হাফ, সিল্ক সিল্ক ও তাঁতের শাড়ি । ভবিষ্যৎ এ আমি আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের শাড়ি ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই এবং আমার প্রোডাক্ট সারাদেশ সহ বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।
টেকজুমঃ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিঃ
কনা: নারী উদ্যোক্তা মানেই চ্যালেঞ্জ, কারন আমাদের সমাজ আর যাই হোক নারী কিছু করবে সেটা ভাল ভাবে গ্রহন করে না। বিশেষ করে যারা পরিবার সামলিয়ে উদ্যোক্তা হন। আমি বিবাহিত আমার দুইটা সন্তান আছে একটা ছেলে আট বছর বয়স আরেকটা মেয়ে দের বছর। এদের সামলিয়ে কাজ করানোর জন্য চ্যালেঞ্জ।তবে আমার ক্ষেত্র পারিবারিক বাধা ছিল আমার শাশুড়ির পক্ষ থেকে।, প্রথম থেকেই আমি আমার হাজবেন্ডের সাপোর্ট পেয়েছি, বাট সামাজিক বাধা টা বেশি ছিল, কটু কথা, সমালোচনা এইগুলা যত হয়েছে তত আমার জেদ টাও বেড়েছে।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
কনা: আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান উই এর। কারন আমি প্রথমে আমার পরিবার কেও বলি নাই আমি উদ্যোক্তা হতে চাই, কিন্তু ভার্চুয়ালি অনুপ্রাণিত হয়েছি উই থেকে। উই আসলে আমাদের মত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদিনের জাদুর প্রদীপের মত কারন নিজের পরিচিতি বাড়িয়ে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরী করার মত এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছে উই। পার্সোনালি আমি উই এর প্রতি অনেক বেশি ই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ রাজিব স্যার, নিশা আপুর প্রতি। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে একটু একটু করে গড়ছি উইতে এসে । কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যাই, কিভাবে আমার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরী করব, কিভাবে পরিচিতি বাড়াব সব উই থেকেই শেখা। উই ছিল বলেই শূন্য জ্ঞান থেকে শিখতে শুরু করেছি, প্রতিনিয়তই শিখছি। উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর কারণে আজ আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে । আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি ।