গাজীপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে ম্যাজিক বক্স কেনার জন্য অর্ডার করে। সে অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির ডেলিভারিম্যান মিজানুর রহমান ওই কিশোরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। পরে লোকেশন অনুযায়ী ম্যাজিক বক্স পৌঁছে দেন তিনি।
ডেলিভারির সময় ক্রেতাকে মিজানুর বলেন, সে যদি গুগলে লোকেশন অ্যাড করে দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো ডেলিভারিম্যানকে অবস্থান জানানোর জন্য বারবার ফোন করতে হবে না।
কিশোরী মিজানুরের কথা বিশ্বাস করে নিজের মোবাইল তার হাতে তুলে দেয়। মিজান ওই মোবাইলের গুগল ফটো অ্যাপে ঢুকে ‘শেয়ার উইথ পার্টনার’ হিসেবে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট অ্যাড করে দেয়। আর এতেই ওই কিশোরীর ব্যক্তিগত ছবিসহ অনেক তথ্য চলে যায় মিজানের হাতে।
কয়েকদিন পর ডেলিভারিম্যান মিজানুর তাকে ফোন করে টাকা দাবি করেন। তার কথামতো টাকা না দিলে হুমকি দেয়া হয় কিশোরীর ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার।
এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোরী। পুরো পরিবারই পড়ে যায় দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে। এক পর্যায়ে তারা আইনের আশ্রয় নেয়।
জিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আসাদুজ্জামান জানান, গতকাল শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কিশোরীর বাবা। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় পুলিশ। পরে প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধীর অবস্থানও শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
জিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজওয়ান আহমেদের নেতৃত্বে অভিযানে নামে সদর থানা পুলিশ। গতকাল রাতে জয়দেবপুরের রথখোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডেলিভারিম্যান মিজানুরকে গ্রেফতার করে তারা।
গ্রেফতার মিজানুর রহমান ওরফে আল-আমিনের (২২) বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার চরগাঁওকোড়া গ্রামে। তিনি রথখোলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ জানান, গ্রেফতারের পর আসামির ব্যবহৃত মোবাইলে অনেক নারীর ব্যক্তিগত ছবি এবং বিভিন্ন জনের ১১টি ইমেইল আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া গেছে। আইডিগুলোর মালিকদের পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিজানুর স্বীকার করেন, অনলাইন শপে নারী ও উঠতি বয়সী মেয়েদের টার্গেট করে কৌশলে ক্রেতার মোবাইল হাতে নিতেন। পরে লোকেশনে অ্যাড করে দেয়ার কথা বলে গুগলের মাধ্যমে ছবি শেয়ারের অ্যাকসেস নিয়ে নিতেন। পুরো কাজটি করতে সময় লাগে ১-২ মিনিট। কাজ শেষে ভুক্তভোগীকে মোবাইলটি ফেরত দিয়ে দিতেন। পরে সংবেদনশীল ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীকে জিম্মি করতেন তিনি।
জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম জানান, মিজানের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ওই স্কুলশিক্ষার্থীর বাবা ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছেন। আজ শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া আগে থেকেই মিজানুরের নামে জামালপুরে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।