হোসনেআরা খাতুন। জম্ম খাগড়াছড়িতে। তবে ছোটবেলা থেকে রয়েছে সাভারে । পড়াশোনা করেছেন বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে । চাকরির প্রতি অনীহা থেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি । পড়াশোনা শেষ করে মসলা বিক্রি করার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি মনে করেন কোন কাজই ছোট না কাজকে ভালবাসলে তবে নিজেকে সফল করা যায় ।
টেকজুম : উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
হোসনেয়ারা: নিজে কিছু করার ইচ্ছা ছিল সব সময়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম ছোটকাল থেকেই। কিন্তু চাকরি করার ইচ্ছা টা একটা সময় আমার শেষ হয়ে যাই। সকাল ৮ টা থাকে ৫ টা পর্যন্ত সময় টা বাসার বাহিরে থাকা আমার কাছে একটা সময় খারাপ লাগতে শুরু করে যখন আমি বেক্সিমকো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে ইন্টার্ন করি তখন থেকে। এই সময় টা আমার কাছে আমার পরিবার কে দেয়া টা ছিলো মূল বিষয় ছিলো। একপ্রকার চাকরির প্রতি অনীহা থেকেই আমার আমি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করি। পরিবারের অনেক জনের অনেক রকমের কথা শুনতে শুরু করি কারণ আমি বি এস সি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে ও চাকরি করতে চাইনা তাই। একটা সময় আমি আমার এক বড় আপুর মাধ্যমে উইতে জয়েন হয় দেখি নারী রা কত সুন্দর করে কাজ করে যাচ্ছেন এবং সিদ্ধান্ত নেয় আমার ও কিছু করতে হবে এবং দেখিয়ে দিতে হবে আমি বাহিরে না গিয়ে ও বাসায় বসে কাজ করতে পারি। এবং আমি একটা বিজনেস পেজ খুলি ঘরোয়া সামগ্ৰি নামে। এবং তখন থেকেই আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করি।
টেকজুম : ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
হোসনেয়ারা: একজন নারী ঘরে বসে পরিবার কে সময় দিয়ে ও সৎ উপায়ে টাকা ইনকাম করতে পারে এবং সেটা ই কমার্স করে দেখিয়েছে। এবং এখন ভিজিটার সময়ে আমরা সময় বিশ্বের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করি আর আমরা এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছু খুব সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যাই। আর সে জায়গা থেকেই আমার ই কমার্স কে বেঁচে নেয়া।
টেকজুম :কি কি পণ্য বিক্রি করেন।
হোসনেয়ারা: আমি সবসময় চিন্তা করতাম দেশের জন্য কিছু করা দেশীয় পণ্যের প্রতি ভালোলাগা টা ছিলো অনেক আগে থেকে এবং সেই ভালোলাগা থেকে আমি কাজ করা শুরু করি। তখন আমি আমার দেশের বাড়ি খাগড়াছড়ির বিখ্যাত হলুদ নিয়ে কাজ করি এবং সাথে সংযুক্ত করি বিভিন্ন ধরনের মসলা। এবং সৎ নির্ভেজাল পণ্য বিক্রি করায় আমার মূল উদ্দেশ্য যেন মানুষ টাকা দিয়ে পিওর জিনিস টা পায়। আমি এখন বাসায় তৈরি সব ধরনের দেশীয় মসলা নিয়ে কাজ করি। যেমন- হলুদ, মরিচ, ধনিয়া জিরা গুঁড়া বিভিন্ন ধরনের রেডিমিক্স মসলা যেমন- বিরিয়ানি মসলা, মাছের মসলা, মুরগির মসলা, গরম মসলা, রোস্টের মসলা ইত্যাদি।
টেকজুম : ঘরোয়া সামগ্ৰি নিয়ে কি স্বপ্ন দেখি?
হোসনেয়ারা: আমার কাজ নিয়ে এখন আমি অনেক বেশি সন্তুষ্ট। ১২০০ টাকা দিয়ে শুরু করি আমি আমার উদ্যোগ এবং আমি এই পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মসলা বিক্রি করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই আমার একটা কোম্পানি হবে এবং আমার নির্ভেজাল মসলা দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করবে।
টেকজুম : নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন?
হোসনেয়ারা: নারী কে সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে হয় সংগ্রাম করে যেতে হয় সেটা হোক ঘরে বা বাহিরে। পড়াশোনা শেষ করেছি আমি মসলা বিক্রি করি এটার জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। পরিবার, সমাজের কটু কথা সমালোচনা সবসময় শুনে এসেছি এখনো শুনি কিন্তু হার মেনে নেয়নি। আমার কাছে কোন কাজ ছোট না।
টেকজুম : উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম ( উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
হোসনেয়ারা : আজ আমি যে জায়গায় এসেছি তার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান উইয়ের। উইয়ের জন্য আজ আমি একজন উদ্যোক্তা। উই আছে বলেই আমি নিজেকে সবার কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি। আজ আমি যে মানুষটার জন্য এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি তিনি হচ্ছেন শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার। যখন উইতে জয়েন হয় তখন স্যারের একটা পোষ্ট আমার চোখে পড়ে তা হলো ” আপনি শুধু তিনমাস উইতে সময় দিন আপনার আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না” শুধু মাত্র এই কথাটার জন্য আমি উইতে এক্টিভ হতে শুরু করি এবং পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে নজর দেই। অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি স্যার আপনার প্রতি আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি উইয়ের জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপুর প্রতি। আজ নিশা আপুর জন্য আমরা এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি। উইতে শেখার শেষ নেই, এখনো উই থেকে শিখছি। আজ উই আছে বলেই ই কমার্স কি জানতে পেরেছি। উই শুধু উদ্যোক্তা তৈরি করে না একটা উদ্যোগ কে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সেটা ও শেখায়।