১৫শ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমের পরিবর্তন ঘটেছে বহুবার। ১৮ শতকেও চিঠি ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। সেই সময়ে যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮০৬-এ আবিস্কৃত কার্বন পেপার, ১৮৩৭-এ আবিস্কৃত টেলিগ্রাফ, ১৮৪৩-এ আবিস্কৃত ফ্যাক্স। এরপর এলো মোবাইল, ইন্টারনেট, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো।
টিকে গেল রেডিও প্রযুক্তির মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে চালিত যোগাযযোগের মাধ্যমগুলো। যেমন ইন্টারনেট, মোবাইল। অন্য সময়ের মতো বর্তমান যুগের মানুষেরাও এসব প্রযুক্তিকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করে চলছে। স্বাচ্ছন্দে, নির্দিধায়। যোগাযোগের প্রয়োজনেই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে প্রযুক্তির।
বর্তমান সময়ের বাইরে না বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তারাও নিজেদের যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছে এসব প্রযুক্তি।
গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের করা সমাবেশটি দেশের মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে তারা অল্প সময়ে সমাবেত হতে পারে। গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রায় তিনদিনের ব্যবধানে লাখো রোহিঙ্গা সমবেত হয়েছে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে। অর্থাৎ এখানে মূল ভূমিকা রাখে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট। এখানে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো। প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গারা কিভাবে পেল সিম? কারণ সিম কিনতে প্রয়োজন পরে এনআইডি কার্ড বা ফিঙ্গার প্রিন্ট। যদিও মোবাইল কেনায় প্রয়োজন পরে না এনআইডি কার্ডের।
১ সেপ্টেম্বর টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার নুর আলম। গণমাধ্যমে নুরের ছবি যুক্ত স্মার্ট কার্ডের ছবি প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে যতটা না বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার রেশ পড়েছে, তার চেয়ে বেশি হা-হুতাশা বেড়েছে স্মার্টকার্ডের জন্য। দেশের নাগরিক হয়ে যারা এখনো স্মার্টকার্ড পায়নি, সেখানে একজন রোহিঙ্গা স্মার্টকার্ডধারী। পরবর্তী আরও কিছু ঘটনা থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হয় স্মার্টকার্ড সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ধারণা করা হচ্ছে, স্মার্টকার্ড সার্ভারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যুক্ত থাকতে পারে রোহিঙ্গাদের এই স্মার্টকার্ডের সঙ্গে। অর্থাৎ হতে পারে দুর্নীতির মাধ্যমে স্মার্টকার্ডের ডেটাবেজে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে এসব রোহিঙ্গাদের তথ্য। করে দেওয়া হচ্ছে দেশের নাগরিক। যেহেতু ডেটাবেজ বা সার্ভার প্রসঙ্গ আসছে সেহেতু এখানেও রয়েছে প্রযুক্তি।
আজ এক সংবাদমাধ্যমে পড়লাম, রোহিঙ্গারা ঘরে বসে ইন্টারনেটে অনলাইন টিভি দেখছে। এসব অনলাইন টিভি প্রচারিত হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরে থেকে। রোহিঙ্গারা এসব টিভির উপরই বেশি ভরসা করে থাকে বা তারা অভ্যস্ত। গণমাধ্যম জানিয়েছে, এইসব অনলাইন টিভিতে গুজবও রটানো হচ্ছে। অর্থাৎ গুজব রটানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি।
সবশেষ টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টা দ্রুতগতির ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি)।
রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পর এমন উদ্যোগকে কি প্রশংসিত বলা যায়? অরক্ষিত এনআইডি ডেটাবেজের দায় কার উপর পড়ে? কনটেন্ট ফিল্টারিং বা ওয়েবসাইট মনিটারিং টিমই বা কোথায়?
লেখক: সাংবাদিক, রাকিবুল হাসান সজিব