বর্তমানে আমরা বসবাস করছি আধুনিক বিশ্বে। লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ সহ সবকিছু সহজ করে দিয়েছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। তবে ইন্টারনেটের বিশাল অংশ জুড়ে ই-কমার্স ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের বিস্তার বেড়েই চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো শিক্ষার্থীদের ই-কমার্স সেক্টরে আগ্রহী ও দক্ষ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যুগের চাহিদা ও সম্ভাবনার সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে ই-কমার্স ক্লাব।
বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ই-কমার্স নিয়ে কোন পাঠ্যপুস্তক নেই। “ই-কমার্স” কে আলাদা বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণের কারণে বিলম্ব হলেও ”ই-কমার্স ক্লাব” শুরু করা যাবে যেকোন সময়। এতে শিক্ষার্থীরা ই-কমার্স ও সংশ্লিষ্ট সেক্টর গুলোর চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের কে দক্ষ করার সুযোগ পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অন্যান্য ক্লাব বা সংগঠন গুলোর মতই হবে ই-কমার্স ক্লাব। তবে অধিকাংশ সংগঠনের কার্যক্রম একমুখি হলেও এ ক্লাবের কার্যক্রম হবে বহুমুখী। ই-কমার্স ক্লাব থেকে উদ্যোক্তা, চাকরিজীবী, মুক্ত পেশাজীবী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি যেহেতু প্রযুক্তি নির্ভর একটি ব্যবসায়ীক ক্লাব তাই সকল সেমিষ্টার ও বিষয়ের (আগ্রহী) শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে পারবে এবং ক্যারিয়ারের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করার সুযোগ পাবে।
ক্লাব থেকে সাধারণত যে সুবিধা গুলো পাওয়া যাবে-
- জ্ঞান অর্জন : বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তে বর্তমানে ই-কমার্স সাবজেক্ট নেই। তাই ইন্টারনেটের বিভিন্ন সূত্র এবং উদ্যোক্তাদের বাস্তাব অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। তারা জানতে পারবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে কি কি বিভাগ রয়েছে এবং সে গুলোতে কাজ করতে কি কি দক্ষতা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী নিজেদের কে তৈরি করার সুযোগ পাবে।
নেটওয়ার্কিং : কমিউনিটি ও পরিচিতি গড়ে উঠবে। শুধু নিজেদের মধ্যেই নয় শিল্প নেতা, উদ্যোক্তা, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে পরিচিতি গড়ে উঠবে। এরফলে জানা যাবে শিল্পে চাহিদা সম্পর্কে এবং নিজেদের কে প্রস্তুত করা যাবে। সেই সাথে নিজেদের দক্ষতা কিংবা যোগ্যতাও প্রমাণ করা যাবে। পরিচিতির কারণে পণ্যের সোর্স সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করা যাবে।
- শিল্প ও ক্লাবের সেতুবন্ধন : ই-কমার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা হলে উদ্যোক্তা, শিল্প নেতা, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশিষ্টদের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করা যাবে। এতে শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
- ক্যারিয়ার প্রস্তুতি : বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীরা রঙিন স্বপ্ন বুনতে শুরু করে। তবে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে অনেকের স্বপ্ন ই দেখে না আলোর মুখ। ই-কমার্স ক্লাবে যুক্ত হয়ে শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের কে প্রস্তুত করার সুযোগ পাবে। যেহেতু একই ক্লাবে থাকবে উদ্যোক্তা, চাকরিজীবী, মুক্ত পেশাজীবী, শিল্প নেতারা। তাই শিক্ষর্থীরা নিজের আগ্রহের বিষয় গুলো তোলে ধরার সুযোগ পাবে। এর ফলে এটি ক্যারিয়ার গঠনের হাতিয়ার হবে।
- বহুমুখি ক্যারিয়ার : ই-কমার্স ক্লাব থেকে বহুমুখি ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ রয়েছে। যাদের প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন রয়েছে তারা উদ্যোক্তা হতে পারবে। যাদের চাকরি করার আগ্রহ রয়েছে তারা কর্মী হতে পারবে। আর যারা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চাইবে তারা মুক্ত পেশাজীবী হতে পারবে। একজন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে সেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়। আবার খরচের লাগাম টানতে কিছু প্রতিষ্ঠান মুক্ত পেশাজীবীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়।
- যে খাত গুলোতে কাজ করার সুযোগ পাবে : এক বা একাধিক উদ্যোক্তা মিলে শুরু করে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটি পরিচালনা করতে প্রয়োজন হয় বহু কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়। যেমন : ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফটোগ্রাফি, পণ্য ডেলিভারি, বিল (পেমেন্ট) সংগ্রহ, প্রোডাক্ট ডিজাইন, ডকুমেন্টারি, পডকাস্ট, বিজ্ঞাপন, আর্টিকেল রাইটিং, র্যাম্প শো, ব্যবস্থাপনা, একাউন্টিং, কাস্টমার সার্ভিস ও রিলেশনশিপ, এডভোকেসি (উপদেষ্টা), প্রশিক্ষণ, বাজার গবেষণা সহ বহু সেক্টরে নিজেদের কে মেলে ধরার সুযোগ পাবে ই-কমার্স ক্লাবের শিক্ষার্থীরা।
- শখ হবে ক্যারিয়ার : বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায় ফটোগ্রাফিতে তাদের আগ্রহ ও দক্ষতা রয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রতিটি পণ্যের জন্য আলাদা ফটোগ্রাফির প্রয়োজ হয়। এখানে ফটোগ্রাফারদের স্থায়ী বা চুক্তি ভিত্তিক কাজ করার সুযোগ থাকছে। কিছু শিক্ষার্থীদের মডেলিং এ আগ্রহ থাকে। তারা শাড়ি, পাঞ্জাবি সহ বিভিন্ন পণ্যের মডেল হয়ে উপার্জন করতে পারবে।
বিশেষ করে সাহিত্যের শিক্ষার্থীরা লেখালেখি তে দক্ষ হয়। তারা পণ্যের বর্ণনা সহ সম্ভাব্য ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রবন্ধ (আর্টিকেল) লেখার মাধ্যমে স্থায়ী বা খন্ডকালীন কাজ করার সুযোগ পাবে। যাদের আকাআকি বা ডিজাইনে আগ্রহ রয়েছে তারাও ই-কমার্সে কাজ করার সুযোগ পাবে।
প্রতিবন্ধিরা ঘরে বসে তাদের মেধা কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারবে ই-কমার্স সেক্টরে। যাদের গবেষণায় আগ্রহ রয়েছে তারা বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা গবেষণা সহ বিভিন্ন দিকে কাজ করার সুযোগ পাবে। এই ভাবে যার যে বিষয়ে শখ বা আগ্রহ রয়েছে, সে সেই বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাবে। - শিল্প পাবে দক্ষজনবল : ক্লাব সক্রিয় হলে ই-কমার্স সেক্টরে শিল্প নেতাদের দক্ষজনবল না পাওয়ার অভিযোগ কমে আসবে। আর ক্লাবে থাকার কারণে উদ্যোক্তা, চাকরিজীবী, মুক্ত পেশাজীবী হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য নিজেই প্রস্তুত হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তাই আশা করা যায় স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে বেকার থাকতে হবে না।
- থিসিস করা যাবে দেশি পণ্যে : দেশে উৎপাদনি পণ্য গুলো দেশের সম্পদ। বেশ কিছু দেশি পণ্য ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অনেক পণ্য বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। এসব পণ্য বাঁচিয়ে রাখতে পারলে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান যেমন টিকে যাবে এবং স্বল্প মূলধন দিয়ে উদ্যোগ শুরু করতে পারবে উদ্যোক্তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে স্নাতক পর্যায় থেকে থিসিস করানো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা একটা বিষয়ের উপর গবেষণা করে। দেশি পণ্যের উপর থিসিস করতে দিলে তারা সেই পণ্য সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাবে। পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীরা ই-কমার্স উদ্যোক্তা হলে, নিজ জেলা বা অঞ্চলের পণ্য গুলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পাবে। এটি সংশ্লিষ্ট তাঁতি, কৃষক ও কারিগরদের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং উদ্যোক্তার পণ্যের সোর্সিং সহজ হবে।
ই-কমার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর তা সক্রিয় রাখতে কাজ করতে হবে। ক্লাবের সাথে শিল্প নেতা, উদ্যোক্তা ও উর্ধ্বতন কর্মীদের সাথে যোগ সূত্র তৈরি করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে বেকার থাকতে হবে না আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। সেই সাথে শখ বা আগ্রহ কে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে এবং নিজের মেধার সর্বোচ্চ টা কাজে লাগাতে পারবে। সেই সাথে নিজের পছন্দের ফিল্ডের বাহিরে চাকরি পাওয়ার পর কর্মীদের মধ্যে যে হতাশার কথা শুনা যায় তা কমে আসবে ই-কমার্স সেক্টরে।
লেখক : মোঃ দেলোয়ার হোসেন। প্রতিষ্ঠাতা, আওয়ার শেরপুর।