শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে গারো, কোচ, হাজং, ঢালু, বানাই ও হদি সম্প্রদায়ের বসবাস। তারা যুগ যুগ ধরে তাদের নিজস্ব তাঁতে তৈরী গামছা, চাদর, মেয়েদের পড়ার দক শাড়ী, দক মান্দা, ওড়নাসহ অন্যান্য পোষাক বুনিয়ে তা ব্যবহার করে আসছিল। সম্প্রতি গত প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর ধরে নানা প্রতিকুলতায় সেসব তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা এখন আর তাদের নিজস্ব তৈরী পোষাক ব্যবহার করতে পারছে না। তাদের সেই ঐতিহ্যবাহী পোষাক কেবলই স্মৃতি হয়ে আছে। কারণ এখন এসব পোষাক আর এ অঞ্চলে তৈরী হয়না। যা কিছু তৈরী হয় তা টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং নেত্রকোনা জেলায়। সেসব এলাকা থেকে কিছু পোষাক কিনে এনে এসব অঞ্চলে বিক্রি হয়। তবে বেশীর ভাগই টেক্সটাইলের বোনা বাঙালীদের শাড়ীসহ অন্যান্য পোষাকে অভ্যস্থ হয়ে গেছে আদিবাসী নারীদের প্রায় সবাই।
এছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়ায়ও অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা এখন তাদের ঐতিহ্যের পোষাকের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে। অথচ শেরপুর অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের তাঁতের বিভিন্ন পোষাকের বেশ কদর ছিলো আদিবাসী ও বাঙালীদের। এসব পোষাকের মধ্যে অনেক বাঙালীদের বিশেষ করে মেয়েদের গায়ের চাদর ও ওড়না এবং গামছার চাহিদাও ছিল অনেক। সর্বশেষ গাত ৬ থেকে ৭ বছর আগেও এসব এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ধর্মীয় ও কৃষ্টি’র নানা অনুষ্ঠান এবং মেলায় তাদের তৈরী তাঁতের বোনা নানা পোষাকের সমারোহ ছিল। এখন যদিও ওই সব মেলায় তাদের সেসব পোষাক কিছু পাওয়া গেলেও তা বাইরে থেকে আমদানীকৃত। তাই স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যবাহী পোষাক ধরে রাখতে ধ্বংস বা বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত শিল্পকে পুনরোজ্জিবিত বা তৈরী করে তাদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নেতা এবং সচেতন মহল মনে করছে। সেজন্য এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের পাশপাশি জেলার বিত্তশালী এবং উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে ফিরে পাবে শেরপুর অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য। সেই সাথে সারাদেশ ব্যাপী ফিরে পাওয়া দেশীয় পন্যের সমারোহ এবং শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের পোষাকও দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের তাঁত শিল্পের পুনরুদ্ধার ও তাঁত পোশাক বিপণন করতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা ওয়েবসাইট আওয়ার শেরপুর (www.oursherpur.com)। তাই আশা করা যায়, শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের তাঁত শিল্প আবারও আলোর মুখ দেখবে।
এ ছাড়াও ”আওয়ার শেরপুর” জেলার ব্র্যান্ডিং তুলশীমালা চাল ও মন্ডা বিক্রি করছে একবছর যাবৎ।