পাবজি’, এমন একটি গেইম যেটির নাম আজকাল সবার মুখেই শোনা যায়। সারাবিশ্বে এটি এখন অন্যতম জনপ্রিয় একটি গেইম। সেইসাথে এটির লঞ্চিং এর সময় থেকেই ভালো পপুলারিটি অর্জন করেছে এই গেইমটি। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না পাবজি গেমের প্রথম সময়ে, এই গেমের ভিতরে যেসব প্লেয়ার রয়েছিল তাদেরকে প্লেন থেকে ছাড়া হতো না। বরং একটি ওয়ারহাউজ থেকে ছাড়া হত। অতঃপর প্লেয়ারদের সাজেশন এর কারণে এটি কে বদলে প্লেনে রূপান্তরিত করা হয়। যে কারণে আমরা সবাই এই গেমটিতে কোনরকম টিকেট ছাড়াই, প্লেন থেকে লাফ দিয়ে ব্যাটল শুরু করতে পারি। তো আজ কথা হবে এই পাবজি গেইম নিয়ে। গেইমটি কবে প্রথম শুরু করা হয়েছিল, লঞ্চিং কবে করা হয়েছিল এবং গেইমের ভিতরে যেসব জিনিস রয়েছে সেসব কিছুই আজকে জানানোর চেষ্টা করব আপনাদের।
তো চলুন জেনে আসা যাক এই গেইমটির ব্যাপারে বিস্তারিতঃ⤵
‘পাবজি’ গেইমটি জাপানিজ একটি ফিল্ম ‘ব্যাটল রয়েল’ থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়েছে। যেই ফিল্মে একটি স্কুলের প্রায় ৪০ জন বাচ্চাকে ম্যাপ, খাবার এবং উইপেন্স এর সাথে একটি ডেজার্ট আইল্যান্ডে ছেড়ে দেয়া হয়। যেখানে একে অপরকে মেরে লাস্ট পর্যন্ত সার্ভাইভ করাই থাকে এদের মিশন। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজন স্টুডেন্ট সার্ভাইভ করে সেই আইল্যান্ড থেকে বাহির হয়ে আসতে পারবে। ‘পাবজি’তে পাওয়া উইপেন্স গুলো, এই ফিল্মের উইপেন্স গুলোর সাথে হুবহু মিলে। এই গেইমটির লীড ডিজাইনার এবং ক্রিয়েটর হচ্ছে ‘ব্রেন্ডন গ্রিন’। এই লোক, এর আগে ‘আর্মা ৩’ এবং ‘কিং অফ দি কিল’ গেইমগুলোতে ডিজাইনার এবং কনসোল্টার হিসেবেও কাজ করেছে।
তার থেকে ইমপ্রেস হয়ে সাউথ কোরিয়ান ‘ব্লু হোল’ ইন্ডাস্ট্রির ‘সি.ই.ও’, তাকে ‘সাউথ কোরিয়া’তে একটি ব্যাটল রয়েল গেইম তৈরী করার জন্য অফার দেন। ব্রেন্ডন গ্রিন এই অফারে রাজি হয়ে ‘সাউথ কোরিয়া’য় শিফট হয়ে যায়। অতঃপর সেই ‘সি.ই.ও’র সাথে মিলে সে নতুন একটি গেইম তৈরী করে, যেটার নাম ছিলো ‘প্লেয়ারস আননোন ব্যাটলগ্রাউন্ড’। ‘পাবজি’ গেইমে থাকা পুরো ম্যাপটি সে নিজে তৈরী করেছিলো। আর এই ম্যাপের উপর একটি ফিকশনাল কাহিনীও বানানো হয়েছিলো। সেটা অনেকটা এরকম, যে একটি বিশাল আইল্যান্ডে দুই পক্ষের সাথে সংঘর্ষ হওয়ার পর সেখানকার কেউই বাচেনা এবং সেই আইল্যান্ড পরিনত হয় একটি নিস্তব্ধ জায়গায়। এজন্যই এই গেইমের আইল্যান্ড গুলোতে বিভিন্ন জিনিস পুরাতন দেখায়। তো এই ধরনের অনেক কাহিনী যুক্ত ম্যাপ রয়েছে ‘পাবজি’ গেইমে।
‘উইনার উইনার চিকেন ডিনার’ এই মেসেজটি দেখার জন্যই এই গেইমটি খেলা। কিন্তু, ‘পাবজি’র আগেও অনেক গেইমসে এই ধরনের জিনিসটি দেখা যায়। এই জিনিসটি ওয়েস্টার্ন দেশ গুলোতে অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। সেখানে কেউ জুয়া খেলায় জিতে গেলেই, এই চিকেন ডিনার সে করতে পারতো।
এখন কথা বলা যাক, ‘পাবজি’ গেইমের আইকনিক উইপেন্সের ব্যাপারে। যেটা কোনো রাইফেল বা স্নাইপার না। সেটা হচ্ছে প্যান। ক্লোজ ইনকাউন্টার গুলোতে এই উইপেন্সটি সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক। এ কারনেই, এটি অনেকের প্রিয় উইপেন্স। পেছন থেকে কেউ গুলি করলে, এ উইপেন্সটির মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করা যায় এই গেইমসে।
এই গেইমে ‘ব্লু জোন’ নামে একটি জিনিস রয়েছে। যেটা ম্যাপের মধ্যে গোলাকার অবস্থায় থাকে এবং আস্তে আস্তে কমে আসে। সেটার ভিতরে থাকলেই প্লেয়ার আস্তে আস্তে মরে যেতে থাকে। এটি শুরুতে স্কয়ার ধরনের থাকলেও, পরে এটিকে গোলাকার করে দেয়া হয়।
‘পাবজি’ গেইমটি যারা লঞ্চিং এর আগে প্রি-অর্ডার করেছিলো, তারা সবাই একটি ‘ব্যান্ডোনা’ পেয়েছিলো। যেটা তারা এই গেইমে তাদের নিজেদের ক্যারেক্টারে পরিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু, বর্তমানে এই জিনিসটি গেইমসটিতে পাওয়া যায় না। কিছু কিছু সাইটের মাধ্যমে এই ব্যান্ডোনা কিনতে বা বেচতে পারা যায়। এই ব্যান্ডোনার দাম হলো ১০০০ডলার অথবা ৮০,০০০টাকা। অনেকে তাদের টাকা খরচ করে এটিকে কিনছেও ‘পাবজি’ গেইমটি লঞ্চিং এর ২মাসের মধ্যে এর ২ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। এই গেইমটি রিলিজ হওয়ার তিন দিনের মধ্যেই ১১ মিলিয়ন ডলার ইনকাম করেছিলো ব্রেন্ডন গ্রিন। এক বছরের মধ্যে পৃথিবীর টপ ফাইভ গেইমের ভিতরে জায়গা করে নিয়েছিলো ‘পাবজি’। ২০১৮ সালের জুন মাসে,এই গেইমটির প্রায় ৫০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। যদি মোবাইলের প্ল্যাটফর্মকে মিলানো হয়, তাহলে পাবজি গেইম এর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন এর মত লেয়ার রয়েছে।
‘পাবজি’ গেইমটি কোনো স্মার্টফোন খেললে ফ্রি ভাবে খেলা যাবে। কিন্তু, গেইমিং কনসোল এবং পিসি’তে এই গেইমটি কিনে তারপর খেলতে হয়। এই গেইমটিতে অ্যাডস দেখানো হয় না। কিন্তু, অ্যাডস দেখানোর এদের আলাদা উপায় আছে। ‘টম ক্রুস’ অভিনীত ‘মিশন ইম্পসিবল’ মুভির রিলিজের সময়, এই গেইমে সেই মুভির টাস্ক দেখানো হয়েছিলো। তো এগুলো পুরন করলে এই গেইমের কিছু আইটেম কেনা যেতো। এতে সেই ফিল্মের প্রমোশোনও হতো এবং এই গেইমটিরও ভালো ইনকাম হয়ে যেতো। এছাড়াও এই গেইমের আরও কিছু জিনিসের মাধ্যমে, গেইমটি অনেক টাকা ইনকাম করে।