এক খুদে মেয়ে তার মাকে ‘নানিকে সম্মান করার’ পরামর্শ দিচ্ছে। অসাধারণ ভঙ্গি, বড়দের মতো কথা। আমাদের মন ভরে যায়। হাজার হাজার লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। মুহুর্তেই সে বনে যাচ্ছে তারকা।
প্রতিদিনই আমাদের ফিডে শিশুদের এমনই কত ভিডিও আসে। বাচ্চারা বাবা-মাকে জ্ঞান দিচ্ছে, নাচছে, গাইছে, অভিনয় করছে। ইউটিউবে গেলে দেখা যাবে হাজারো ‘কিডফ্লুয়েন্সার’, যারা এখনই তারকা। লক্ষ লক্ষ ভিউ, সাবস্ক্রাইবার, স্পন্সরশীপ।কিন্তু ক্যামেরার পেছনের গল্পটা আমরা দেখি না।
যে কারণে সন্তানের সঙ্গে অন্যদের তুলনা বন্ধ করা প্রয়োজনযে কারণে সন্তানের সঙ্গে অন্যদের তুলনা বন্ধ করা প্রয়োজন
এই শিশুরা কি স্কুল মিস করছে? ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে, খাচ্ছে? নাকি বার বার ‘রেকর্ড, পোস্ট, রিপিট’ এর চাপে হাঁপিয়ে উঠছে? ক্যামেরা বন্ধ হলে হয়তো কেউ বলছে, ‘একটা ভালো শট দে না, পারছিস না কেন?’ অথচ সে হয়তো চায়, শুধু স্কুলে যেতে, খেলে বেড়াতে, একটু নিঃশ্বাস নিতে।
ব্যাড ইনফ্লুয়েন্সের বাস্তবতা
নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিক ডকুমেন্ট সিরিজ ‘ব্যাড ইনফ্লুয়েন্স’ এই অন্ধকার দিকটা তুলে ধরেছে। সেখানে জনপ্রিয় চাইল্ড ইনফ্লুয়েন্সার পাইপার রকেলের জীবন ও তার মা টিফানির গল্প দেখা যায়। যিনি কন্যার জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে সাফল্য, অর্থ, খ্যাতি যেভাবেই হোক পেতে চান।
সাংবাদিক টেলর লরেঞ্জ বলেন, ‘এই সিরিজ অনেক দরকারি প্রশ্ন তুলেছে। শিশুরা যখন ১৩ বা ১৪ বছরের মধ্যে আয় করতে শুরু করে, তখন তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত? অভিভাবকেরা কি শুধু টাকা আর জনপ্রিয়তার দিকটাই দেখছেন?’
লাইকের নেশা কার?
মনোবিজ্ঞানী ড. মেঘা পুষ্কর্ণা বলেন, ‘শিশুরা বুঝে না, কিন্তু মা-বাবারা বুঝে, ‘ভিউ আসছে’, ‘ফলো বাড়ছে’। এর একটা ডোপামিন রাশ আছে, একটা আসক্তি আছে। অনেক সময় মা-বাবারাই না বুঝে সেই আসক্তি শিশুর মধ্যে ঢুকিয়ে দেন।’ আর যদি মা-বাবারাই এই নেশায় ডুবে যান। তাহলে থামার সীমানা টানবে কে?
প্যারেন্টিংয়ের পালাবদল
ড. মেঘা আরও বলেন, ‘এক সময় ভালো ছাত্র হওয়া মানেই শ্রেষ্ঠ হওয়া ছিল। এরপর এলো খেলাধুলা। এখন? সৃজনশীলতা—নাচ, গান, ভিডিও। কিন্তু পড়ালেখা বা খেলাধুলার সাফল্য পেতে সময় লাগে। আর অনলাইন খ্যাতি আসে এক রাতেই। একটা ভাইরাল ভিডিও মানেই তারকা।’
মিথ্যা বলতে শিখছে সন্তান? স্বভাবে বদল আনুন এই কৌশলেমিথ্যা বলতে শিখছে সন্তান? স্বভাবে বদল আনুন এই কৌশলে
তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চাদের প্রতিভা বিকাশ হওয়া উচিত। কিন্তু কখনো কখনো চাপটা অভিভাবকদের দিক থেকেই বেশি আসে। ওদের ওপর নয়, আমাদেরও নিজের দিকে তাকানো উচিত।’
শেষ প্রশ্নটা শিশুর জন্যই রাখা হোক
আজ যে মেয়েটি ভাইরাল হলো। সে যদি ১৮ বছর বয়সে ভাবে, ‘আমি তো চাইনি এই ভিডিও সবাই দেখুক।’ তখন কী হবে? তাই একটা পোস্ট দেওয়ার আগে হয়তো সেই প্রশ্নটাই আমাদের করা উচিত। এই ভিডিওটা আমি কেন দিচ্ছি? কার জন্য দিচ্ছি? আর সেটা কি এই শিশুর জন্যও ভালো?