সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্বেগের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের বাজার এতে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়ও নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ দুটি অঞ্চলে স্মার্টফোন বাজারজাত বা বিক্রি সাত বছরের সর্বনিম্নে চলে এসেছে। সম্প্রতি নতুন একটি জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।
ইন্ডাস্ট্রি আপডেটের প্রান্তিক প্রতিবেদনে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ জানায়, মার্চে শেষ হওয়া প্রান্তিকে অঞ্চলগুলোয় বার্ষিক স্মার্টফোন বাজারজাত ১১ শতাংশ কমেছে। ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর যা সব থেকে কম। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজারে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রভাব বিস্তার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমূল্যস্ফীতির হার, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও গ্রাহক পর্যায়ে কম চাহিদা।এর ফলে অরিজিনাল ইকুইফমেন্ট উৎপাদনকারীরা (ওইএম) ইনভেন্টরি সংশোধন, চ্যানেলের দক্ষতা বৃদ্ধি ও খরচ কমানোর মাধ্যমে নিম্নমুখী অবস্থানে ছিল।
প্রথম প্রান্তিকে অ্যাপল এ পরিস্থিতিতে সুফলই পেয়েছিল। কেননা এ সময় অঞ্চলগুলোয় আইফোন ১৪ সিরিজ বাজারজাত ৩৫ শতাংশ বেড়েছিল। মূলত ফ্ল্যাগশিপ মডেলগুলোর চাহিদা প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেছে। গত সপ্তাহে কুপারটিনোর প্রযুক্তি জায়ান্টটি বাজার পূর্বাভাস অতিক্রম করার কথা জানিয়েছে। ফ্ল্যাগশিপ পণ্যের বিক্রি বাড়ায় এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় অ্যাপলই একমাত্র ওইএম যারা প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে পেরেছে। তবে অঞ্চল দুটিতে অ্যাপলের বাজার হিস্যা আগের বছরের ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং পঞ্চম স্থান দখল করতে পেরেছে।
অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম সেলফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ২৭ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে বাজারের শীর্ষে ছিল। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ২৪ শতাংশ। কাউন্টার পয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে বাজারজাতে ২ শতাংশ লোকসানে পড়েছে।
জরিপে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিটি এ সিরিজের ফাইভজি মডেল বাজারজাতের মাধ্যমে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটি কোম্পানিটির মিড রেঞ্জ সেগমেন্ট। হংকংভিত্তিক কাউন্টারপয়েন্টের একজন সিনিয়র অ্যানালিস্ট ইয়াং ওয়াং এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ আরো চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার স্মার্টফোন বাজার আরো একটি কঠিন প্রান্তিক দেখেছে।’
গ্রাহকের মধ্যে মোবাইল ডিভাইস কেনার হার কমেছে। মূলত মূল্যস্ফীতির কারণে কেনার চাহিদা কমেছে। এছাড়া এখন খুব প্রয়োজন ছাড়া সহসাই কেউ সেলফোন আপডেট করছে না। অন্যদিকে ওইএমগুলোও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। উচ্চ করহার ও সরবরাহ সংকটের কারণে উৎপাদন এবং প্রচারণা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ওয়াং বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদা কমার যে হার তা পুরো বছরজুড়ে থাকবে। কেননা গ্রাহক বর্তমানে নতুন ডিভাইস কেনার পরিবর্তে পুরনো ডিভাইস আরো লম্বা সময় ব্যবহার করতেই আগ্রহী।’
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিবিদদের আশা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মজুদ সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি ওইএম ও বিতরণকারীরা তাদের পণ্যের পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনবে ও নতুন পণ্য উন্মোচন করবে।’
প্রযুক্তি জায়ান্টরা সেভাবে বাজার ধরতে না পারলেও চীনভিত্তিক ট্রানশন হোল্ডিংসের মালিকানাধীন টেকনো আফ্রিকায় শীর্ষ বিক্রেতার খেতাব অর্জন করেছে। ১৪ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। ৯ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে ইনফিনিক্স। তবে বছরের প্রথম প্রান্তিকে দুটি কোম্পানির স্মার্টফোন বাজারজাত যথাক্রমে ১০ ও ৬ শতাংশ কমেছে।