১ম গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট ২০২২ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার আগামী ২০ অক্টোবর বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। কিভাবে আজকের তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে সেই পথ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের খুলনায় তিন দিনের এই কর্মসূচিতে একত্রিত হচ্ছে ৭০টি দেশ থেকে ৬৫০ জন তরুণ (১৫০ জন সশরীরে এবং ৫০০ জন অনলাইনে) ।
আজ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইজাজ আহমেদ বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন আজ মানবতার সামনে সবচেয়ে বড় সংকট। গত ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশী যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পর, আমি এখন জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তরুণদের, বিশেষ করে দক্ষিণ মেরুর তরুণদের সংগঠিত করার জন্য একটি বৈশ্বিক সংস্থা চালু করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের বিশ্বব্যাপী এবং বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে হবে। জিওয়াইএলসি’র লক্ষ্য তরুণদের জলবায়ু বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ব্যক্তিগতভাবে ও যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তরুণদের নেতৃত্বের দক্ষতা তৈরি এবং জলবায়ু অভিবাসন এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসা চালু করতে সক্ষম করা।
তিনি আরও যোগ করেন “আমরা খুলনাকে জিওয়াইএলসি সম্মেলনের উদ্বোধনী স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি কারণ খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ একটি অঞ্চল। খুলনায় সম্মেলনে যোগদানকারী এই ১৫০ জন তরুণ উপকূলীয় এলাকার লাউডোভ-এ উপকূলীয় বনায়নেও অংশ নিবেন। এর মাধ্যমে আমরা স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু সহিষ্ণু বিভিন্ন কার্যক্রম এর প্রচার এবং মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় বনায়নের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করবো”। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে যুবকদের ক্ষমতায়নের লক্ষে সামিটে অংশ নেওয়া ১০ জন প্রতিনিধিকে তাদের জলবায়ু সহিষ্ণুতা ও জলবায়ু অভিবাসন বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০০০ ডলার অনুদান প্রদান করা হবে।
গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট বিখ্যাত জলবায়ু বিষয়ক বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা, নেতৃত্ব বিশেষজ্ঞ এবং যুব জলবায়ু কর্মীদের একত্রিত করতে যাচ্ছে এবং এই সামিটে জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তঃপ্রজন্মের সহযোগিতা, ভবিষ্যৎ জ্বালানি, কৃষির আধুনিকীকরণ এবং আমাদের দায়িত্বশীল ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সামিটে দেশ ও বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখবেন যাদের মধ্যে আছেন, যুক্তরাজ্য সরকারের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার ডেভিড কিং, অক্সফোর্ডের প্রাক্তন অধ্যাপক স্যার ক্রিস্টোফার বল, হার্ভার্ডের প্রাক্তন নেতৃত্ব অনুষদের শিক্ষক ড. ডিন উইলিয়ামস, আইসিসিএডি পরিচালক ড. সালেমুল হক, আফ্রিকার যুব জলবায়ু কর্মীরা, আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়া, সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময়, গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হোয়েগ হেনরিকসেন বলেন, “আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের CO2 নির্গমন ৫০% কমাতে একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি । আমরা তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমাদের জন্য গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট তরুণদের সাথে যুক্ত হওয়ার এবং একটি জরুরি কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম।”
জিওয়াইএলসি চেয়ারম্যান নিল ওয়াকার বলেন, “তরুণরা শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দাবি জানায় না, তারা পথও দেখায় । নেতৃত্ব, উদ্ভাবন, উদ্যোগী মনোভাব সাফল্যের পথ দেখায়। তবে আমাদের বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ দরকার। জিওয়াইএলসি সারাবিশ্বের তরুণদের আদর্শ, ধারণা এবং প্রতিভাকে ফলাফলে রূপান্তর করতে কাজ করবে।”
তরুণ জলবায়ু কর্মী সোহানুর রহমান বলেন, “জলবায়ু বিষয়ক সবকিছুকে আলোচলার কেন্দ্রে রাখতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ইতিমধ্যেই সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সহায়তা করার জন্য ধনী দেশগুলিকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিওয়াইএলসি নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ ও তরুণ জলবায়ু কর্মী শাকিলা ইসলাম।
গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে আছে গ্রামীণফোন, এছাড়াও গোল্ড স্পন্সর হিসেবে আছে নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, এফএইচআইথ্রিসিক্সটি এবং স্যার ক্রিস্টোফার বল এবং লেডি বল। গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটের সিলভার স্পন্সররা হচ্ছে প্যারাগন গ্রুপ, ইউসিবি, ব্র্যাক এবং দারাজ। এই আয়োজনের বাস্তবায়নকারী অংশীদার বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)। কমিউনিটি এবং আউটরিচ পার্টনার হিসেবে কাজ করছে বেডস এবং ইয়ুথনেটস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস।