কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নিহত রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজসহ শহীদদের স্মরণে পদযাত্রা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার রাজধানীর শাহবাগ থেকে ধানমন্ডির রাপা প্লাজা পর্যন্ত পদযাত্রা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বুধবার একই কর্মসূচি হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই রাপা প্লাজার সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে মারা যায় একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফাইয়াজ।
পদযাত্রার আগে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর থেকে নানা যড়যন্ত্র হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রশাসনিক, জুডিশিয়াল ও মিলিটারি ক্যু ঠেকিয়েছি। খবর পেয়েছি, বৃহস্পতিবার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা ক্যু করার জন্য রাস্তায় নামবে। যারা জনগণের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা লুণ্ঠন করেছে, হামলা-নির্যাতন করেছে, তারা যখনই বাংলার মাটিতে ষড়যন্ত্র করতে আসুক, প্রতিরোধ করা হবে। রাস্তায় নামার চিন্তা করলে ছাত্র-জনতা পা ভেঙে দেবে।’
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। তার দোসররা আমাদের আশপাশেই লুকিয়ে রয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই– ষড়যন্ত্র করতে এসে ধরা পড়লে আপনারা গায়েবানা জানাজা পড়ারও লোক খুঁজে পাবেন না। নতুন করে মাঝি সাজার চেষ্টা করলে নৌকাসহ ডুবিয়ে দেওয়া হবে। জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত সবাইকে ১০ মিনিটের ঘোষণায় রাজপথে নামার প্রস্তুতি রাখতে হবে। কেউ বাধা দিলে জনতার স্রোতে তারা পিষে যাবে।’ সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় উপাসনালয়ে হামলা চালিয়েছে। তবে ছাত্র-জনতা তাদের রুখে দিয়েছে। আমরা রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজন হলে আবারও রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’
পদযাত্রায় ‘হাসিনার দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
এর আগে বেলা ৩টায় শাহবাগ মোড়ে ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমাবেশ হয়। ‘একতার বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের এ সমাবেশে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আবু সায়েম, আরবি বিভাগের শিক্ষক মাহাদী হাসান, রফিকুল ইসলাম, ফাদার তপন ডি রোজারিও, শাফী মুহাম্মদ মুস্তফা, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বিশপ সাইমুন আর বিশ্বাস প্রমুখ। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সমন্বয়ক তাহমিদ আলম। শপথবাক্য পাঠ করান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক।
অধ্যাপক আবু সায়েম বলেন, ‘জুলাইয়ের বিপ্লব আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এতে সব ধর্মের মানুষ রক্ত দিয়েছেন। আমরা ঐতিহাসিকভাবে সম্প্রীতির সুতায় আবদ্ধ। যে কোনো মূল্যে একে রক্ষা করতে হবে।’ সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এখানে রক্ত দিয়েছে। আমরা সমানাধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। এ দেশ ছাড়তে চাই না। যারা বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। তারা অপরাধী, আমরা তাদের বিচার চাই।’
তপন ডি রোজারিও বলেন, ‘বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য। এ আন্দোলনে সবার ভূমিকা রয়েছে। আমরা শান্তিকে সমর্থন করব।’ সমাবেশে ছাত্র সংগঠক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের শিক্ষার্থীরা ছাড় দেবে না। বাংলার মুক্তিকামী মানুষ তাদের প্রতিহত করবে। আমরা হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ চাই না। সবাই মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে বসবাস ও তারুণ্যের উচ্ছলতায় দেশ গড়তে চাই।’
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে সমন্বয়ক তাহমিদ আলম বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি। এ পরিচয়েই আমরা আমাদের অধিকার চাইব।’