রাজস্ব আয় বাড়াতে সম্পদশালীদের সারচার্জের স্ল্যাব পুনর্গঠন করা হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। সেই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক লেনদেনে ব্যাপক কর ছাড় দেয়া হবে।
একইসঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় আনতে বাজেটে নতুন পদক্ষেপ থাকবে। শিল্প বা কারখানায় তাদের চাকরি দিলে উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট অঙ্কের কর ছাড় দেয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারধারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান কর অব্যাহতি সুবিধা পায়। আগামী বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এ টার্নওভারে ছাড় দেয়া হচ্ছে। নারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য এ সীমা এক কোটি করা হচ্ছে। অর্থাৎ বছরে এক কোটি টাকা বেচা-বিক্রিতে নারীদের কর দিতে হবে না। মূলত টেকসই উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাজেটে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, সম্পদশালীদের কাছ থেকে আগামী বাজেটে বেশি পরিমাণ কর আদায়ের ছক আঁকা হচ্ছে। এজন্য সারচার্জের স্ল্যাব কমিয়ে কর হার বাড়ানো হচ্ছে আগামী বাজেটে। যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে সারচার্জ আদায় ফলপ্রসূ নয়।
বর্তমানে সারচার্জের ৭টি স্তর আছে। নিট সম্পদের মূল্যমান ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে সারচার্জ দিতে হয় না। তবে সম্পদের মূল্যমান ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা হলে বা একাধিক মোটরগাড়ি থাকলে বা যেকোনো সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি গৃহসম্পত্তি থাকলে ১০ শতাংশ কর বা ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম সারচার্জ দিতে হয়।
সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকা, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষেত্রে সম্পদের দশমিক ১ শতাংশ অথবা আয়করের ৩০ শতাংশের বেশি যেটি হয় সেই হিসেবে সারচার্জ দিতে হয়।
আগামী বাজেটে সারচার্জে স্তর ৫টিতে নামিয়ে এনে ন্যূনতম সারচার্জ প্রথা বাতিল করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের সারচার্জ দিতে হবে না। ৩ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালীদের আয়করের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে।
সারচার্জ বা সম্পদ কর হচ্ছে এক ধরনের মাশুল। যা ব্যক্তির সম্পদের দলিল মূল্যের ওপর আদায় করা হয়। সর্বপ্রথম ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান শাসনামলে সম্পদ কর (ওয়েলথ ট্যাক্স) চালু করা হয়। সেটি স্বাধীনতার পরও অব্যাহত ছিল। ১৯৮৮ সালে সরকার স্থায়ীভাবে সারচার্জ আদায় করতে অর্থ আইনের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ১৬/এ ধারা যুক্ত করে। বর্তমানে এ ধারা অনুযায়ী সারচার্জ আদায় করা হচ্ছে। পরে নানামুখী চাপে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে তা পুনরায় সারচার্জ চালু করে।
অন্যদিকে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় আনতে বাজেটে কর ছাড় দেয়া হচ্ছে। আগামীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা অফিসে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে চাকরি দিলে নিয়োগকারী কর্তৃক্ষপ কর ছাড় পাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা দিয়েছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে মোট জনবলের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী নিয়োগ দিলে সে প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় করের ৫ শতাংশ কর ছাড় দেয়া হয়। আগামী অর্থবছরে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে একই রকম সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বছরের পুরো সময় মোট জনবলের ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে চাকরি দিলে প্রদেয় করের ৫ শতাংশ রেয়াত পাবে। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ মতে, দেশে তৃতীয় লিঙ্গের জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
এনবিআর মনে করে, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী দেশের মোট জনসংখ্যার ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত। সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে পারলে দেশের উন্নয়নে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই বাজেটে হিজড়াদের চাকরি দিলে কর ছাড় সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ পদক্ষেপের ফলে হিজড়াদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।