চাকুরীজিবী বাবার মেয়ে সানজিদা সেতু, জন্ম ও বড় হওয়া ঝিনাইদহ জেলায়। জামালপুরে স্বামীর চাকুরীর সুবাদে থাকা ২০১৯ সাল থেকে। ব্যবসা করে বড় কিছু করার খুবই ইচ্ছে ছিল বলেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। তারপর ২০১৮ সাল থেকে অফলাইনে ব্যবসা শুরু করে। ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন একটি স্বনামধন্য বেসরকারি কোম্পানীতে। নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ার লক্ষ্যে চাকরি ছেড়ে নতুন সিদ্ধান্তে পৌছেন সেতু। হাতের কাজের প্রতি ছিলো তার প্রচুর আগ্রহ, তাই চালু করেন নিজের উদ্যোগ Risha’s Touch ।যুক্ত করেন নকশি কাঁথা, নকশি বিছানার চাঁদর, হাতের কাজের জামা ইত্যাদি। কাপড়ের মান নিয়ে নিজের মধ্যে সংশয় থাকায় ২০১৯ সালে নিজস্ব সোর্সের কাপড় ডিজাইন শুরু করেন সেতু এবং নিজের নিযুক্ত কর্মীদের দিয়েই করান হাতের কাজ। স্বাধীনভাবে কাজ করে মেধার ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর চিন্তা থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। সানজিদা সেতুর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
সানজিদা সেতু: : চাকরি আমার কখনোই পছন্দ নয়, কিন্তু আব্বু আম্মুর ইচ্ছায় কাজ করতাম ভালো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে। চাকরির পাশাপাশি নিজে কিছু করার অনেক ইচ্ছা ছিল, নিজের আগ্রহেই ইন্টারনেটে পণ্য বিক্রি শুরু করেছিলাম । বেশ সাড়া পেলাম। তখন মনে হত নিজের যদি আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে পরি তাহলে ভাল হয় ঠিক তখনি নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করি! ঠিক এই সময় একদিন আমি ফেসবুকে ব্যবহার করতে করতে উই গ্রুপের সন্ধান পাই, সেখানে হাজারও উদোক্তা। তাদের দেখে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হই। এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরাদস্তুর উদ্যোক্তা। প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে শখের কাজগুলোর ছবি শেয়ার করতাম। বন্ধু-বান্ধবীরা খুব পছন্দ করতো। তারপর আমার জমানো টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট কেনা শুরু করি এরপর স্বামী ও প্রিয় কিছু ব্যাক্তি আমাকে সাপোর্ট করায় ২২ জুলাই ২০১৮ আমার পেজ খুলি Risha’s Touch নামে।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
সানজিদা সেতু: স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা ছিল ই-কমার্স ক্যারিয়ারের অন্যতম কারণ। এখন ঘরে বসে পরিবারের দেখাশোনা এবং যেকোন জায়গায় বসে ব্যবসায় সময় দিতে পারছি রাতদিন। অনেকে হয়তো শখের বশে আমরা ছোট আকারে প্রাথমিকভাবে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু একটা সময়ে ব্যবসা বাড়াতে গিয়ে তার বাজারজাতকরন এর বিষয়টা চলে আসে। তাকে কোয়ালিটিও নিশ্চিত করতে হয়। অনেকে হয়তো ঘরে বসে নানা পণ্য তৈরি করেন। কিন্তু বাজারজাত করতে গিয়ে তাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ঢাকার বাইরে যারা আমরা আছি তারা সব থাকার পর ও হয়তো সবসময় পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাই না।
ই-কমার্স এর বদৌলতে আমরা সবরকম প্রশিক্ষণ পাচ্ছি। কিভাবে উদ্যোক্তা হতে হবে, বাজারজাত করতে হবে, ব্যাংকের জন্য কাগজপত্র তৈরি করতে হবে, এসব শিখতে পারছি। ই-কমার্স এর ফলে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তাই আমি আমার ক্যারিয়ার হিসেবে ই-কমার্স কে বেছে নিয়েছি।
টেকজুম: কি কি পণ্য বিক্রি করেন।
সানজিদা সেতু: : প্রথমে আমি বেশ কিছুদিন চিন্তা করি আমি কোন বিষয়ে দক্ষ। তারপর ভাবলাম এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে আমি আমাদের দেশীয় পন্য নিয়ে কাজ শুরু করব। এরপরে আমি নিপুন হাতে আমাদের গ্রামের মেয়েদের হাতে সেলাই করা নকশিকাথা, নকশি বিছানার চাঁদর,কুশন কভার,হাতের কাজের জামা ও ব্যাগ নিয়ে কাজ শুরু করি।পাইকারী ও খুচরা বিক্রয় করছি আমার সব পন্য দেশে ও দেশের বাইরে।
টেকজুমঃ কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
সানজিদা সেতু: মাত্র ১০০০০ টাকা থেকে শুরু করেছিলাম।বর্তমানে আমার প্রোডাক্ট প্রতি মাসে বিক্রয় হচ্ছে ২-৩ লক্ষ টাকার। ভবিষ্যৎ এ আমি সারা দেশে আমার শোরুম নিতে চায় আর আমার একটা নিজস্ব ব্র্যান্ড বানাতে চাই এবং এর ভেতর দিয়ে দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রেখে সারাদেশ সহ বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।
টেকজুমঃ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিঃ
সানজিদা সেতু: বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি এই ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ, প্রাথমিক পুঁজি জোগাড় এবং বাজারজাত করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের।এই পথ চলাটা অনেক কঠিন ছিল। অনেক কষ্ট করেই সবাই আসে। তাই আমিও ভেঙে পড়ি নি। সবসময় ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেছি যেন সফলতা পাই।
তাছাড়া আমাদের সমাজ আর যাই হোক নারী কিছু করবে সেটা ভাল ভাবে গ্রহন করে না, বিশেষ করে যারা পরিবার সামলিয়ে উদ্যোক্তা হন। তবে আমার ক্ষেত্র পারিবারিক বাধা ছিল না, প্রথম থেকেই আমি পারিবারিক সাপোর্ট পেয়েছি।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
সানজিদা সেতু: দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য ঢাল স্বরূপ উই। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। উইয়ের সাথে আমার পথচলা প্রায় একবছর। উই আমাদের ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করতেও দারুণ ভাবে ভূমিকা রাখছে। নিজের পরিচিতি বাড়িয়ে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরী করার মত এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছে উই। পার্সোনালি আমি উই এর প্রতি অনেক বেশি ই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ রাজিব স্যার, নিশা আপুর প্রতি। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে একটু একটু করে গড়ছি উইতে এসে । কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যাই, কিভাবে আমার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরী করব, কিভাবে পরিচিতি বাড়াব সব উই থেকেই শেখা। উই ছিল বলেই শূন্য জ্ঞান থেকে শিখতে শুরু করেছি, প্রতিনিয়তই শিখছি। উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর কারণে আজ আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে । আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি ।