ই-কমার্সের বদৌলতে এগিয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তোরা, কদর বাড়ছে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা অনেক পন্যের, উপকৃত হচ্ছে একদম রুট লেভেলের মানুষগুলো, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন বিখ্যাত কৃষিপণ্যের পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব এবং উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা আর দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা সেগুলো পন্যের উৎপাদনে অনাগ্রহী হয়ে পরেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে, শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের পদচারনা বাড়ছে এই সেক্টরে আর তাদের হাত ধরে আবারও উঠে আসছে হারাতে বসা গ্রামীন ঐতিহ্যগুলো।
তেমনি একজন উদ্যোক্তা ময়মনসিংহের আখতার রোখসানা। তার উদ্যোগের নাম “মাটির ফুল অর্গানিক”। এই উদ্যোগের সিগনেচার পণ্য- লাল চিনি উৎপাদনে বিখ্যাত এলাকা ফুলবাড়িয়ার কৃষকদের হাতে তৈরী “ব্রাউন সুগার বা লাল চিনি”।
তিনি নিজে ফুলবাড়িয়া গিয়ে সারাদিন বসে থেকে কৃষকদের থেকে বানিয়ে আনেন এই ব্রাউন চিনি। তাই মানের ব্যাপারে ক্রেতাদের দেন সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা। বাজারে যে ব্রাউন চিনিটা পাওয়া যায়, বেশির ভাগ সময় সেটা হয় মেশিনে তৈরী, এছাড়াও সেটায় অসাধু ব্যবসায়ীয়া অধিক লাভের আশায় কখনো সোডা মিশিয়ে দেয়, আবার কখনো সাদা চিনির সাথে ক্যামিকেল মিশিয়ে লাল বানিয়ে সেটাকে বিক্রি করে থাকে।
রোকসানা বলেন, একদম নিজ চোখে বসে থেকে দেখে সেই হাতে বানানো ব্রাউন চিনি সংগ্রহ করি যেন, মানের ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে। আর তাই আমার এই সেরা চিনিটা সংগ্রহে ব্যয় হয় প্রচুর সময়, শ্রম আর খরচটাও বেশি হয়ে থাকে। সেজন্যই বাজারে বিক্রিত লাল চিনির তুলনায় এই চিনির দামটা বেশি। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত হবে যে, “জিনিস যা ভালো, তার দামটা বেশিই গুনতে হয়।” আর এটা যারা বুঝেন তারাই আমার কাস্টমার।
আখতার রোকসানা বলেন, ২০২০ সালের জুন থেকে উনার উদ্যোগের যাত্রা এবং এ পর্যন্ত লাখ টাকারও বেশি সেল করেছেন উনি শুধু ব্রাউন চিনি এবং উনার ৫১ জন রিপিট কাস্টমার রয়েছেন, যারা উনার নিয়মিত ক্রেতা।
তিনি আরও জানা যায়, উনার ব্রাউন চিনির টার্গেট কাস্টমার হলেন মূলত বাচ্চার মায়েরা। কারন বাচ্চাদের খাবারে পুষ্টিকর এবং বিশুদ্ধ চিনির ব্যবহারের কথা ভেবেই উনার এই উদ্যোগের শুরু।
চিনিকলের লাল চিনি আর কৃষকের হাতে তৈরী ব্রাউন চিনির অন্যতম পার্থক্য কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিনিকলের চিনিটা হয় একটু বেশি লালচে রং এর আর হাতে তৈরী চিনির রং হয় বাদামী বা কালচে বাদামী। আবার বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেও আখ থেকে উৎপন্ন এই ব্রাউন চিনির রং এ কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। হাতে তৈরী এই ব্রাউন চিনি যেহেতু একদম ‘র-চিনি’ তাই এটা খুব বেশি ঝকঝকে তকতকে হয় না। চিনি তৈরীর সময় একে অর্গানিক উপায়েই ক্লিন করা হয়, রসের মাঝে শিমুলের কষ ব্যবহারের মাধ্যমে। শিমুলের কষ আখের আঁশ দূর করে একে পরিষ্কার করে এবং এতে চিনির ব্রাউন রংটাও ঠিক রাখে।
আখতার রোকসানা জানান, যেহেতু তিনি সর্বোচ্চ কোয়ালিটির ব্রাউন চিনি নিজে তৈরী করিয়ে আনছেন, তাই এই ব্রাউন চিনি দেশের সীমানা পেরিয়ে একদিন দেশের বাইরেও রপ্তানী হবে, এই স্বপ্নই দেখছেন উনি। আর এরজন্য দেশের মিডিয়াগুলোর মাধ্যমে এই কৃষকের তৈরী চিনির আরও প্রচার হওয়া দরকার বলে মনে করছেন।
তিনি আরো বলেন , আরো কয়েকটা জায়গায় ব্রাউন চিনি সংগ্রহের জন্য গিয়েছি, কিন্তু ফুলবাড়িয়ার কৃষকদের তৈরী চিনিটাই আমার কাছে সেরা বলে মনে হয়েছে। তাই তিনি এখান থেকেই সোর্সিং করছেন।
ব্রাউন চিনি সংগ্রহে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হল, একদম পিউর চিনি তৈরী করতে কৃষকদের কে উচ্চদাম দিতে হয়, যার জন্য উনার ব্রাউন চিনির দামটা বেশি। কিন্তু কাস্টমাররা দাম বেশির কারণ টা অনেক সময় বুঝতে চান না। তবে উনি হাল ছেড়ে দিবেন না, হোয়াইট সুগার যে সাদা বিষ, এর ক্ষতিকর দিক এবং ব্রাউন সুগারের পুষ্টিগুণের ব্যাপারে জনসচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন করে যেতে চান তিনি।
আখতার রোকসানার মতো উদ্যোক্তা তৈরী হওয়া খুব জরুরী, তাদের মাধ্যমেই আমাদের অঞ্চলভিত্তিক সেরা পণ্যগুলো কে ই-কমার্সের আওতায় এনে আরো প্রচার প্রসার করে ছড়িয়ে দেয়া যাবে সারাদেশ ও বিশ্ব জুড়ে।