আপনি কি চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র ভিডিও পাবলিশের টাকা দিয়ে চলতে পারবেন? সেটা জানাতেই এ প্রতিবেদন।
আমরা অনেক ইউটিউবারদের সফলতার গল্প শুনি যে কীভাবে তারা শুধুমাত্র বাসায় বসে কাজ করে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করে অনেক অনেক টাকা আয় করেছেন। হ্যাঁ! এমন ইউটিউবার আছে কিন্তু তাদের সংখ্যাটা খুবই কম। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে ইউটিউবে প্রতি মিনিটে প্রায় তিনশ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড হচ্ছে। সুতরাং ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন যে আপনাকে এর মধ্যে সফল হতে হলে অনেক প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলতে হচ্ছে, আর বিষয়টি মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। ইউটিউব থেকে এই আয়ের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য দেখা যায়, কেউ কেউ হয়ত ইতোমধ্যেই এত টাকা আয় করে ফেলেছেন যে সারা জীবন আর কিছু না করলেও তাদের চলছে। আবার অন্যদের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা আয় করছেন ঠিকই কিন্তু সে আয়ের পরিমাণ এতই অল্প যে বাসা ভাড়াটাও হয়তো ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছেন না।
তো এখন একটা প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে যে ইউটিউবাররা গড়ে কত টাকা আয় করে থাকেন? এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ আপনি তখনই পাবেন যখন আপনি ইউটিউবারদের আয় করার পাঁচটি উপায় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখবেন।
ইউটিউবারদের আয় কত?
সাধারণত ইউটিউবাররা যে পাঁচটি উপায়ে আয় করে থাকেন সেগুলো হলো বিজ্ঞাপন, অ্যাফিলিয়েট লিংক, ডোনেশন, পণ্য বিক্রয় এবং স্পন্সর ভিডিও। তবে এই আয় করার ব্যাপারটি, ‘এডিট করলাম আর আপলোড দিলাম’ মোটেও এমন নয়। তাদেরকে কাজ করতে হয় এমন ভাবে যাতে একই সঙ্গে নিজেদের নাম অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়। তো এই ইউটিউবাররা কত আয় করে থাকেন? এর উত্তরে বলা যায়, যদি তারা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে পরেন তাহলে আয়ও অনেক পরিমাণে হতে থাকে। সৌন্দর্য সম্পৃক্ত দুই ইউটিউবার জেফরি স্টার এবং জ্যাকলিন হিল এর বর্তমান সাবস্ক্রাইবার হলো যথাক্রমে ১২.৭ মিলিয়ন এবং ৫.৮ মিলিয়ন। আর তাদের চ্যানেল থেকে আয়ের পরিমাণ হলো যথাক্রমে ৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১.৫ মিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ভিডিও গেম নিয়ে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করা ফেলিক্স কেজেলবার্গ ৮৪ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার নিয়ে আয় করছেন ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মজার ব্যাপার হলো বেশিরভাগ ইউটিউবাররাই অত পরিমাণ আয় করতে চান। ব্যাপার কিছুটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আপনি স্কুলের একটি নাটকে অভিনয় করছেন আর মনে মনে নিজেকে ব্র্যাড পিট এর মতো ভাবতে শুরু করেছেন। জার্মান একটি গবেষণা সংস্থার মতে, ইউটিউবের অনেক জনপ্রিয় চ্যানেলগুলোর মধ্যে মাত্র তিনভাগের আয় বছরে মাত্র সতের হাজার ডলারের মতো। যদিও এই আয় একদমই সামান্য নয়, তবে এই পরিমাণও নয় যার কারণে আপনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করা শুরু করে দিতে পারেন।
আসুন দেখে নেই যে পাঁচটি উপায়ে ইউটিউবাররা সাধারণত আয় করে থাকেন।
বিজ্ঞাপন থেকে আয়
ইউটিউবার হিসেবে এটা আয় করার একদম প্রাথমিক এবং সহজ একটি উপায়। ইতোমধ্যেই আপনারা হয়তো জানেন যে বেশিরভাগ ইউটিউবাররাই ভিডিওতে দেখানো বিজ্ঞাপন থেকেই আয় করে থাকেন। আমরা বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও শুরু হওয়ার আগে এবং চলাকালীন সময়ে যে বিজ্ঞাপন দেখতে পাই সেখান থেকেই মূলত এই আয় হয়ে থাকে। তবে প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন থেকে ঠিক কি পরিমাণে আয় হয় এই ব্যাপারটি গুগল অনেকটাই নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। ইউটিউবাররা জানতেও পারেন না যে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনটি থেকে তিনি কি পরিমাণ আয় করছেন। তবে একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় যে প্রতি এক হাজার ভিউ থেকে প্রায় তিন ডলার থেকে ১০ ডলারের মতো আয় হয়ে থাকে।
আর ইউটিউবের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এটাই যে আপনার কোনো ভিডিও যদি একবার জনপ্রিয় হয়ে যায় তাহলে এই ভিডিও যতদিন আপনার চ্যানেলে থাকবে ঠিক ততদিন আপনার আয় হতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানো হতে থাকবে আপনার আয় হতে থাকবে।
সাধারণত বেশিরভাগ ছোট এবং শুরুর দিকের চ্যানেলগুলো এভাবেই আয় করে থাকে এবং ঠিক এজন্যই একে বলা হয়ে থাকে ‘ইউটিউব থেকে আয় করার সহজ একটি উপায়’। ইউটিউবে আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য আপনাকে আলাদা করে কোনো কিছু করতে হবে না। তবে এটাকে সহজ উপায় বলা হলেও যতটা সহজ মনে হচ্ছে আদতে বিষয়টি এতটাও সহজ নয়। আপনি চ্যানেল তৈরি করে ভিডিও আপলোড করার সাথে সাথেই আয় করতে পারছেন না।
কেননা এই আয়ের জন্য আপনার চ্যানেলটিকে একটি যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। আর সেটি হলো বিগত এক বছরের মধ্যে আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলো অবশ্যই চার হাজার ঘণ্টা ভিউ থাকতে হবে এবং আপনার চ্যানেলে এক হাজার সাবস্ক্রাইব থাকতে হবে। এছাড়াও ইউটিউবে আপনার আয় যতক্ষণ না পর্যন্ত একশ ডলার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই আয় আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আসবে না।
অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে আয়
যেহেতু বিজ্ঞাপন থেকে আয় সবসময় অনেক আকর্ষণীয় পরিমাণে হয় না তাই ইউটিউবাররা আরো ক্রিয়েটিভ উপায়ে আয় করার উপায় বের করেছেন। কোনো কোম্পানির সাথে আপনার চুক্তিতে যেতে হবে এই জন্য, আর তাদের পণ্যের লিংক আপনার ভিডিও ডিস্ক্রিপশনে দিয়ে রাখতে হবে এবং ভিডিওর মধ্যে তাদের এই পণ্যটির কথা আপনাকে বলে দিতে হবে। যখনই কেউ সেই লিংকে ক্লিক করে পণ্যটি ক্রয় করেন সেখান থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আপনি কমিশন হিসেবে পেয়ে যাবেন। এতে আপনার লাভের সাথে সাথে কোম্পানিটিরও লাভ হচ্ছে, কেননা তাদের পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি তাদের কোম্পানির মার্কেটিংও এর সাথে হয়ে যাচ্ছে।
ডোনেশন
চ্যানেলের ফ্যানরা আপনার ভিডিও দেখে আপনাকে কিছু অর্থ নিজের পকেট থেকে ডোনেট করার প্রক্রিয়াটিও ইউটিউবে আছে। প্যাট্রেয়ন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিষয়টি হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি তৈরি করা হয়েছে নতুন ইউটিউবাররা যাতে করে ভিউয়ারদের কাছ থেকে তাদের চ্যানেলের জন্য অর্থায়ন পায়।
ধরুন আপনি একটা চ্যানেল খুলেছেন এবং সেখান থেকে আপনার তেমন কোনো আয় হচ্ছে না। কিন্তু এদিকে আপনার চ্যানেলের ফ্যানরা চায় আপনি যাতে ভিডিও তৈরি করা চালিয়ে যান। আর সেক্ষেত্রে তারা আপনাকে একটা ডোনেশন দিয়ে যাবে যাতে করে আপনি ভিডিও তৈরি চালিয়ে যেতে পারেন। তবে সাধারণত এই ডোনেশনের মাধ্যমে অনেক আয় করা সম্ভব হয় না। আর তাই এই ডোনেশন সিস্টেমটি রাতারাতি কাউকে বড়লোকও বানিয়ে দিতে পারে না।
নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে আয় করা
এটা সাধারণত হয়ে থাকে যে সব ইউটিউবারদের অনেক ফ্যান থাকে। তখন সেই চ্যানেলের লোগো দিয়ে টি-শার্ট, চাবির রিং, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করে সেটা চ্যানেলের ফ্যানদের কাছে বিক্রি করা যেতে পারে। এভাবেও বর্তমানে অনেক ইউটিউবাররা প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছেন।
স্পন্সরশিপ এর মাধ্যমে আয় করা
যে সকল ইউটিউবারদের চ্যানেলে ইতোমধ্যেই বেশ ভিউয়ার এবং ফ্যান রয়েছে তাদের জন্য এটা আয় করার অন্যতম একটি উপায়। কোনো কোনো কোম্পানি তখন আপনাকে টাকা দিবে যাতে করে আপনার ভিডিওতে আপনি সেই কোম্পানির কথা উল্লেখ করেন। আবার কখনো কোম্পানি আপনাকে অনেক পরিমাণেই টাকা দিবে যাতে করে আপনি এমনভাবে ভিডিও তৈরি করেন যেখানে সেই কোম্পানির কথা ফলাও ভাবে প্রচার হয়ে থাকে। এটা কিছুটা এমন যে আপনার একটি টিভি চ্যানেল আছে এবং সেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেউ আপনাকে অর্থায়ন করছে।
তবে এভাবে আয় করার জন্য আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিউ থাকতে হবে, কেননা কেবলমাত্র তাতে করেই কোনো কোম্পানি নিজেদের প্রচার প্রচারণার জন্য আপনাকে অর্থায়ন করার জন্য ইচ্ছুক হবে।