ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ ইচ্ছে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা যে কয়টি মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে স্নাতকোত্তর করতে যান, ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স স্কলারশিপ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৪৩ দেশের ২ হাজার ৮৩৫ শিক্ষার্থী ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পাওয়া ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৪০ শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পেয়েছেন।
জানা যায়, গত বছর সবচেয়ে বেশি ১৯২টি স্কলারশিপ পেয়েছেন পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা। ফলে দেশটি ছিলো প্রথম স্থানে। স্কলারশিপের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। দেশটির শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন ১৭৪টি স্কলারশিপ। এরপরই মেক্সিকো ১১৮টি, নাইজেরিয়া ১০৯, ব্রাজিল ৯৬, স্পেন ৭৩, কলম্বিয়া ও ফিলিপাইন ৭২টি করে, মিসর ৭০, ইতালি ৬৯, ইন্দোনেশিয়া ৬৮, চীন ৬৫, যুক্তরাষ্ট্র ৬০, জার্মানি ও ইথিওপিয়া ৫৩টি করে, তুরস্ক ৫২ ও কাজাখস্তান ৫১টি স্কলারশিপ পেয়েছে।
অন্যান্য স্কলারশিপের থেকে ইরাসমাস মুন্ডাস কেন সেরাঃ-
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের পুরো প্যাকেজ বেশ আকর্ষণীয়। এই স্কলারশিপের আওতায় তিন’শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও ১ হাজার ৫০০ জনের মতো পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রতিবছর এ স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান।
প্রোগ্রাম চলাকালে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করা হবে, তার টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ। এছাড়াও প্রতিমাসে ১১০০-১২০০ ইউরো স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা, ট্রাভেল অ্যালায়েন্স, এয়ারফেয়ারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে নতুন নতুন দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, উচ্চতর নতুন নতুন গবেষণা এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার অন্যতম সুযোগ। মাসিক অর্থায়নে শিক্ষার্থীর ভ্রমণ, স্বাস্থ্যবিমা ও গবেষণা–সম্পর্কিত খরচ বহন এ স্কলারশিপের অন্যতম আকর্ষণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের টিউশন ফি, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, গবেষণা–সংক্রান্ত ফিসহ বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স, সেমিনারসহ সব কিছুরই সুবিধা পাওয়া যায় বিনা মূল্যে।
এ স্কলারশিপের আওতায় জয়েন্ট স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে চারটি সেমিস্টারে ভিন্ন দেশে ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। প্রতিটি দেশ থেকেই আলাদা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সার্টিফিকেট দেওয়া হয় এই স্কলারশিপের মাধ্যমে। এ ছাড়া ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট মোবিলিটি (আইসিএম) অ্যাকশন’ ও ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর হাইয়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) অ্যাকশন’-এ আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা।
সুযোগ-সুবিধাঃ-
* শতভাগ টিউশন ফি ওয়েভার
* ২ বছর প্রতি মাসে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো উপবৃত্তি
* যাতায়াত ভাতা মিলবে
* সেমিস্টার শেষে এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানের টিকিট
আবেদনের যোগ্যতাঃ-
* স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে অথবা স্নাতক ডিগ্রির শেষ বছরে থাকতে হবে। তবে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগেই গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। * স্নাতক ডিগ্রি না পেলেও স্নাতক সমতুল্য ডিগ্রির সার্টিফিকেটেও আবেদন করা যাবে। তবে প্রোগ্রামটি দেশের আইন কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে।
* ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। আইইএলটিএসে ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর হতে হবে।
* তবে আইইএলটিএস না থাকলে বিকল্প হিসেবে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট বা ডুয়োলিংগো পরীক্ষার ফল থাকতে হবে।
* পছন্দের প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আবেদনে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
* অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল না পেলেও আবেদন করা যাবে।
* জিআরই টেস্ট স্কোর জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই ও
* ১৬ বছর বয়সের পর থেকে আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং এরপরে বয়সের বিধিনিষেধ নেই।
প্রয়োজনীয় নথি পত্রঃ-
* দুটি রেকমেন্ডেশন লেটার।
* লেটার অব মোটিভেশন।
* অফিশিয়াল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (উচ্চমাধ্যমিক ও ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমতুল্য)।
* পূরণ করা আবেদনপত্র।
* সিভি।
* পাসপোর্ট বা আইডির স্ক্যান কপি।
* প্রুফ অব রেসিডেন্সের কপি ।
* ইংরেজি দক্ষতার সনদ ইত্যাদি।
আবেদনের সময়ঃ-
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের তিনটিতে আবেদনের সময় তিন রকম। ১. ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট মোবিলিটি (আইসিএম) অ্যাকশন’-এ আবেদনের শেষ সময় আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি, ২. ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর হাইয়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) অ্যাকশন-এ আবেদনের শেষ সময় ৮ ফেব্রুয়ারি ও ৩. ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স (ইএমজেএম) অ্যাকশন-এ আবেদনের শেষ সময় ১৫ ফেব্রুয়ারি।
আবেদন প্রক্রিয়া
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রতিটি প্রোগ্রামের নাম ও লোকেশন পাওয়া যাবে।
তারপর কোর্স, আবেদনপ্রক্রিয়া ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি কন্ট্যাক্ট প্রজেক্ট পারসন বাটন প্রেস করে যোগাযোগ করা যাবে।
আবেদন করতে এবং বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন