প্রতিযোগিতার বাজারে স্মার্টফোন নির্বাচন করা আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মডেল আর আলাদা ফিচার নিয়ে তৈরি হচ্ছে দ্বিধা। তাই সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে সঠিক ফোন বেছে নিতে হলে নিজের প্রয়োজন এবং ফোনের ফিচারের মধ্যে মিল খুঁজে বের করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়। কারও দরকার দারুণ ক্যামেরা, আবার কেউ খুঁজছেন স্টাইলিশ ডিজাইন বা শক্তিশালী পারফরম্যান্স। সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে নিজের জন্য সেরা ফোনটি খুঁজে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাজেট এবং কী ধরনের ব্যবহার আশা করছেন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গুগল পিক্সেল ৯
গুগল পিক্সেল ৯ ফোনটি অ্যান্ড্রয়েডের ফ্ল্যাগশিপ মডেলগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। পিক্সেল সিরিজ বরাবরই তাদের সফটওয়্যার আপডেটের কারণে জনপ্রিয়, আর পিক্সেল ৯ ফোনটি সেই ধারাবাহিকতায় আরও উন্নতমানের অভিজ্ঞতা প্রদান করে। গুগলের নিজস্ব প্রসেসর টেনসর জি৪ ফোনটির শক্তি বৃদ্ধির মূল কারণ। এর ৬.৩ ইঞ্চির ওএলইডি ডিসপ্লে অসাধারণ ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা দেয়, যা গেমিং থেকে শুরু করে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট উপভোগ করার জন্য খুবই উপযুক্ত।
ফোনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর ক্যামেরা। এতে রয়েছে ৪৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা, যা আপনাকে সূক্ষ্ম বিবরণসহ অসাধারণ ছবি তুলতে সাহায্য করবে। ক্যামেরার পাশাপাশি গুগলের সফটওয়্যারও ফটোগ্রাফির মান উন্নত করে, যেমন নাইট সাইট এবং অ্যাস্ট্রো ফটোগ্রাফি মোড। যারা ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন এবং যারা প্রতিদিনের জন্য এক শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য ফোন খুঁজছেন, তাদের জন্য পিক্সেল ৯ একটি আদর্শ ফোন। ফোনটির ব্যাটারি লাইফও প্রশংসনীয়। ৪,৭০০ মিলি-অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ধরে ফোন ব্যবহার করার সুবিধা দে এবং চার্জিংও বেশ দ্রুত হয়। যারা অ্যান্ড্রয়েডের সেরা অভিজ্ঞতা চান এবং দীর্ঘমেয়াদি আপডেটের সুবিধা পেতে আগ্রহী, ফোনটি তাদের জন্যই উপযুক্ত।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা এমন একটি ফোন, যা স্যামসাং ভক্তদের প্রত্যাশার সবকিছুই পূরণ করে। বড় স্ক্রিন, উন্নত ক্যামেরা এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্সের কারণে এটি অনেক ব্যবহারকারীর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। ৬.৮ ইঞ্চির ১৪৪০পি ওএলইডি ডিসপ্লে আপনাকে চমৎকার ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা দেবে, বিশেষত যারা ভিডিও দেখেন বা গেম খেলেন তাদের জন্য এটি বেশ উপযুক্ত। এর ক্যামেরা সেটআপও অসাধারণ। ফোনটিতে রয়েছে দুটি টেলিফটো ক্যামেরা, যা ফটোগ্রাফিতে জুম করার সময় নিখুঁত ছবি তোলার সুবিধা দেয়। ১০০এক্স ডিজিটাল জুমের সাহায্যে আপনি দূরের বস্তুকে খুব স্পষ্টভাবে ফ্রেমবন্দি করতে পারবেন। ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফির জন্য, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার ফোন।
গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রার আরেকটি আকর্ষণীয় ফিচার হলো এর স্টাইলাস (এস পেন)। যাদের ফোনে নোট নেওয়া, আঁকাআঁকি করা বা আরও নির্ভুলভাবে স্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়, তাদের জন্য এই ফোনটি অসাধারণ। যারা ক্রিয়েটিভ ও ডিজাইনার, তাদের জন্য স্টাইলাস এই ফোনটিকে অনন্য করে তুলেছে। ব্যাটারি পারফরম্যান্সও এখানে খুবই উল্লেখযোগ্য। ৫,০০০ মিলি-অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি অনেকক্ষণ ধরে ফোনটি চালু রাখার জন্য যথেষ্ট এবং এর ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম আপনার সময় বাঁচাবে।
ওয়ানপ্লাস ১২
ওয়ানপ্লাস তার ‘ফ্ল্যাগশিপ কিলার’ ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত এবং ওয়ানপ্লাস ১২ তার ব্যতিক্রম নয়। এই ফোনটি দ্রুতগতির পারফরম্যান্স এবং আধুনিক ডিজাইনের মিশেলে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ফোনটিতে রয়েছে ৬.৮ ইঞ্চি ১৪৪০পি ডিসপ্লে, যা ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা উন্নত করে এবং বিশেষ করে যারা উচ্চ রেজল্যুশনের স্ক্রিন পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি বেশ উপযোগী। স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স মূলত নির্ভর করে প্রসেসরের ওপর, আর এখানে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ প্রসেসর ফোনটিকে দ্রুতগতিতে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে গেমিংয়ের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত ফোন। যেকোনো হাই-এন্ড গেম চলবে সহজেই এবং ফোনটি তাপ উৎপন্নও খুব কম করবে। এ ছাড়া ১২ জিবি র্যাম এবং ২৫৬ জিবি স্টোরেজ ফোনটিকে আরও দ্রুত এবং স্মার্ট করে তোলে।
ফোনটির ক্যামেরায় ৫০ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি সেন্সর এবং ১৬ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড লেন্সের সংমিশ্রণে দুর্দান্ত ছবি তোলা যায়। বিশেষ করে রাতে তোলা ছবির মান অনেক উন্নত। ওয়ানপ্লাস ১২-এর ব্যাটারি লাইফও বেশ প্রশংসনীয়। ৫,০০০ মিলি-অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি প্রায় পুরো একদিনের ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং এতে রয়েছে ১০০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং, যা মাত্র ২৫ মিনিটেই আপনার ফোনটিকে পূর্ণ চার্জ করবে।
গুগল পিক্সেল ৯ প্রো ফোল্ড
ফোল্ডেবল ফোনের বাজারে গুগল পিক্সেল ৯ প্রো ফোল্ড অন্যতম উদ্ভাবনী মডেল হিসেবে ধরা হয়। এর ভাঁজযোগ্য ডিজাইন ফোনের ব্যবহারকে একদম নতুন মাত্রা দিয়েছে। ফোনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ৮ ইঞ্চির প্রসারিত ওএলইডি ডিসপ্লে, যা খুললে একটি ছোট ট্যাবলেটের মতো কাজ করে। এ ধরনের ডিসপ্লে কন্টেন্ট উপভোগ করা, মাল্টিটাস্কিং, এমনকি নোট নেওয়ার জন্যও অসাধারণ সুবিধা প্রদান করে।
গুগল পিক্সেল ৯ প্রো ফোল্ডের ক্যামেরা গুগলের নিজস্ব সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত, যা ছবির মান উন্নত করে। ৫০ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি ক্যামেরা এবং ৪৮ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো লেন্স আপনার ছবি তোলার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে। বিশেষ করে যারা ফোল্ডেবল ডিজাইনের ফোন পছন্দ করেন এবং ক্যামেরার গুণগত মানের ব্যাপারে সচেতন, তাদের জন্য এই ফোনটি হতে পারে উপযুক্ত। ফোনটির ৫,০০০ মিলি-অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ধরে চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম।
শাওমি ১৪ প্রো
বাজেটের মধ্যে প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা চাইলে শাওমি ১৪ প্রো হতে পারে আদর্শ ফোন। শাওমি সবসময়ই কম দামে বেশি ফিচারের জন্য জনপ্রিয় এবং এই মডেলটি তার একটি চমৎকার উদাহরণ। এতে রয়েছে ৬.৭৩ ইঞ্চির কিউএইচডি+ ওএলইডি ডিসপ্লে, যা খুবই উচ্চমানের ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা প্রদান করে। ফোনটির ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্টজ হওয়ায় গেমিং এবং মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার হবে আরো মসৃণ ও দ্রুত। পারফরম্যান্সের দিক থেকে, শাওমি ১৪ প্রো ব্যবহার করে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ প্রসেসর, ফোনটিকে দ্রুতগতিতে কাজ করতে সহায়তা করে। বিশেষত গেমারদের জন্য খুব উপযোগী, কারণ এতে হাই-এন্ড গেমগুলো সহজেই চলে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়াও ফোনটিতে ১২ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজ রয়েছে, যা বড় বড় অ্যাপস এবং ফাইল সংরক্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা এবং ৪৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড লেন্সের মাধ্যমে সুন্দর এবং বড় পরিসরে ছবি তোলা সম্ভব। ৪,৮৬০ মিলি-অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ফোনটিকে দীর্ঘক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম এবং ৯০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সুবিধা ফোনটি দ্রুত চার্জ করতে সহায়তা করে। তবে দিন শেষে প্রয়োজন এবং বাজেটের সঙ্গে সংগতি রেখেই বেছে নিতে হয় যেকোনো একটি।