বর্তমান জগতে ইন্টারনেট কি জিনিস তা জানে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। আর ইন্টারনেট কি তা সবাই জানলেও ব্যবহারের সুযোগ সবার হয়ে উঠে না। তবে যারাই ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে অনেকেই সঠিক তথ্য বা উপায় সম্পর্কে কমই ধারনা রাখেন।
যেমন ওয়েব ব্রাউজার ছাড়া আপনি ইন্টারনেট দিয়ে কাজের কাজ কিছুই করতে পারবেন না। অনেকে ব্রাউজার হিসেবে কোন যাচাই ছাড়াই ক্রোম বা ফায়ারফক্স ব্যবহার করে থাকেন। কেননা কারন এগুলো আমাদের রক্তে মিশে আছে আর আমরা আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই এমন কারো সম্পর্কে জানতে চাই না। তবে এই লেখাটি পড়ে নিলে আমরা ক্রোম আর ফায়ারফক্স সহ প্রায় সবার কাছেই নতুন ব্রাউজার হিসেবে মাইক্রোসফট এজ এর সর্বশেষ ভার্সনের ব্রাউজারের ভেতরের আর বাইরের সব বিষয় সম্পর্কে বেশ ভাল একটি ধারণা পাব আর বেশ ভাল করেই বুঝব যে আমরা কোন অন্ধকারে ছিলাম।
তবে চলুন শুরু করি আমাদের জনপ্রিয় ৩টি ব্রাউজারের রিভিউ। আর এখানে আমরা যে ৩টি ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে কথা বলব সেগুলো প্রত্যেককেই বিনামূল্যে আর যেকোন অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়।
শুরু করি ক্রোম ব্রাউজার দিয়ে। ক্রোম যা কিনা গুগল ক্রোম নামে পরিচিত গুগলের একটা ওয়েব ব্রাউজার। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোডকৃত ওয়েব ব্রাউজার। শুধু মোবাইল ফোন থেকেই ৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী এই ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকেন যা পৃথিবীর সর্বমোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ।
আর পুরো বিশ্বের ইন্টারনেট মার্কেটে ক্রোমের মোবাইল ব্যবহার কারীরা প্রায় ৫৪ শতাংশ(২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত) ও ডেস্কটপ ব্যবহারকারীরা প্রায় ৬৫ শতাংশ(২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত) জায়গা দখল করে রেখেছে। এইগুলো সব উপরের বিষয়। তাহলে ভেতরের বিষয়গুলো একবার গিয়ে দেখি কি আছে। ক্রোমে তৈরি করা হয়েছে ওপেন সোর্স ক্রোমিয়াম প্রোজেক্টের উপর ভিত্তি করে। ক্রোম খুললেই যা সয়াব্র আগে নজরে পরবে তা হলো ক্রোমের থিম। ক্রোম ব্রাউজার থিমের সুবিধা দিয়ে থাকে যার পরিসর নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি চাইলে ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন ছবি রাখতে পারেন আবার নাও পারেন। আর বিভিন্ন রঙের ব্যবহার একে দেখতে আরও সুন্দর করে তুলে।
কিন্তু এই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার হলেও এর বেশ কিছু ভোগান্তি বা অসুবিধা আছে। যেমন প্রথমেই ব্যাকগ্রাউন্ড ছবির কথায় আসি। আপনাকে তাদের দেওয়া ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে আর এর আরও বড় সমস্যা হলো যে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে আপনি এই ছবি দেখতে পারবেন না আর গতি কম থাকলে প্রচুর সময় নিতে পারে। আর আরেকটি বড় সমস্যা হলো এর গতি। হ্যাঁ, ক্রোম ব্যবহার করতে হলে প্রচুর পরিমাণ র্যামের দরকার পরে যা সবার কাছে থাকে না। তাই সবার কাছে যে বেশ মাখনের মত চলবে তা কিন্তু নয়। তাই পুরাতন বা কম র্যামের ডিভাইসে ক্রোম বেশ বিরক্তিকর হয়ে দেখা দিতে পারে।
এইবার জানা যাক ফায়ারফক্স সম্পর্কে। ফায়ারফক্স বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ওয়েব ব্রাউজারদের মধ্যে ৩য় অবস্থানে আছে।এটি একটি ইউনিক ব্রাউজার এবং এর সাথে অন্যকোন ব্রাউজারের তেমন কোন মিল নাই।তাই যদি আপনি অন্য কোন ব্রাউজার থেকে এখানে সুইচ করতে চান তাহলে আপনাকে বেশ ভোগান্তিতে পরতে হতে পারে।
ফায়ারফক্স ইন্টারনেট মার্কেটের প্রায় ৩ শতাংশ(২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত) জায়গা দখল করে আছে।তাই ক্রোমের সামনে এটাকে কিছুই না ভাবলেও ভুল হবে না। তবে অন্যান্য ব্রাউজারদের তুলনায় একটা ভালই অবস্থানে আছে আমাদের আপন ফায়ারফক্স।তবে ভেতরে গেলে যেটি দেখা যায় তা আপনাকে চমকে দিতে পারে। ফায়ারফক্সের জন্য খুবই কম পরিমাণে র্যামের দরকার হয়। ক্রোমের চাইতে এর গতি অনেকটাই বেশি। তাই পুরাতন বা কম র্যামের ডিভাইসে ফায়ারফক্সকে বলা যায় এক নতুন আলো।
তবে ফায়ারফক্সের থিম মাত্র তিনটা। একটা সম্পূর্ণ ডার্ক বা কালো, আরেকটা আপনার সিস্টেম থিম অর্থাৎ আপনার সিস্টেমের যে থিম হবে সেটা আর সর্বশেষ লাইট বা সম্পূর্ণ উজ্জ্বল। তাই আপনি চাইলেও ফায়ারফক্সে যেকোন থিম ব্যবহার করতে পারবেন না। আর আগেই বলেছি এর ধরণটাও বেশ ভিন্ন তাই কেউ এই ব্রাউজারে আসলে বেশ ভোগান্তিতে পরতে পারেন।
এইবার আসা যাক আমাদের এই আলোচনার সর্বশেষ ব্রাউজার হলো হলো মাইক্রোসফট এজ।মাইক্রোসফট এজের নাম শুনলেই অনেকের মাথায় ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের মত একটা দাদা আমলের ব্রাউজারের কথা মনে পরে। তবে যদি এইরকম ধারণা থেকে থাকে যে এজ একেবারেই পুরাতন ব্রাউজার তাহলে ভুল কিছু হবে না। তবে যদি মনে করেন যুগের সাথে এজ নিজেকে উন্নত করেনি তাহলে অবশ্যই ভুল হবে। কারণ বর্তমানে নতুন যে এজ মাইক্রোসফট প্রকাশ করেছে সেটা আগের ভার্সন থেকে প্রায় সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ক্রোমিয়াম প্রজেক্ট।
আগেই বলেছি ক্রোমিয়াম একটি ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট আর তাই এটি আমি আপনি যে কেউ ব্যবহার করতে পারি। এবং যেহেতু ক্রোম ব্রাউজারও ক্রোমিয়াম প্রোজেক্টের উপর ভিত্তি করে বানানো তাই এদের কাজের ধরণ আর ডিজাইনে বেশ কিছু মিল আছে। তাই যদি কেউ ক্রোম থেকে এজে সুইচ করে তাহলে তার ব্রাউজিং করতে তেমন কোন সমস্যা হবে না। ক্রোম ব্রাউজার থেকে এজ যেসকল দিক দিয়ে ভিন্ন সেগুলো হলো, থিম, নিউজ আর র্যাম। আপনি এজে যখন কোন থিম সিলেক্ট করবেন তখন সেটা আপনার ডিভাইসে ডাউনলোড হয়ে যায় আর যখন আপনি সেই থিম পালটে দেন তখন আগের ডাউনলোড করা থিম ডিলিট হয়ে নতুন থিম ডাউনলোড ক্রা হয়ে যায়। তাই এর জন্য ইন্টারনেটের কোন দরকারই নেই শুধু থিম সিলেক্টের সময় ইন্টারনেট থাকলেই হলো। এজের এর থিম ছবির সংগ্রহ বেশ বড়।
আর ক্রোম থেকে ভিন্ন যে সুবিধা এতে আছে সেটি হলো নিউজ। আপনি যখন এজে প্রবেশ করবেন তখন নিচে বেশ কিচু নিউজ দেখতে পারবেন। আর আপনি নিজেই নিজের হোমপেজকে সাজিয়ে রাখতে পারেন যে কোন নিউজ থাকবে কি না আবার কি ধরনের নিউজ থাকবে। আর যে সুবিধাটি সবার কাছেই ভাল লাগবে তা হলো এটিও ক্রোমের চাইতে বেশ কম পরিমাণে র্যাম ব্যবহার করে। তাই ক্রোমের মতো দেখতে, থিম ভালো আর গতিও ভাল এমন ব্রাউজার কেই সবার ব্যবহার করার কথা। কিন্তু এখানে দেখতে হবে, বেশিরভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা অ্যান্ড্রোইড ফোন ব্যবহার করে থাকেন এবং অ্যান্ড্রোইড মানেই গুগল আর গুগল মানেই ক্রোম।
আর এইসব ফোনে ক্রোম আগে থেকেই দেওয়া থাকে। পাশাপাশি জনপ্রিয়তার জন্য যারা ম্যাক ব্যবহার করে তারাও ক্রোম ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। ওজ সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা তো সবার মনে লেগেই আছে। কিন্তু নতুন আপডেট সম্পর্কে অনেকেই জানে না যে এতে কি কি যুক্ত করা হয়েছে।
আর আমি এইবার একজন ব্যবহারকারী হিসেবে বলি, ক্রোম এবং এজ এই দুইটাতেই বিভিন্ন সুবিধা আছে। এর জন্য আমি একইসাথে ক্রোম আর এজ দুইটাই ব্যবহার করি।কারণ গুগল সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে বিং এর তুলনায় বেশ ভাল। তবে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এজই এগিয়ে থাকছে। এবার সিদ্ধান্ত আপনার যে আপনি ঠিক কোনতা ব্যবহার করবেন।