টেস্ট ল্যাবে ২ ন্যানোমিটারের চিপ তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটারের প্রসেসর জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন (আইবিএম)। খবর বিবিসি।
কম্পিউটার চিপ নির্মাণের ক্ষেত্রে ন্যানোমিটার সূচক ব্যবহার করা হয়। এ সূচক যত কম হয় চিপের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন তত বেশি হয়। আইবিএমের দাবি, তাদের নতুন পরীক্ষামূলক এ চিপ বর্তমানে বাজারে থাকা ৭ ন্যানোমিটার চিপের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি কার্যকর। সেই সঙ্গে এটি শক্তিসাশ্রয়ী। এ চিপ ৭৫ শতাংশ কম শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বেশি কাজ করতে সক্ষম।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এ প্রযুক্তির ব্যবহারে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার গুণ বেশি সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহূত হবে। ফলে চারদিন পর পর মোবাইল চার্জ দেয়ার প্রয়োজন হবে।
কম্পিউটারের চিপ উৎপাদন খাতে উৎপাদনকারীরা ট্রানজিস্টরের বাহ্যিক আকৃতি নির্ধারণের জন্য ন্যানোমিটার সূচক ব্যবহার করতেন। বর্তমানে ন্যানোমিটারের সংখ্যা যত কম হচ্ছে, সেসব চিপের কার্যক্ষমতা বাড়ছে এবং বিদ্যুতের ব্যবহার সাশ্রয়ী হচ্ছে।
আইবিএমের দাবি, তাদের দুই ন্যানোমিটারের প্রসেসর হাতের নখের আকৃতির চিপের মধ্যে ৫ হাজার কোটি ট্রানজিস্টর একত্রিত করতে পারে। তবে এখনো এ চিপের পরীক্ষামূলক ব্যবহার চলছে। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছাড়া হলে সামনের বছরগুলোয় এ চিপ কম্পিউটার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
বর্তমানে বাজারে উচ্চক্ষমতার যেসব ডেস্কটপ কম্পিউটার রয়েছে, সেগুলোর চিপ সেভেন ন্যানোমিটার প্রযুক্তি সম্পন্ন। এর মধ্যে রয়েছে এএমডির রাইজেন প্রসেসর। তবে ২০১৯ সালের আগে বাজারে এসব প্রসেসরের সে রকম প্রচলন শুরু হয়নি। এর ঠিক চার বছর আগেই আইবিএম সেভেন ন্যানোমিটার প্রসেসর নিয়ে কাজ করেছিল।
তবে বাণিজ্যিকভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান চিপ উৎপাদন করে, বিশেষ করে ইন্টেল এবং টিএসএমসি ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা লো ন্যানোমিটারের চিপ উৎপাদন করবে।
মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ফার্ম আইডিসির রিসার্চ ডিরেক্টর পিটা রুডেন বলেন, নতুন এ প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ১৪ ন্যানোমিটার থেকে ১০ ন্যানোমিটার এবং ১০ ন্যানোমিটার থেকে ৭ ন্যানোমিটার চিপ উৎপাদনে স্থানান্তরিত হতে দেখেছি। কারো কারো কাছে ৭ ন্যানোমিটার অনেক কঠিন বিষয় ছিল।
রুডেন বলেন, আইবিএমের নতুন এ পদ্ধতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেখানে কিছু কাজ সমাধানের জন্য উচ্চক্ষমতার গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত ডিভাইসে শক্তি সাশ্রয়ী এ সুবিধার ব্যবহার ইতিবাচক হবে। আর এর অধিক কার্যক্ষমতা ডাটা সেন্টারগুলোকে আরো সুবিধা এনে দেবে।
হার্ডওয়্যার রিসার্চের ক্ষেত্রে আইবিএম যে অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে এ উদ্ভাবন তারই একটি বার্তা।
আইবিএম জানায়, ২ ন্যানোমিটার প্রসেসরের জন্য তাদের এ পরীক্ষামূলক চিপ যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি রিসার্চ ল্যাবে উৎপাদন করা হয়েছে। যখন বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর তথা চিপ উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট চলছে সে সময় এমন আবিষ্কারের সংবাদ প্রযুক্তি বাজারে আশার আলো দেখাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এতে চিপের জন্য চীন ও তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীলতা অচিরেই কমে যাবে।